সম্প্রীতি ও আমরা – শম্পা বড়ুয়া
![সম্প্রীতি ও আমরা – শম্পা বড়ুয়া](https://priyoaustralia.com.au/wp-content/uploads/files/2012/moulobadi_222842087-890x395_c.jpg)
[Please read attached pdf if you have any problem reading below text]
প্রতি বছরের মত এবারেও অক্টোবর এর শুরু থেকেই শারদীয় দূর্গা উত্সব’কে ঘিরে কানবেরার বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছিল পুজোর নানা আয়োজন – আর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল সেই উত্সব’এর আমেজ I
এবারের পুজো একটু অন্যরকম – কারণ ‘মা আসছেন, আর আসছে নতুন প্রতিমা’I আর আমার কানে বার বার বাজছিল একটি প্রিয় গানের কয়েকটি কলি:
জাগো মা দূর্গা, দুর্গতিনাশিনী, মঙ্গলদায়িনী, জাগো মা
হে দু:খহারিনী তোমারি করুনায়
দূর কর এ আঁধার তোমারি মহিমায়
শুভ চেতনার আলো অন্তরে দাও মা
শোনো এই প্রার্থনা, দাও সাড়া দাও II
সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত রোববার (২১ অক্টোবর ২০১২) কানবেরা’র ফ্লোরি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হলো ‘সার্বজনীন পূজা’ I পুজোয় জনসমাগম হয়েছিল তিনশ’র বেশি I জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই এসেছিলেন এই উত্সব’এর শামিল হতে I উত্সব প্রিয় বাঙালি জাতির কাছে দূর্গা পূজা সার্বজনীন, সকল বাঙালির – এরই প্রমান মিলল আরেকবার, উত্সবে বাঙালিদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে I
সম্প্রতি রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকেই মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলো I পুজো’র অনুষ্ঠানে গিয়ে মনটা যেন একটু হালকা হোলো I নতুন করে আরো একবার মনে হোলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের অহংকার, আর এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সৌহার্দপুর্ণ সহাবস্থানকে নিশ্চিত করার দায়িত্ব মানবতাবাদী প্রতিটি মানুষের I
রামু’তে ঘটে যাওয়া ধ্বংসলীলা’কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বেশকিছু লেখা বেরিয়েছে I লেখাগুলো পড়ে মনে হয়েছে রামু’র ঘটনা সকল ধর্মের, সকল বিবেকবান মানুষকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে I এই ঘটনা সত্যিকার অর্থেই আমাদের দেশের চিরাচরিত ঐতিহ্য ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’র’ প্রতি আঘাত I এই ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত দু:খের এবং লজ্জার I এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হামলাকারীদের অধিকাংশ ছিল তরুণ, যে বয়স সুন্দরের স্বপ্ন দেখার, মানুষকে ভলোবাসার, সেই বয়সের তরুনরা এই নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ’র সাথে জড়িত হয়েছে I সকল ধর্মের মূল বাণী মানবতা I সেই ভয়াবহ রাতে মানবতাবাদী কিছু মানুষের প্রচেষ্টায় ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা পেয়েছে কিছু মন্দির আর তার পুরাকীর্তি I
সেই মানবতাবাদী মানুষদের প্রতি জানাই স্বশ্রদ্ধ ধন্যবাদ I
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম’এর ভাষায় মানবতার মূলমন্ত্রে বাঙালি জাতি আবারও দীক্ষিত হোক মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার শক্তি অর্জনের জন্য:
গাহি সাম্যের গান
যেখানে মিলেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম খ্রিস্টান
…………….
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট
এই হৃদয়ই সেই নীলাচল, কাশী, মথুরা বৃন্দাবন
বুদ্ধ গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা কাবা ভবন
মসজিদ এই মন্দির এই গির্জা এই হৃদয়
……..……..
মিথ্যে শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই
নতুন প্রজন্মের মাঝে মানবতার শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা দরকার I তবেই তারা শিখবে নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কে লালন করতে এবং সেই সাথে ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’র প্রতি সম্মান দেখাতে I
রামুর ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধবিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ মহাথের’র প্রকাশিত লেখা’র (দৈনিক প্রথম আলো) উদ্ধৃতি দিয়ে এবং ওনা’র সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই ‘’আমরা শোকাহত, মর্মাহত, কিন্তু এখনো আশাহত হইনি I আমরা সম্প্রীতি ও ভালবাসার বন্ধনে এই দেশে বাঁচতে চাই’ I
মানবতার ধর্ম জাগ্রত হোক আমাদের সকলের মাঝে, মৈত্রী’র করুণাধারায় সিক্ত হো’ক দেশ ও জাতি I