Kopale jodi thake gali, khondabe take ke?

Kopale jodi thake gali, khondabe take ke?

কপালে যদি থাকে গালি, খন্ডাবে তাকে কে ?

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তাঁকে ছাড়া এই দেশটির জন্মই হতো না । এই মহান মানুষটির এবং তার স্ত্রী-পুত্র ও কিছু আত্মীয়ের মৃত্যু যে করুণ ভাবে হয়েছে, তা সাধারণ বাঙ্গালীর কল্পনারও অতীত । আমরা ‘সব কিছুই মানুষের কপাল’ বলে থাকি । তবে, যা ঘটে তার অনেক কিছুই কিন্তু মানুষ নিজের ইচ্ছায় বা নিজের ভূলে তৈরী করে থাকে । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পেছনে যে বিরাট যড়যন্ত্র তা সাধারণ মানুষের জানা ছিল না । তার মৃত্যুর অনেক কারনের মধ্যে একটি প্রধান কারন, সুরক্ষিত সরকারী ভবনে না থেকে সাধারন ভবনে থাকা । সরকারের চিরাচরিত নিয়ম না মেনে এই সাধারন ভবনে থাকার সিদ্ধান্ত কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিজের । এমন ঘটনা ঘটে বলেই আমরা বলি, “কপালে থাকলে তা ঘটবেই” ।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার বড়জন, অর্থাৎ শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং এটি তার দ্বিতীয়বার প্রধান মন্ত্রী হওয়া । প্রথম বারের ভূল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়, তাই দ্বিতীয়বারে তার সাফল্য থাকে তূলনামূলক ভাবে বেশী । বলাবাহুল্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে নি । এর আগের নির্বাচনে তার পরাজিত হবার কারন সম্বন্ধে তিনি নিজেই আমেরিকার একটি প্রস্তাব মেনে না নেবার কথা বলেছেন । তা সত্যি হলে এবার তিনি আমেরিকার সহায়তা চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক । তবে আমরা জানি, তার দলীয় কর্মীরা তাঁকে বুঝিয়েছিল, আগের মেয়াদে দলীয় কর্মীদের সুযোগ সুবিধা না দেয়াতেই নির্বাচনে তাদের পরাজয় হয়েছিল, তাই নির্বাচনে জেতার জন্য এবার দলীয় কর্মীদের সুযোগ দেয়া হোক । বলা বাহুল্য, তা দেয়া হয়েছে । এবং প্রধানতঃ সেই কারনেই এবার সরকারের সাফল্য এত কম । এটা সরকারের নিজেরও বোধহয় ইতিমধ্যে তা জানা হয়ে গেছে । সেই কারনেই হয়তো নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং সনাতন পদ্ধতিতে (ই ভি এম বাদে) নির্বাচনে সরকারের কোন আগ্রহ নেই ।

সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদের তিন বছর যেতেই দেশের মানুষ এই সরকারের নানা ব্যর্থতা, বিশেষতঃ সেই সব সমস্যা যেগুলির কারনে তারা নিত্য দিন অবর্ননীয় কষ্ট পাচ্ছে তার জন্য অত্যন্ত বিরক্ত । নিরপেক্ষ নির্বাচনে এই মনোভাবের ফলই প্রতিফলিত হবার কথা । আমরা সরকারের নানা ব্যর্থতার কারনে সাধারন মানুষের যে অবর্ননীয় কষ্ট হচ্ছে তার কয়েকটির কথা এখানে আলোচনা করবো ।

লোড শেডিং ও নতুন সংযোগ না পেয়ে বিধ্বস্ত মানুষ ঃ
লোড শেডিং, নতুন সংযোগ না পাওয়া এই সব কারনে দেশের মানুষ যে কি কষ্টে আছে তা সবারই জানা । কোন জরুরী কাজ করার সময় হঠাৎ লোড শেডিং হলে, বা গরমের সময় বিদ্যুত না থাকলে দারুন কষ্টে মানুষ যে এই জন্য দায়ী লোক বা লোকদেরকে কি রকম অভিসম্পাত দেয় তাও সবারই জানা । এই সমস্যা সমাধানে সরকারের নেয়া “কুইক রেন্টাল”, নতুন কেন্দ্র স্থাপন এসবের ইতিহাস এবং অর্থনীতি সবার জানা । আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগেই কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে গরীব, কৃষিপ্রধান এবং তৈলসম্পদ বঞ্চিত দেশগুলি কি করতে পারে তা উদ্ভাবিত হয়ে গেছে ।

