Bicurna Murtir Dhulikona
আফগানিস্তানের ছোটগল্প
বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণা; মূল: জালমে বাবকোহি; অনুবাদ: ফজল হাসান
বুম … ম … ম …
প্রচন্ড বিস্ফোরণের সঙ্গে একটা কিছু ভেঙে পড়ার আওয়াজ …
ডিনামাইটের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ …
নিসন্দেহে প্রচুর পরিমানে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে । ধ্বংসাত্বক বিস্ফোরণের সঙ্গে তালেবানদের কম্পিত কন্ঠের আর্তচিৎকার ‘আল্লাহু আকবর’ মিলে চারপাশের পাহাড়ি ভূমি যেন প্রচন্ডরকমভাবে কাঁপছে এবং ধুলির ঘন মেঘ উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে বিশাল খোলা আকাশের দিকে ক্রমশ উঠে যাচ্ছে ।
বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের গায়ে বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে এবং মূর্তির ধ্বংসাবশেষ তড়িৎ বেগে পাহাড়ের মাঝে উপত্যকায় গিয়ে পড়েছে । বৌদ্ধ মূর্তির ভাঙা নুড়ি-পাথরের হাজার হাজার টুকরো আশেপাশের জায়গা জুড়ে বিশাল স্তুপ সৃষ্টি করেছে । প্রতিটি নুড়ি-পাথরের টুকরো যেন এক একটা ক্ষুদ্র বৌদ্ধ মূর্তি ।
বিস্ফোরণের শব্দতরঙ্গ সমস্ত বামিয়ান উপত্যকার ঈথারে ছড়িয়ে পড়েছে । এই শব্দতরঙ্গ চতুর্দিকের পাহাড়ের গায়ে ও চূড়ায় ধাক্কা লেগে দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে এবং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ফিরে আসছে ফাঁকা জায়গায়, যেখানে কিছুক্ষণ আগেও বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি সগর্বে দাঁড়িয়েছিল । দূরে এবং কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শব্দতরঙ্গ ।
ধোঁয়া এবং ধুলিকণায় আকাশ অন্ধকারময় । বাতাসের সঙ্গে ধুলিকণা মিশে উপত্যকা পেরিয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে । অনেক দূরে সেই ধুলিকণা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে ।
মোল্লা জানান আখন্দ তালেবানদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন । এর আগে ট্যাংক, কামান এবং মর্টার দিয়ে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করতে না পারার জন্য তিনি দারুণভাবে মর্মাহত । পরামর্শদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বৌদ্ধ মূর্তির কাছে প্রচুর পরিমানে বিস্ফোরক রাখার জন্য আদেশ করেছেন । যখন বিস্ফোরণের পর ‘বুম … ম … ম …’ আওয়াজে কেঁপে উঠলো মাটি ও পাহাড়, তখন তিনি ভীষণ শব্দ করে হাসলেন এবং চরম আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন । সে সময় তিনি আল্লাহু আকবর বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন । কিন্তু যখন চারপাশ থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বনি তার কানের ভেতর প্রবেশ করে, তখন তার সম্বিত ফিরে আসে এবং তৎক্ষণাৎ তিনি অন্যদের সঙ্গে সুর মেলালেন ।
সমস্ত চেষ্টার পর অবশেষে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস হওয়ায় মোল্লা জানান দারুণ খুশি । এতদিন মূর্তি ধ্বংস করতে না পারার যে ক্ষোভ তার বুকের ভেতর কাঁটা হয়ে বিঁধেছিল, এখন সেটা সরে গেছে এবং তিনি সম্পূর্ণ ভারমুক্ত । মনে মনে ভাবলেন, এখন মূর্তি পূজারীদের জন্য শুধু ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রইলো ।
দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । বিস্ফোরিত ধুলিকণার অন্ধকারে সবাই নিজেদের আস্তানায় ফিরে যাচ্ছে । মোল্লা জানান আখন্দ গর্বিত এবং তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক ঝলমল করে উঠে । তিনি ট্যাংকের উপর উঠে দাঁড়ালেন । সে সময় তার ঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে কাষ্ঠহাসি ফুটে উঠে । তিনি হাত দুটো পেছনে ভাঁজ করলেন । বাতাসে তার দীর্ঘ দাঁড়ি এদিক-ওদিক দোল খাচ্ছে এবং ঘাড়ের উপর শাল ঝুলছে ।
বৌদ্ধ মূর্তির উল্টোদিকের দিগন্তে সন্ধ্যাতারা ভেসে উঠেছে । তার অস্পষ্ট আলো এসে ঠিকরে পড়েছে ভাঙা নুড়ি-পাথরের গায়ে । পাহাড়ের মাঝে ফাঁকা জায়গার অন্ধকারে লক্ষ কোটি ধুলিকণার বৌদ্ধ মূর্তি যেন মেঝেকে সফেদ করে তুলেছে ।
একটা বুলডোজার দিয়ে বিধ্বস্ত মূর্তির পাথরের স্তুপ ভেঙে ফেলা হয়েছে । লুকোনোর জন্য কয়েকজন তালেবান শাবল দিয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মাটির নীচে চাপা দিচ্ছে । তারা দারুণ খুশি । কেননা কাজ প্রায় শেষ এবং আমীর যে ফতোয়া দিয়েছিলেন, তারা সেই হুকুম পালন করেছে ।
অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং প্রতিযোগিতামূলক কোন কঠিন কাজ সমাধান করার পর মনের ভেতর যেরকম স্বস্তির ভাব এসে মনকে প্রফুল্ল এবং শীতল করে তোলে, সে রকম একটা অনুভূতি তাদের চোখেমুখে হাসির খোরাক জোগায় ।
কাজ শেষ করে তারা শাবল একপাশে সরিয়ে রাখে । তারপর মাথায় গোল করে পেঁচানো শাল খুলে মাথা এবং মুখের ধুলিকণা পরিস্কার করে । ধুলিকণা আর মাটি লেগে তাদের মুখ, নাক এবং কান পুরোপুরি সাদা হয়ে গেছে । তাদের চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় তারা প্রত্যেকে যেন এক একটা শিলামূর্তি । তাদের মধ্যে একজন অন্যদের উদ্দেশ্য করে বললো, ‘বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণায় তোমাদের সমস্ত মুখ এবং চুল সাদা হয়ে গেছে । এখন তোমরা নিজেরাই মূর্তি হয়ে গেছ । তাই তোমাদেরও গুড়িয়ে দিতে হবে ।’ বলেই সে শব্দ করে হাসতে থাকে । অন্যরাও সেই হাসির সঙ্গে সুর মেলায় । কাছাকাছি নদীর পানিতে মাথা এবং মুখ ধোওয়ার জন্য একসময় তারা নদীর দিকে দৌঁড়ুতে থাকে ।
ইতিমধ্যে রাত নেমেছে । চারদিকের সবকিছু ঢেকে গেছে নিবিড় অন্ধকারে । হিমেল হাওয়ার ঝাপটা এসে পাহাড় এবং পাথরের গায়ে আছড়ে পড়ছে । পাহাড়ের যে জায়গায় বৌদ্ধ মূর্তি ছিল, এখন ওখানে থকথকে গাঢ় অন্ধকার । তবে চারপাশের ফাঁকা জায়গায় বাতাস এসে রীতিমত ঘুরপাক খাচ্ছে । রাতের অন্ধকার ভেদ করে নদীর উল্টোদি থেকে কেউ একজন বাতি নিয়ে এগিয়ে আসছে । একটুবাদেই আরো অনেক বাতির আলো দেখা যায় । ক্রমশ আলো বহনকারী লোকদের চাপা কন্ঠস্বর স্পষ্ট হতে থাকে ।
মাথা এবং দাড়ি ধোওয়ার জন্য যুবক তালেবানরা নদীর পানিতে মুখ ডোবায় । নদীর পানি অত্যন্ত শীতল । তাই তারা বেশিক্ষণ মাথা ধুতে পারেনি । চটজলদি শাল দিয়ে মাথা মুছে নেয় । ধোওয়া-মোছার পরও তাদের সারা মুখে এবং মাথায় বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণা লেগে আছে, যেন কেউ তাদের মুখমন্ডলে সাদা চুন মেখে দিয়েছে । একসময় তারা বিধ্বস্ত বৌদ্ধ মূর্তির কাছে গুহার দিকে চলে গেল । এই গুহা হল তাদের মূল ঘাঁটি । বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করার জন্য অন্য জায়গা থেকে যে সব তালেবানরা এসেছে, এটা তাদেরও আস্তানা ।
ঠান্ডায় যুবক তালেবানরা কাঁপছিল এবং তাড়াতাড়ি তারা গুহার ভেতর প্রবেশ করে । ভেতরের আবহাওয়া মোটামুটি উষ্ণ । গুহার দেয়ালে তেলের বাতি ঝুলানো । সেই বাতির আলোয় যখন তারা একে অপরের দিকে তাকায়, তখন সবাই ভয় পেয়ে শিউরে উঠে । বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণায় সবার সাদা মুখ দেখে কাউকে আলাদা করে চেনা যায় না । একে অপরের দিকে তাকিয়ে তারা দারুণ ভয় পেয়েছে এবং অবশেষে এক একজন করে গুহা থেকে বের হয়ে অন্য গুহায় চলে যায় । ইতিমধ্যে যেসব তালেবান গুহায় অবস্থান করছিল, তারা অতিথিদের দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠে এবং দৌঁড়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে । ‘মূর্তি … মূর্তি …,’ হঠাৎ তাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বললো । তারা ক্রমাগত চিৎকার ও চেঁচামেচি করে বলছে যে কয়েকজন তালেবান মূর্তির রূপ ধারন করেছে । অবিশ্বাস্য এ খবরটা অন্য তালেবানদের মধ্যে দাবানলের মতো অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ।
বলবে, কি বলবে না – আতংকিত তালেবানরা এই দোলাচলে দুলতে দুলতে একজন সাহস করে মোল্লা জানানকে বললো যে কয়েকজন তালেবান মূর্তির রূপ ধারণ করেছে ।
‘বাজে বকো না,’ হাসতে হাসতে বললো মোল্লা জানান ।
কয়েকজন তালেবান মোল্লা জানানকে বারবার বোঝাতে চাইলো যে ঘটনাটা বানোয়াট বা অর্থহীন নয় । আসলে সে সত্য কথা বলছে এবং কয়েকজন তালেবান সত্যি মূর্তির রূপ ধারণ করেছে ।
‘কাদের চেহারার পরিবর্তন হয়েছে ? কারা করেছে ?’ বিরক্তির সঙ্গে মোল্লা জানান জিজ্ঞেস করলেন ।
‘ওরা মূর্তির রূপ ধারণ করেছে … হ্যাঁ, কয়েকজন তালেবান …’
‘তুমি কি বলতে চাও ? কেমন করে একজন তালেবান মূর্তির রূপ ধারণ করতে পারে ? অধার্মিকের মত কথা বলো না ।’
‘কিন্তু ওরা বদলে গেছে । বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণায় ওদের মুখ ঢেকে গেছে । মুখগুলো দেখতে অবিকল বিধ্বস্ত মূর্তির মতো ।’
যে তালেবান এসে মোল্লা জানানকে দুঃসংবাদটা দিয়েছে, সে এখন রীতিমত চিন্তিত এবং ভয়ে জড়োসড়ো । অবিশ্বাস্য এ খবর শুনে মোল্লা জানান আশ্চর্যান্বিত । আচমকা তিনি যে খাটিয়ায় হেলান দিয়ে শুয়েছিলেন, সেখান থেকে উঠে দাঁড়ালেন । যেখানে আরো অনেক তালেবান জড়ো হয়েছে, যুবক তালেবান তাঁকে পথ দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যায় । মোল্লা জানানকে আসতে দেখে কয়েকজন তালেবান উঠে চলে যায় । মোল্লা জানানের দৃষ্টি গিয়ে আটকে পড়ে চারজনের উপর, যারা মাঠে বসেছিল এবং হ্যারিকেনের অস্পষ্ট আলোয় তাদের প্রত্যেককে এক একটা মূর্তির মত দেখাচ্ছিল । কিছুতেই মোল্লা জানান নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না । এক মুহূর্তের জন্য তিনি ভাবলেন, হয়তো যুবক তালেবানরা নিজেরাই সারা মুখে চুন মেখে মূর্তি সেজে তার সঙ্গে মশকরা করছে ।
‘ঢের হয়েছে … এটা কি ধরনের মশকরা ?’ রাগী স্বরে তিনি বললেন ।
তালেবানদেরকে বালতি ভরে পানি আনার জন্য মোল্লা জানান আদেশ করলেন । যারা মূর্তির রূপ ধারণ করেছে, কাঁধের উপর থেকে শাল নিয়ে তিনি নিজের হাতে ওদের মাথা এবং মুখ পরিস্কার করলেন । তবুও ওদের চোখেমুখে এবং সারা মাথায় সাদা চুন লেগে আছে । মনে হয় ওরা মুখোশ পড়ে আছে ।
অলৌকিক এবং বিস্ময়কর ঘটনায় মোল্লা জানানের মুখের ভেতর সমস্ত থুতু শুকিয়ে গেছে, এমনকি দু’আঙুলের ফাঁকে তসবীর দানাও থেমে গেছে । মোল্লা জানান কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু তার জিহ্বা একটুও নড়লো না । তিনি তোতলাতে লাগলেন । তিনি জানেন না, আসলে কি বলতে চান । একসময় মোল্লা জানান জনতার ভীড় ছেড়ে চলে গেলেন । যাওয়ার সময় অবিশ্বাসী মন নিয়ে তিনি পেছন ফিরে তাকালেন । রাতের অন্ধকারে তিনি মাঠের উল্টোদিকে দেখতে পেলেন কয়েকজন তালেবান তাকে অনুসরণ করছে । মাঠ ভর্তি সৈন্যবাহিনীর যন্ত্রপাতি পড়ে আছে এবং সেখানে অনেক মানুষের ভীড় । ট্যাংক এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম ভর্তি গাড়িগুলো ফাঁকা জায়গায় একের পর এক সাজানো । তখনও চারপাশের খোলা হাওয়ায় গোলাবারুদের পোঁড়া গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে । শান্ত এবং সুন্দর এই রাতের আঁধারে ভয়ংকর রকম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ।
মোল্লা জানানের চোখেমুখে রাগের চিহ্ন ফুটে উঠে এবং তিনি রীতিমত বিপর্যস্ত । ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখছেন এবং সবকিছুই স্পর্শ করছেন । কখনো কখনো তিনি ট্যাংকের গায়ে সজোরে আঘাত করছেন । আবার অন্য সময় হাঁটু গেড়ে বসে তিনি মাটি থেকে খালি কার্টিজের খোসা তুলছেন । হালকা ভাবে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে এবং মাথা ঘুরতে থাকে । তিনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না, এমনকি তার মুখ থেকে কোন কথাই বেরোচ্ছিল না । একসময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । যেসব তালেবানরা তার কাছাকাছি ছিল, সবাই দৌঁড়ে কাছে আসে । তারা মোল্লা জানানকে ধরাধরি করে গুহার ভেতর নিয়ে যায় এবং খাটিয়ায় শুইয়ে দেয় । সারারাত মোল্লা জানান সংজ্ঞাহীন এবং হতবাক ছিলেন । কখনো খানিকটা সময় তার চোখে ঘুম নেমে এসেছিল, আবার অন্য সময় তিনি সজাগ থেকেছেন । পরদিন তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো এবং সহজেই তিনি চোখ মেলে তাকাতে পারছেন । তিনি এক গ্লাস পানি চাইলেন এবং খানিকটা পান করে ভাবতে শুরু করলেন । কয়েকজন তালেবান তার খাটিয়ার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে । কিন্তু ওদের উপস্থিতি তার চিন্তায় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি । মোল্লা জানানের মস্তিস্কের ভেতর যেসব চিন্তার ঘুণপোকা কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছিল, তিনি সে সব চিন্তার কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না । নিজেকে তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কেমন করে ওরা মূর্তির রূপ ধারণ করলো ?’ গতরাতে তিনি অসুস্থতা বোধ করেছিলেন । তখন তিনি জেগে ছিলেন, নাকি ঘুমিয়ে ছিলেন, সেটা পুরোপুরি মনে করতে পারছেন না । একজন তালেবানের কাছে তিনি খবরাখবর জানতে চাইলেন । যুবক তালেবান বলল যে চারজন তালেবানের মূর্তির রূপ ধারণ করা ছাড়া তেমন বিশেষ কোন খবর নেই ।
মোল্লা জানান বুঝতে পারলেন গতরাতের স্বপ্নটা আসলে খুব খারাপ স্বপ্ন ছিল না । তবে তার আগের রাতের স্বপ্নটা ছিল সত্যি । তারপরেও তালেবানদের মূর্তির রূপ ধারণ করার চিন্তাটা তিনি তার মাথা থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারছেন না । ‘কেন ওরা এভাবে বদলে গেল ?’ তিনি ভাবলেন ।
কয়েকজন তালেবান মোল্লা জানানকে বললো যে যারা মূর্তির রূপ ধারন করেছে, তারা নদীর পানিতে ডুবিয়ে মাথা ধুয়েছে এবং ভালো করে মুখ ঘষে মূর্তির ধুলিকনা পরিস্কার করতে চেয়েছে । কিন্তু ওরা তা করতে পারেনি । অন্যরা ভয়ে পানির কাছে যায়নি । কেননা ওরা পানি স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছিল । ওদের জন্য নদীর পানি বিষাক্ত হয়েছে । তাই ওদের মুখে এখনো ধুলিকণা লেগে আছে । মোল্লা জানান ভাবছিলেন, পানি দিয়ে যদি ধুলিকণা সাফ করতে না পারে, তাহলে কেমন হবে ? পানির সমস্যা কি ? কেন পানি … ?
ভাবনার অথই দরিয়ায় মোল্লা জানান আকন্ঠ ডুবে আছেন । এমন সময় এক তালেবান দৌঁড়ে এসে গুহার ভেতর প্রবেশ করে এবং ছোট একখন্ড পাথর তার হাতে তুলে দেয় । মোল্লা জানান খুব কাছ থেকে পাথরটি উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করে দেখলেন । পাথরটি দেখতে অবিকল আসল বড় বৌদ্ধ মূর্তির মতো, যা ডিনামাইট দিয়ে গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে । যুবক তালেবান বললো যে স্তুপাকারে রাখা ভাঙা মূর্তির সবগুলো পাথরের টুকরো দেখতে এই ছোট পাথরের বৌদ্ধ মূর্তির মতো ।
মোল্লা জানান রীতিমত বাকরুদ্ধ । তিনি কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না । শুধু অবাক বিস্ময়ে ছোট পাথরের বৌদ্ধ মূর্তির দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকেন । যদিও আকৃতিতে মূর্তিটি ছোট, হয়তো হাতের সমান, কিন্তু দেখতে অবিকল আসল বড় বৌদ্ধ মূর্তির মতো ।
গুহার ভেতর যে সব তালেবানরা মোল্লা জানানকে ঘিরে রেখেছে, ওরা সবাই এক একজন করে ছোট মূর্তিটিকে নেড়েচেড়ে পরখ করে দেখলো । ওদের চোখ ছানাবড়া । কোন কিছু না বলে মোল্লা জানান আখন্দ তড়িৎ গতিতে গুহা থেকে বের হয়ে নুড়ি-পাথরের কাছে গেলেন । তিনি একটা নুড়ি-পাথর তুলে চোখের সামনে এনে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন । এটা অবিশ্বাস্য যে এ পাথরটাও একটা ছোট বৌদ্ধ মূর্তি । তারপর তিনি আরেকটা নুড়ি-পাথর তুললেন এবং সেটাও একটা বৌদ্ধ মূর্তি ।
প্রত্যেকটা নুড়ি-পাথর হাতের সমান অথবা তারচেয়ে ছোট এক একটা বৌদ্ধ মূর্তি ।
মোল্লা জানান আখন্দ বিড়বিড় করে বললেন, ‘এটা যাদু এবং প্রত্যেকটা নুড়ি-পাথরই এক একটা অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন বস্তু ।’
বাকিরা সবাই বোবা দৃষ্টিতে বৌদ্ধ মূর্তিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে । সে সময় উদ্বিগ্নতার কয়েক টুকরো ধূসর মেঘ উড়ে এসে তাদের চোখেমুখে ছায়া ফেলে । তারা একে অপরের দিকে ট্যাঁরা চোখে তাকিয়ে আছে । তবে সরাসরি কেউ কারোর চোখের দিকে তাকায়নি । একসময় তাদের দৃষ্টি আটকে যায় মেঝের উপর ।
আচমকা চারপাশ থেকে হট্টগোলের আওয়াজে সুনসান মৌনতার কাঁচ ভেঙে খানখান হয়ে যায় । চিৎকার-চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনে তালেবানরা গুহা থেকে বের হয়ে আসে । মাঠের যেখানে অন্যেরা উচ্চস্বরে শোরগোল করছিল, তারা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় । তুমুল উত্তেজনায় তালেবানরা দাঁড়কাকের মতো চিল্লাচিল্লি করে একে অপরকে অলৌকিক ঘটনার কথা বর্ণনা করছিল । সবাই একসঙ্গে কথা বলছিল, শুনছিল না কেউ । যারা এতক্ষণ অন্য গুহার ভেতর ছিল, তারা হৈচৈ শুনে হুড়মুড় করে গুহা থেকে বেরিয়ে নুড়ি-পাথরের ছোট মূর্তির স্তুপের দিকে দৌঁড়ুতে থাকে । মোল্লা জানান এবং তার আশেপাশের তালেবানদের মুখে কোন রা নেই । তারা রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সম্পূর্ণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় । তারা ভাবছে, যেহেতু বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে, এখন এসব ছোট ছোট বৌদ্ধ মূর্তি দিয়ে কি করবে ? এছাড়া বিশাল মূর্তির ধুলিকণায় যাদের মুখের আদল বদলে গেছে, এমনকি যারা মূর্তির রূপ ধারণ করেছে, তাদের নিয়ে কি করবে ?
এ সময় ক্রিং ক্রিং শব্দে টেলিফোন বেজে উঠে । উৎকন্ঠা ও উত্তেজনায় মোল্লা জানান এবং অন্য তালেবানদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয় । মোল্লা জানান কাবুল এবং কান্দাহারের উচ্চপদস্থ তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন । তিনি তাদেরকে অলৌকিক এবং অবিশ্বাস্য ঘটনার পুরোটাই খুলে বলেন ।
কমান্ডার আদেশ করলেন, তালেবানরা যেন অনেক দূরে কোথাও ধুলিকণা ছড়িয়ে ছিটয়ে দেয় যাতে কোন ধরনের চিহ্ন না থাকে এবং নুড়ি-পাথরের টুকরোগুলো এমনভাবে মাটি চাপা দেয় যেন কেউ খুঁজে না পায় ।
কমান্ডারের আদেশ অনুসারে মোল্লা জানান সমস্ত নুড়ি-পাথর এবং বৌদ্ধ মূর্তির ধুলিকণা ট্রাকে তোলার নির্দেশ দিলেন । বুলডোজার আর ট্রাক্টর দিয়ে বিধ্বস্ত মূর্তির ধ্বংসাবশেষ ট্রাকে তুলে বিছিন্ন এলাকায়, নদীর ধারে, গিরিখাতে, উপত্যকায় এবং পাহাড়-পর্বতের ঢালুতে ফেলে দেয় ।
কাজ শেষে মোল্লা জানান ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটাকে হেলানোর ভঙ্গিতে খাটিয়ার উপর বিছিয়ে দেন । সে সময় তার মস্তিস্কের অন্দরে আগের দুশ্চিন্তা এবং পেরেশানীর ছিঁটেফোঁটা নেই । তিনি রীতিমত ভারমুক্ত । যেসব তালেবান যুবক পরবর্তী নির্দেশনার জন্য গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তারা মোল্লা জানানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়নি । তিনি শুধু ‘উহ্’ বা ‘আহ্’ করেছেন এবং স্মৃতির ফিতে টেনে সমস্ত ঘটনা রিওয়াইন্ড করে আরেকবার ভাবতে থাকেন ।
দুপুরের দিকে মোল্লা জানান গুহা থেকে বের হয়ে অজু করে নামাজ আদায়ের জন্য তৈরি হলেন । ইতিমধ্যে তালেবানরা কাজ শেষ করেছে । কোথাও কোন বুলডোজারের গরগর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না । নিস্তব্ধতার মিহি চাদরে ঢেকে আছে বামইয়ান উপত্যকার চারপাশ । বিশাল আকাশের বুকে মনের সুখে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা । যদিও কোথাও সূর্যের আলো নেই, তবুও কেন জানি মনে হয় এ যেন কোন রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন । কোথাও উত্তাল বাতাসের দাপাদাপি নেই, তবে মৃদুমন্দ বাতাস মাটির গায়ে হালকা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে । আকাশে-বাতাসে, এমনকি আশেপাশের মাটির বুকে এক অপার শান্তিময় নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ।
ঝড়ের আগে প্রকৃতি যেমন ঝিম মেরে থাকে, গুহার ভেতরে মোল্লা জানান তেমনই থমথমে, শান্ত । একসময় তিনি চুপচাপ ধীর পায়ে বেরোলেন । কিন্তু তিনি তার দেহের ভেতর একধরনের মর্মরধ্বনি শুনতে পেলেন । তিনি মনযোগ দিয়ে শব্দটার উৎস খুঁজতে লাগলেন । নদীর তীরে পৌঁছানো পর্যন্ত শব্দটা ছিল । তারপর পলকেই শব্দটা থেমে যায় । নদীর দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তিনি দেখলেন, পানি স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ এবং চিকচিক করছে । সেই পানিতে ফুটে উঠেছে হাজার হাজার বৌদ্ধ মূর্তির ছবি । উপত্যকা পেরিয়ে বিচূর্ণ মূর্তির ধুলিকণা নদীর স্রোতের সঙ্গে ভেসে গেছে সাগরের বুকে । খাল-বিল, রাস্তা-ঘাট, শহর-গ্রাম, এমনকি তালেবানদের ঘাটি জুড়ে শুধুই ভাঙা মূর্তির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে । মোল্লা জানান একটি সরু নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালেন । তিনি পানির দিকে তাকিয়ে দেখলেন পানি স্বচ্ছ এবং কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে । কিন্তু কিভাবে এ পানি দূষিত হলো, তা কিছুতেই তার বোধগম্য হলো না । কি ভেবে যেন তিনি পানি স্পর্শ করলেন । তিনি তার আঙুলের ডগায় মিহি ধুলিকনা দেখতে পেলেন । সে সময় তিনি মাথা থেকে পা অবধি একধরনের অলৌকিক শিহরণ অনুভব করলেন । রীতিমত ভয় পেয়ে তিনি চটজলদি পানি থেকে আঙুল তুলে নিলেন এবং তড়িৎ গতিতে স্থান ত্যাগ করেন ।
মোল্লা জানান আকাশের দিকে তাকালেন । আকাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেই, আবার ফুটফুটে চাঁদের আলোও নেই । কেমন যেন ধূসর জোৎস্নায় ঢেকে আছে বিশাল আকাশ । দূরের সাদা মেঘ দেখে মনে হয় ওরা একই জায়গায় স্থির হয়ে আছে । আসলে ওরা ধীর গতিতে শান্তিপূর্ণভাবে চলাফেরা করছে । যদিও পাখিরা উড়ছে না, কিন্তু ওরা ডানা মেলে আছে । কোথাও উড়ে যাচ্ছে না, এমনকি উড়ে যাবার কোন উদ্যোগও নেই । তিনি স্বপ্নময় দৃশ্যের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ।
মোল্লা জানান উদ্দেশ্যহীনভাবে এদিক-ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছেন । ভাবনার অথই সাগরে তিনি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত । তার কোথাও যাবার কোন তাড়া নেই ।
অবশেষে তিনি গুহায় ফিরে এলেন এবং চুপচাপ কিছুক্ষণ একাকী বসে রইলেন । একসময় তিনি তসবী নিয়ে নাড়াচাড়া করেন । কিন্তু তসবীর গুটিগুলো পাথর হয়ে গেছে । মুহূর্তেই তার আঙুল অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে এবং তিনি গুটিগুলো নাড়াতে পারছেন না । তার আঙুলের ডগা বরফের মতো হিমশীতল । তিনি আঙুলের দিকে তাকালেন । আঙুলের মাথা চুনাপাথরের মতো সাদা হয়ে গেছে, যেন মূর্তিগুলোর হাতের আঙুলের মতো ।
মোল্লা জানান মোটেও আশ্চর্য্যান্বিত হলেন না । কেননা ইতিমধ্যে তিনি এ ধরনের অলৌকিক ঘটনা কয়েকবার দেখেছেন । লোকেরা এসে তাকে অবহিত করে যে চারজন তালেবানের মুখ মূর্তির রূপ ধারণ করেছিল, ওরা ক্রমশ সম্পূর্ণ পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে । তালেবানরা ভয়ে দলে দলে এসে মোল্লা জানানের কাছে জানতে চাচ্ছে এ পরিস্থিতিতে তাদের কি করণীয় আছে ।
মোল্লা জানানের মস্তিস্ক ফাঁকা, আনমনা । তিনি বুঝতে পারছেন না কি বলবেন, এমনকি তিনি জানেন না এই সংকটময় মুহূর্তে তার কি করা উচিত কিংবা অন্যদের কি আদেশ করবেন । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তিনি পুরোপুরি সবকিছু ভুলে গেছেন । তার নীরবতা দেখে মোল্লা কঁচি আখন্দ চিৎকার করে বললো, ‘মোল্লা জানান, বলুন, আমরা এখন কি করবো ?’
