Canberra te Bangladeshider Jonne Dorkar Shadhinotar Gaan
ক্যানবেরাতে বাংলাদেশীদের জন্যে দরকার স্বাধীনতার গান – অজয় কর
ক্যানবেরাতে আজ সন্ধ্যায় মোহনা কে সাথে নিয়ে ধ্রুপদ গান গাইছে- ১৫০ বছরের বাংলা গান ও বাঙ্গালী সংস্ক্রতি’র ধারা বাহিকতা থাকছে ওদের গানে। প্রায় ২০০’র মত লোক যাচ্ছে ওদের গান শুনতে। অনুষ্ঠানের প্রায় এক সপ্তাহ আগেই সব টিকিট বিক্রি শেষ- টিকিটের দাম ছিল ১০-২০ ডলার।
ধ্রুপদ-মোহনা’র শিল্পীরা স্থানীয়।
বাংলাদেশ-ভারত থেকে নামীদামী অনেক শিল্পীরা অন্যান্য শহরের মত ক্যানবেরাতেও এসে আমাদের বাংলা গান শোনায়, শ্রোতারা এসব গানের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের খরচ পোষাতে শুধু টিকিট কিনেই নয়, অনুষ্ঠানের খাবার স্টল থেকে খাবার কিনেও তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ধ্রুপদ-মোহনা’র আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিদেশ থেকে শিল্পী আনানোর খরচ নেই- তার পরও ওদের অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের গান শুনতে টিকিট কিনেছে ক্যানবেরার বাংলাদেশীরা। এ বিষয়টি আমার বিবেচনায় দুটো জিনিষ প্রমাণ করেঃ
১। স্থানীয় গায়ক হলেও ধ্রুপদ-মোহনা’র গান আন্তর্জাতিক মানের। ওদের গুন আছে মানুষ’কে ভাল মানের গান শোনাবার- আজকের সন্ধ্যা সঙ্গীতে ওরা সেটা প্রমাণও করবে, আশাকরি।
২। ক্যানবেরার বাংলাদেশীরা গান বাজনা ভাল বাসে। এরা গায়কের ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয়ের বিচার না করে ঐ গায়কের গান শোনে।
প্রিয় পাঠক, ধ্রুপদ-মোহনা’র গুণকীর্তন আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার আড়ালে ক্যানবেরাতে কি হছে- সেটা’র কিছুটা ধারনা দিতে। আশা করি, সকল সঙ্গীত প্রেমীরা বিষয়টিকে একটু তলিয়ে দেখবেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বৈশাখী উৎসব, পিঠা উৎসব, পূজা, আর ঈদের উৎসব – এ সবকিছুই বাংলাদেশের সংস্কৃতি’র অংশ। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি আর বক্তৃতা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও এসব বাঙ্গালী উৎসব হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর ক্যানবেরা যেখানে গান-প্রিয় বাংলাদেশীরা রয়েছে, বোধকরি কোন আয়োজকই গান-বাজনা ছাড়া এসব উৎসব পালনের কথা ভাবতে পারে না। তা যদি পারত তা হলে, গত ক’দিন আগে ক্যানবেরার মাকগ্রেগর স্কুলে হয়ে যাওয়া ঈদ পুনর্মিলনী’র বাংলাদেশী আয়োজকরা এমন বিব্রতর অবস্থায় পরত না।
ক’দিন আগে হয়ে যাওয়া পালমারস্টন স্কুলে আয়োজিত বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশন ক্যানবেরা’র (বিএসিসি) ঈদ পুনর্মিলনী’র কথা আমরা অনেকে জানলেও, মাকগ্রেগর স্কুলে’র ঈদ পুনর্মিলনী’র কথা অনেকেই জানতে পারি নি- মানে যে ধরনের publicity করলে পুনর্মিলনী’র এই অনুষ্ঠানে অনেক লোক সমাগম হতে পারত, সে ধরনের publicity থেকে বিরত থেকে মাকগ্রেগর স্কুলে’র ঈদ পুনর্মিলনী’র আয়োজকরা ঈদ পুনর্মিলনী’র অনুষ্ঠানটি শুরু করলেও ভাল ভাবে শেষ করতে পারেন নি- আর সেটা বোধকরি সংস্কৃতি প্রেমী এক তরুণের প্রতিবাদের কারণে। সংস্কৃতি প্রেমীরা যে মানুষ’কে ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয়ের বিচারে বিচার করে না- বিচার করে মানুষ’কে তার গুন দিয়ে- এই তরুণটি সেটাই প্রমাণ করেছিল সেদিন।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত মুসলমান থাকতে এক হিন্দুর লেখা হতে হবে কেন?- এই ধরনের বিষয় নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করছিল এক আবৃত্তি-কারক মাকগ্রেগর স্কুলে’র সেই ঈদ পুনর্মিলনতে। আবৃত্তি’র বিষয়টি শূনে শ্রোতাদের সারিতে বসে থাকা সংস্কৃতি প্রেমী এক তরুণ তীব্র প্রতিবাদ জানয়। কিছু আজেবাজে কথাও হয়- অবশেষে আয়োজকরা আবৃত্তি-কারককে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
যে রবীন্দ্রনাথকে জানে না, সে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ভাল বাসতে পারে না। যে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ভাল বাসতে পারে না, সে গান ভালবাসতে পারে না। আর মনীষীদের মতে, যে গান ভাল বাসতে পারে না, সে মানুষ খুন করতে পারে।
মাকগ্রেগর স্কুলে’র সেই ঈদ পুনর্মিলনর ঘটনাটিকে নিছক একটা ঘটনা ভাবতে অনেকেই রাজি নয়। তারা মনে করেন, যারা সংস্কৃতি প্রেমী, যার গান বাজনা ভালবাসে, যারা শিল্পী, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী তাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। শিল্পীদেরকে দেশের গান, স্বাধীনতার গান বেশি করে গাইতে হবে- কেননা, আমাদের আশেপাশে ঐ আবৃত্তিকারের মতো যারা রয়েছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়ভার তাদের উপরই বেশি বর্তায়।
PriyoAustralia.com.au
15/09/2012