এর সমাধান হল, বায়োডিজেল উৎপাদন করে ডিজেল চালিত প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা । কোন কোন দেশে গম বা আখ থেকে বায়োডিজেল উৎপাদন করা হয় । প্রতিবেশী দেশ ভারত “জেট্রোপা” গাছ থেকে প্রচুর বায়োডিজেল উৎপাদন করে তা যান বাহন চালানোর কাজে ব্যবহার করছে । আমাদের দেশের ভেরেন্ডার বীচি, তিসি, কচা গাছের বিচি এসব থেকে বায়োডিজেল তৈরী করা যায় । তিসির ফলন এত বেশী যে দাম পড়ে যাবার ভয়ে কৃষকেরা এটির চাষ বাড়ায় না । আর ভেরেন্ডা তো যে কোন জায়গায়ই জন্মে । এ ছাড়া এখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মত “জেট্রোপা” চাষেরও সুযোগ আছে । দেশের অব্যবহৃত জমিতে এগুলির চাষ করে একেবারে কম খরচে প্রচুর বায়োডিজেল পাওয়া সম্ভব । আর তা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করে সরবরাহ বাড়ানো এবং উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব । এমন সোজা পথ থাকতে সরকার কেন যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কুইক রেন্টাল-এর পথ ধরেছে তা আমাদের জানা নেই । তবে সরকার যে সগর্ভে ঘোষনা করে যে তারা ‘ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার” তার সাথে এধরনের পরিকল্পনার সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে ।

যানজটে নাকাল জনগন ঃ
ঢাকা সহ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরে যানজট নিত্য দিনের ঘটনা । গরমের দিনে যানজটে আটকে পড়ে সাধারন মানুষও রোগী হয়ে পড়ে, রোগীদের তো কথাই নেই । যানজটে আটকে পড়া মানুষ যখন রাস্তায় প্রকাশ্যে এজন্য দায়ী লোক বা লোকদের উদ্দেশ্যে অভিসম্পাত দেয় তখন তা খারাপ লাগলেও অন্যায্য মনে হয় না । তাদের কথা, “দেশের সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা না থাকলে নির্বাচনে দাঁড়ানো কেনো ?” যাতায়াত ও যানজট সমস্যার সমাধানে সরকার শত শত কোটি টাকা খরচের প্রকল্প নিলেও সাফল্যের পরিমান শূন্য । কয়েকদিন আগে প্রকাশিত একটি লেখায় আমরা দেখিয়েছি, বিদেশ থেকে বাস আনা, উড়াল পথ তৈরী এসব বাদেই শহরগুলিকে শুধুমাত্র সরকারী নিয়মের মধ্যে এনে এবং বাসরুটগুলি জনগনের চাহিদা মতন পূনর্বিন্যাস করে একেবারে নগন্য খরচে এই সমস্যার সমাধান করা যায় । তবে এই পরিকল্পনার বড় ত্রুটি হতে পারে, এটি ‘ব্যবসায়ী বান্ধব” নয় । এবং সরকার তার ‘ব্যবসায়ী বান্ধব” হবার নীতি থেকে সরে না এলে এটি বাস্তুবায়ন করা সম্ভব নয় ।

পাটুরিয়া দৌলতদিয়ায় বাসে আটকে থাকা মানুষ ঃ
কিছুদিন পর পরই দেখা যায়, পাটুরিয়া দৌলতদিয়ায় দীর্ঘ সময় শত শত বাসে আটকে থাকে হাজের হাজার মানুষ । অবর্ননীয় কষ্টের মাঝে তারা কাকে অভিসম্পাত দেয় তা আর খুলে বলার প্রয়োজন নেই । পদ্মা সেতু নিয়ে আর কথা নাই বা বললাম । ওই সেতুর পরিকল্পনা করার সময়ই মানুষ পাটুরিয়া দৌলতদিয়ায় সেতূর জন্য আন্দোলন করেছিল । এই সরকার মেয়াদের শুরুতে এই প্রকল্প গ্রহন করলে এখন মানুষ স্বচ্ছন্দে এবং কম খরচে এই পথে চলাচল করতে পারতো । আবার দেশকেও ফেরী চালানোর জন্য বিপুল পরিমান তেলও আমদানী করতে হতো না ।

এমনকি এখনও যদি পাটুরিয়া দৌলতদিয়ার মাঝে একটি ভাসমান সেতু নির্মান করা যায়, তাহলে এই সরকারের আমলেই মানুষ এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে । ভাসমান পন্টুন ব্যবহার করে ছয় মাসের মধ্যে এই ভাসমান সেতু নির্মান করা সম্ভব । এই সেতু নির্মান করা হলেও কিছু সমস্যা থাকবে । যেমন, নৌযান পারাপারের জন্য কিছু সময় সেতু বন্ধ রাখতে হবে । কিন্তু জনগনের বিপুল কষ্ট যে লাঘব হবে না নিঃসন্দেহে বলা যায় ।

দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির কারনে নাকাল মানুষ ঃ
ব্যবসায়ীদের অব্যাহতভাবে মূল্য বৃদ্ধির কাছে এই সরকার যে শুধুমাত্র অসহায় তাই নয়, বরং অনেক সময়ই সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । যেমন ধরা যাক, কোন জিনিসের দাম বাড়তে বাড়তে এক কেজির দাম আশি টাকা হলো। এমন অবস্থায় সরকার ব্যবসায়ীদের সাথে বসবে এবং নানান অজুহাতে ব্যবসায়ীদের আবদারে দাম পঁচাশি টাকা নির্ধারন করবে । কিছুদিন এই দাম চলার পর ব্যবসায়ীরা আবার দাম বাড়াবে । সরকার আলোচনায় বসলে এটিকে আবার আর এক ধাপ বাড়িয়ে দেবে । এই খেলা অনেক বার দেখে দেখে এখন জনগন বিশ্বাস করে, তারা আসলেই ‘ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার”, জনবান্ধব সরকার নয় । দরিদ্র মানুষ দ্রব্য মূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধগতির কারনে অসৎ হতে বাধ্য হচ্ছে । কষ্টে থাকা মানুষ কি কি উপায়ে যে মানসিক শান্তনা লাভ করে তা আমরা সবাই জানি ।

দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার ঃ
আমরা আগেই বলেছি, প্রথমবারের ভূল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়, তাই দ্বিতীয়বারে তার সাফল্য থাকে তূলনামূলক ভাবে বেশী । সবাই জানে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে নি । মন্ত্রী বা উপদেষ্টা নির্বাচনে গনতান্ত্রিক সরকার দেশের উপযুক্ত লোকদের নির্বাচন করে থাকে । এটা সবারই জানা যে, সরকার এবার এই কাজে নিজের পরিচিত লোক বা আত্মীয় স্বজনদেরকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে । এর একটা কারণ এটা হতে পারে যে, এই লোকেরা মনে করবে ‘আমরা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছি তার ইচ্ছায়, তাই ক্ষমতায় থাকতে হলে তার ইচ্ছাতেই আমাদের চলতে হবে ।“ মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং দলীয় সাংসদের এমন আচরনে দেশের সাধারণ মানুষের মনে হওয়া স্বাভাবিক যে দেশের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে । এই চিন্তা থেকেই তারা সরকারের কোন কাজে তাদের কষ্ট হলেই সামগ্রিক ভাবে সরকারকে দায়ী না করে একজন লোককে দায়ী করে নিজস্ব ভাষায় তাদের মনোভাব প্রকাশ করে থাকে ।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা ঃ
এই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । তার কন্যা শেখ হাসিনা যদি রাজনীতি না করতেন, তাহলে আজ দেশের যেই এলাকায় তিনি যেতেন সেখানেই মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত শ্রদ্ধা, সন্মান ও ভালোবাসা পেতেন। রাজনীতিতে এলে এই সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হয় । আমাদের দুঃখ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা হয় নি । আর এর কারনও আমরা উপরে বলেছি । আমরা জানি, মানুষের ভাগ্যের সব কিছু তার নিজের হাতে নয় । তার পরেও বুদ্ধি দিয়ে মানুষ অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক । এই ষড়যন্ত্রের অনেক কিছুই এদেশের মানুষের হাতে ছিল না । তবে বঙ্গবন্ধু যদি রাষ্ট্রের সুরক্ষিত ভবনে থাকতেন তাহলে এমন করুণ পরিনতি নাও ঘটতে পারতো ।

আমরা মনে করি, উপরে সাধারন মানুষের যে কষ্টের কথা বলা হয়েছে, এই সরকার একটু চেষ্টা করলে তার অনেকগুলির সমাধান করতে পারতো । আবার এর কোন কোনটি এখনও করা সম্ভব । সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব হলে জনগনের ভাগ্যে কি জোটে তা জনগন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । “ব্যবসায়ী বান্ধব” সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য সরকারকে ব্যবসায়ীদের প্রদেয় ট্যাক্স কমিয়ে দিতে বা মাফ করতে হয়, কালো টাকা সাদা করার সুবিধা করতে দিতে হয়, কেউ অন্যায় ভাবে টাকা মেরে দিলেও সেদিকে না তাকাতে হয়, ইত্যাদি । এর ফলে সরকারের রাজস্ব কমে যায় । খরচ মেটাতে সরকারকে ব্যাঙ্ক থেকে বেশী বেশী ঋণ নিতে হয়, টাকার মান কমাতে হয় । এসবই একেবারে আমাদের চোখের সামনে ঘটছে । ব্যবসায়ীরা বড় অবস্থানে আছেন, তাই তারা মিটিং করে, টেলিভিশনে কথা বলে, রঙ্গীন বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের জন্য তাদের “অবদানের” কথা বলতে পারেন । কিন্তু আমরা জানি, এখনো এদেশের মেরুদন্ড যারা ধরে রেখেছে তারা হলো, আমাদের দেশের কৃষক আর বিদেশে কাজ করে ডলার আয় করা জনগোষ্ঠী । ব্যবসায়ীদের নানা আবদার রক্ষার সময় সরকারকে এদেশের কৃষক আর বিদেশে কাজ করে ডলার আয়করা জনগোষ্ঠীর অবদানের কথা স্মরণ রাখার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করছি ।

একেবারে শেষে বলতে চাই, রাজনীতি না করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের কাছ থেকে যে সন্মান পেতে পারতেন, রাজনীতি করে যদি তার বিপরীতটা পান, তাহলে সেটা কি জাতির পিতার কন্যার জন্য যথার্থ ? কিছু আত্মীয় স্বজন, দলীয় লোক বা ব্যবসায়ীর সম্পদ বৃদ্ধি কি তাঁর সেই বিরাট ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে ?

অধ্যাপক বিজন বিহারী শর্মা, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।

2012/pdf/REBUKE_860824714.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment