Hathazarir Atongko

Hathazarir Atongko

হাটহাজারীর আতঙ্ক
ডঃ অজয় কর

‘৯ই ফেব্রুয়ারীতে মন্দির আর মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনায় বাংলাদেশের হাটহাজারীর হিন্দুরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’ মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাটের খবরে ঐ এলাকার হিন্দুরা যারা দেশের বাইরে রয়েছে তাদের মধ্যেও অজানা এক আতঙ্কের ছোয়া কাজ করছে- তার কারন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির বিশৃঙ্খল কোণো ঘটনা যখন ঘটে, তার শেষ পরিনতি সঙ্খালঘু সাম্প্রদায়ের জান-মালের উপর দিয়েই ঘটে। তার প্রমান, লোকনাথ মন্দির ভাংতে গিয়ে দুস্কৃতিকারীরা আসেপাশের হিন্দু বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছিল (New Age, 11 February 2012)

‘সমকাল’ পত্রিকার (Samakal, 17 February 2012) খবর অনুসারে মাত্র ৫০ টাকায় রাজমিস্ত্রি মোঃ জসিমকে ভাড়া করা হয়েছিল মসজিদের দেওয়াল ভাঙ্গার জন্যে- মসজিদের দেওয়াল ভাঙ্গার পাল্টা জবাবে মন্দির ভাঙ্গার যুক্তি দেখাতে চেয়েছিল দুস্কৃতিকারীরা। তাই, হাটহাজারীর এই ঘটনা আরো বড় ধরনের আতঙ্কের ইঙ্গিত দেয় বলে প্রশাশন মনে করছে।‘হাটহাজারীতে মন্দির আর মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনাটি নিছক একটা ঘটনা ণয়’- এর পিছনে বিশেষ কোণো মতলব আছে কিনা প্রশাশন তা তলিয়ে দেখছে।

গরীব রাজমিস্ত্রি জসিমকে টাকা নিতে বাধ্য করিয়ে আর ভয়ভীতি দেখিয়ে মসজিদের দেওয়াল ভাংগার মাধ্যমে মন্দির ভাংচর আর লুটপাটের ঘটনাকে যুক্তিযুক্ত করার পরিকল্পানা করতে পারে যেসব দুস্কৃতিকারীরা, ওরাই কিংবা ওদের সহোযোগিরা সূযোগ বুঝে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে গরীব মানুষ’কে মারনাস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্টিত হতে যে সচেষ্ট নয়- তারইবা নিশ্চয়তা কি? তাই এসব দুস্কৃতিকারীরাই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের আতঙ্ক।

হাটহাজারীর মন্দির ভাঙ্গার কথা প্রথম জানতে পারি আমার এক বন্ধুর কাছে। এই বন্ধুটি আমাকে মন্দির ভাঙ্গার দৃশ্য ধারন করা YOUTUBE –এর লিঙ্ক সহ বাংলাদেশী কয়েকটি পত্রিকার লিঙ্ক পাঠায়। বন্ধুটি কেনবেরাতে যখন আমাকে ঘটনাটি বলছিল, তার নিকটজনের অনেকেই তখন হাটহাজারীতে- তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বন্ধুটি খুব চিন্তিত ছিল।

বন্ধুটির সঙ্গে কথা শেষে বাড়ী ফেরার পথে আরেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। এই বন্ধুটি জানাল যে, বিভিন্ন প্রচার মাধম্যে হাটহাজারীর ঘটনা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে সেসবের কিছু কিছু তার FACEBOOK– এ রয়েছে। ঘরে ফিরে ওদের দেওয়া নিউজ লিঙ্ক গুলি পড়ার পর YOUTUBE –লিঙ্ক এর ভিডিও দেখছিলাম- লিঙ্কটি এখানে দেওয়া হলঃ(http://www.youtube.com/watch?v=A9tROuWK2BI&feature=youtu.be)

YOUTUBE এর লিঙ্কে ভিডিওটি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম আমার ছোটো বেলার স্কুল বন্ধুদের কথা, ভাবছিলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা। ১৯৭১ সালে যে দেশের মানুষ ধর্ম বিশ্বাসের উর্ধে উঠে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিল, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর সেই দেশের মানুষেরা পাশাপাশি অবস্থানে থেকে বিভিন্ন ধর্মউপাসনালয়গুলিতে নির্ভয়ে কেন যে যে যার ধর্ম চর্চা করতে পারবে না? কেন সঙ্খালঘু সাম্প্রদায়ের জান্-মালের উপর বার বার এভাবে হামলা হবে?- কোন ভাবেই যেন এর উত্তর খুজে পাচ্ছি না।

বিদেশে আমি বাংলাদেশী হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি- কেননা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করার অনেক কিছু আছে- আছে ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনা করায় বাঙালী গৌরব, আছে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয অর্জনের গৌরব, আছে বাংলাদেশের সন্তান ডঃ এউনুছের নোবেল পুরষ্কার লাভের গৌরব। আবার, বিদেশী বন্ধূদের কাছে বাংলাদেশী হিসাবে আমার মাথা নত হয়ার মত ঘটনাও আছে, আছে রাজনৈতিক হত্যা, আছে বি,ডি,আর হত্যা, আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির বিশৃঙ্খলতা- আছে ৯০% ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীর দেশে ১০% অণ্য ধর্ম বিশ্বাসীদের ভয়ভীতিতে ধর্ম চর্চা করার নজির- ৪০ বছর বয়সের বাংলাদেশে নিরাপত্যা বাহিনী মোতায়েন ছাড়া পুজামন্ডপ গুলিতে সার্বজনীন পুজার আযোজন হয় বলে আমার জানা নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশ- ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলের দেশ। এর সন্মানে- আমাদের সন্মান, এর দুর্নামে- আমাদের দুর্নাম।

তাই, বাংলাদেশের শান্তিকামী প্রতিটি নাগরিকের মত আমারও সরকারের কাছে এই প্রত্যাশা যে, হাটহাজারীর ঘটনাটির গুরত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার দুস্কৃতিকারীদের ও তাদের সহোযোগিদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির নিশ্চিয়তা বিধান করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীরা যাতে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে যে যার ধর্মের উপাসনা করতে পারে সে অবস্থার সৃষ্টি করবে।

2012/pdf/128204_hathazarir_atongko_760823274.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment