Bangla article on God Particle
( উপরের ছবি দুটির বাম পাশের ছবিটি হোল সার্ণ গভেষণার ফলাফল ঘোষণার অডিটোরিয়াম হল ৪ঠা জুলাই ২০১২ জেনেভার কাছে মেরিনে , দ্বিতীয়টি হোল সার্ণ গভেষণাগারের দুই প্রোটন কণার সংঘর্ষকালীন সময়ের সৃষ্ট ছবি । )
১.
সত্যিই অবিভূত হওয়ার মত ঘটনা , সাধারনের কাছে খবরটির গুরুত্ব কম হতে পারে , কিন্তু চিন্তাশীল মানুষের কাছে এটা এক মহাখবর , মহা আবিস্কার । বিশ্বের জন্ম রহস্য খুঁজে ফেরার মানুষের নিরন্তর চেষ্টার এক বড় ধরনের পুরষ্কার । ঘোষণাটি আসল ৪ঠা জুলাই ২০১২ সুুইজারল্যান্ডের সার্ণ গভেষণাগারের অডিটোরিয়াম মেরিনোতে, যখানে দুইদল বিজ্ঞানী তাদের বিগত চার বৎসরের সার্ণ গভেষণাগারের লার্র্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে খোঁজে ফিরছিলেন বিশ্বব্রক্ষান্ডের সৃষ্ঠি রহস্য পদার্থ বিদ্যার মূল উপাদান কণার আচরণ । যা সমস্ত সৃষ্ঠির মূলে ,বস্তু থেকে প্রাণী সমস্ত কিছু । সেই কণার আচরণ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা যা খুঁজতে ছিলেন সেই রহস্যময় কণার সন্ধান লাভ । যার নাম এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে হিগস-বোসন কণা , যে কণার অস্বিত্বের কথা বৃটিশ বিজ্ঞানী মিঃ হিগস এবং বাংগালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুু বলে আসছিলেন ওনার নামেই বসুু থেকে বোসন নামকরণ । ওনাদের কথিত কল্পিত সেই কণার সন্ধান সার্ণ গভেষণাগারের বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন । যাকে বলা হচ্ছে ঈশ্বর কণা ।
এখন দেখা যাক কেন এই কণার নাম ঈশ্বর কণা । আমরা জানি যে বস্তুর মূলে রয়েছে পরমানু , সেই পরমানুতে রয়েছে কণার সমাহার । মানুষ খালি চোখে যার অস্তিত্ব খুঁজে পায় না । ইলেট্রন , প্রোটন , নিউটন হোল সেই কনাদের মধ্যেকার একেকটি ।এই কণাদের সৃষ্ঠি রহস্যসের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিশ্ব-ব্রক্ষান্ডের সৃষ্টি রহস্য । এই কণাদের রহস্য উদ্ঘাটনই বর্তমান বিজ্ঞানীদের মূল বিষয় । সুুইজারল্যান্ডের সার্ণ গভেষণাগারে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আয়োজনে ৬০০০ বিজ্ঞানীর নিরন্তর গভেষণার ফল হোল এই আবিষ্কার ।এই গভেষণার জন্যে বিজ্ঞানীরা সার্ণ ল্যাবরেটরীতে ১৭ মাইল দীর্ঘ এক টানেল প্রতিষ্ঠা করেন সুুইজারল্যান্ড – ফ্রান্স সীমান্তের কাছে । সেই টানেলের দুই প্রান্ত থেকে দুটি প্রোটন কণা নিক্ষিপ্ত করা হয় আলোর গতিতে; কণা দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ অবলোকন করাই ছিল বিজ্ঞানীদের উক্ত গভেষণার লক্ষ্য ।কণা দুটি যখন মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন কণা দুটিই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় , সেই সাথে সাথে সৃষ্টি করে অকল্পনীয় পরিমান শক্তি । সৃষ্টি হয় বিশ্ব-ব্রক্ষান্ড সৃষ্টির এক সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ সময়ের পরের অবস্থা । যার অবলোকনই বিজ্ঞানীদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না । আর এই সংঘর্ষের ফলে বিপুল শক্তি থেকে আইনস্টাইন আবিস্কৃত সূত্র অনুযায়ী তৈরী হয়েছে কোটি কোটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার । যারা আবার জন্মের পরপরই সেকেন্ডের কোটি কোটি ভাগের কম সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে জন্ম দিয়েছে নতুন কণার । এই গভেষণার আসল বিষয় ছিল প্রোটন – প্রোটন কণার সংঘর্ষের ফলে য়ের শক্তি থেকে জন্মাবে পদার্থের ভর ব্যাখাকারী ঈশ্বর কণার । যারা আবার জন্মের পরপরই ধ্বংস হয়ে যাবে নতুন কণার জন্ম দিয়ে । সেই ঈশ্বর কণার সন্ধানই সার্ণ গভেষণাগারের বিজ্ঞানীরা সারা মানব জাতিকে জানান দিয়ে গেলেন সুুতরাং মানব জাতি এখন বিশ্ব-ব্রক্ষান্ডের রহস্য সন্ধানের দ্বারগোড়াঁয় ।
২.
কেন ঈশ্বর কণার সন্ধান আমাদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ ? আসলে আমাদের চারপাশের সমস্ত বস্তুর মূল বিষয় হোল তার ভর ।ভরের সন্ধান লাভই হোল সমস্ত কিছুর ব্যাখার আসল রহস্য ।প্রশ্ন হোল এই ভর , বস্তু তথা তার কণা কোথা থেকে পাচ্ছে? আমাদের বুঝতে হবে যে, বস্তুর যদি ভর না থাকে তাহলে সেটা ছুঁটে চলে আলোর বেগে এবং জোট বাঁধে না কারোর সাথে ।ভরই হোল সৃষ্টি তথা স্থিতির মূল । কাজেই বিশ্ব – ব্রক্ষান্ড যেমন বস্তুর সমারোহ , ঠিক তেমনি বস্তুর মধ্যেকার ভরই হোল তার আকারের মূল । কাজেই বস্তু তথা তার উপাদানের মধ্যেকার ভর না থাকলে যেমন বস্তুর আস্তিত্ব থাকে না , ঠিক তেমনি সেই ভরের আসল রহস্য উদ্ঘাটনই হোল আমাদের সমস্ত সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন । বিজ্ঞানীরা সেই ভরের আসল রহস্যেরই সন্ধান খুঁজে পেতে চলেছেন ; এবার পদার্থের সেই ভরের আসল উৎস কণার উদ্ঘাটন সার্ণের বিজ্ঞানীরা করতে চলেছেন । সত্যিই আশ্চর্য হবার মত খবর , পুলকিত হবার মত খবর । আশা করা যাচ্ছে ২০১২ য়ের পদার্থে নোবেল পুরস্কার ওনাদের জন্যে বরাদ্দ । যারা এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত ছিলেন প্রিয় – অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ওনাদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।
আরশাদ হোসেন ভূঁইয়া ।
এডেলেইড ,অস্ট্রেলিয়া ।
৫ই জুলাই ২০১২।