মোল্লা জানানের কাছে কোন উত্তর নেই । তিনি ঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে কাষ্ঠহাসি ফুটিয়ে রেখে চুপ করে রইলেন ।
মোল্লা কঁচি কান্দাহারে কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বৃত্তান্ত জানালেন । তিনি বললেন কেমন করে চারজন তালেবান পাথরের মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে । কমান্ডারের উত্তর সোজসাপটা । তিনি বললেন, ‘সব মূর্তি এবং যেখানে মূর্তির অস্তিত্ব আছে, সবকিছু নষ্ট করে ফেলো । মূর্তির প্রাণ আছে কি নেই, তাতে কিছু যায় আসে না । সব মূর্তি ধ্বংস করে দাও ।’
মোল্লা কঁচি মোল্লা জানানকে ডেকে গুহার বাইরে নিয়ে এলেন । তিনি অন্য তালেবানদের উদ্দেশে করে কমান্ডারের নির্দেশ ঘোষনা করলেন, ‘যত ধরনের পাথরের মূর্তি আছে, সবগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দাও ।’
মুহূর্তেই উপস্থিত তালেবানদের মধ্যে উত্তেজনার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো । প্রত্যেকেই কথা বলছিল । কেউ বিরোধিতা করে যুক্তি দিচ্ছিল এবং অন্যরা তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি জানাচ্ছিল । কিন্তু আসলে দু’পক্ষের কেউ জানে না ঘটনার পরিনতি কি হবে । সে সময় কয়েকজন তালেবান দৌঁড়ে গিয়ে ইতিমধ্যে মূর্তি হয়ে যাওয়া তালেবানদের মাঠে নিয়ে আসে । মানব মূর্তিগুলো পাথরের মূর্তির মতো ভীষণ ভারী । তাদের আনতে কষ্ট হয়েছে । শুধু তাদের চোখের মনি নড়ছে এবং দেহের অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থবির । তারা প্রত্যেকেই যেন এক একটা বিশাল পাথর ।
এ সব মানব মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করার জন্য আদেশ করা হয়েছে । কোন রকম ভ্রুক্ষেপ এবং সময় অপচয় না করে তালেবানরা শাবল এবং গাঁইতি দিয়ে মানব মূর্তিগুলোকে ভাঙতে শুরু করে । একসময় ওগুলো ভেঙে খানখান হয়ে যায় । মূর্তিগুলোর শরীর থেকে কোন রক্ত ঝরেনি । ওদের দেহের ভেতর শুধু ধুলিকণা এবং ছাই, যা বাতাসে ওদের শরীরের মধ্যে জমা হয়েছে ।
এক সময় মোল্লা জানান নিজের গুহায় প্রবেশ করেন । তখনও বাইরে মানব মূর্তি ভাঙার অবিরাম উৎসব চলছিল । পুনরায় খবর আসে যে অন্য কয়েকজন যুবক তালেবান পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে । মোল্লা কঁচি তাদেরকেও ধ্বংস করার নির্দেশ দিলেন ।
এ সব তালেবান যুবকদের মূর্তিতে রূপান্তরিত হওয়া হয়তো তাদের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন । মূর্তিগুলো ভাঙার পর কমান্ডারের প্রচন্ড রাগ হলো এবং তিনি যারপরনাই ক্ষুব্ধ । তিনি আদেশ করেন যেন মোল্লা জানান আখন্দ যথাশীঘ্রই আমীরের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে পুরো ঘটনা বয়ান করেন । কমান্ডারের আদেশ পালন করে মোল্লা জানান ভাড়া করা বিমানে চড়ে রওনা হলেন । তিনি হতচকিত এবং জানেন