NAIDOC Week

NAIDOC Week

নেইডক সপ্তাহ
অস্ট্রেলিয়াকে বলা হয় অভিবাসীদের বাসভূমি বা ল্যান্ড অব মাল্টিকালচারাল সোসাইটি। যদিও ১৬০৬ সালে ডাচ ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ইয়্যানজ এবং ১৬৯৭ সালে ব্রিটেনের উইলিয়াম ড্যাম্পায়ার স্বল্পসময়ের জন্য অস্ট্র্রেলিয়ার স্থলভূমিতে নোঙর করেছিলেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকেননি। ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জেমস কুকের অস্ট্রেলিয়ায় অবতরণের পর থেকে অভিবাসনের উদ্দেশে বহিরাগতদের আগমন শুরু হয়। প্রথমে ব্রিটেনের বিভিন্ন আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দিয়ে শুরু হয় অভিবাসন। ১৭৮৮ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আগমন ঘটে। পরে ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড থেকে সাধারণ নাগরিক এসে বসতি স্থাপন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে গ্রিস ও ইতালি থেকে অভিবাসীরা আগমন করে। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশিরা আসা শুরু করে গত শতাব্দীর সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে, স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে।
অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ইউরোপিয়ানদের আগমনের আগে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে বসবাস করত আদিবাসী বা অ্যাবোরিজিন। প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে তারা অস্ট্রেলিয়ায় আগমন করে। কীভাবে তারা এসেছিল এবং কেমন করে বিরূপ পরিবেশে বসতি স্থাপন করেছে, সে সম্পর্কে আজও কেউ সঠিকভাবে কিছু বলতে পারেন না। তবে জানা যায়, আদিবাসীদের চাল-চলন, জীবনধারণ, এমনকি খাদ্য ছিল সাদামাটা, যা প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। পশুপাখি এবং মাছ শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। সুপার ন্যাচারাল বিষয়ের ওপর তাদের বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়।
ইউরোপিয়ানদের আগমনের শুরু থেকেই আদিবাসীরা মোটামুটি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জমিজমা দখল নিয়ে শেতাঙ্গদের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধত, এমনকি শেতাঙ্গরা আদিবাসীদের প্রতি শারীরিক অত্যাচার এবং যৌন পীড়ন করত। ১৮৬৯ সাল থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্যের সরকার এবং বিভিন্ন গির্জার পাদ্রী ও কর্মকর্তারা অ্যাবোরিজিন্যাল এবং টরেস স্টেইট আইল্যান্ডের আদিবাসীদের পরিবার থেকে প্রায় ১ লাখ শিশুকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেয়। এদের বলা হয় ‘স্টোলেন জেনারেশন’ বা হারানো প্রজন্ম। যদিও এই হারানো প্রজন্মের শিশুদের উন্নততর জীবন প্রদান, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উদ্দেশেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদিবাসীরা মনে করত। তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্যই সুপরিকল্পিতভাবে তা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীদের পক্ষ থেকে তুমুল প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময় সেই ঝড় তুঙ্গে পৌঁছায়। ১৯৯২ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং ব্যক্তিগতভাবে হারানো প্রজন্মের শিশুদের ওপর অন্যায় এবং অবিচারের কথা স্বীকার করেন। ১৯৯৭ সালে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড সরকারিভাবে ক্ষমা চাওয়ার বিরোধিতা করে বলেন, অতীতের কোনো ভুলের জন্য বর্তমান প্রজন্ম দায়ী নয়। তবে হারানো প্রজন্মের শিশুদের প্রতি গির্জার তত্কালীন কর্মকর্তা এবং পাদ্রীদের সক্রিয় ভূমিকার জন্য ২০০১ সালের নভেম্বরে ভ্যাটিক্যানের পক্ষ থেকে পোপ দ্বিতীয় জন পল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। অবশেষে ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড সরকার এবং জনগণের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের কাছে জাতীয়ভাবে ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
অ্যাবোরিজিন্যাল এবং টরেস স্টেইট আইল্যান্ডের আদিবাসীদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখার জন্য প্রতিবছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে জ

াতীয়ভাবে পালিত হয় ‘নেইডক’ সপ্তাহ। কমিটি অ্যাক্রনিম অনুসারে সপ্তাহের নামকরণ করা হয়েছে নেইডক সপ্তাহ। উল্লেখ্য, ১৯৩৮ সাল থেকে প্রতিবাদ হিসেবে আদিবাসীরা অস্ট্রেলিয়া ডে-তে (অর্থাত্ ২৬ জানুয়ারি) একদিন ‘ডে অব মোর্নিং’ বা ‘শোক দিবস’ পালন করে। ১৯৪০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ডে-র আগের রোববার ছিল এই শোক দিবস। শুধু শোক বা প্রতিবাদ নয়, বরং আদিবাসীদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য ১৯৫৭ সালে ‘ডে অব মোর্নিং’ পাল্টিয়ে ‘নেডক’ নামকরণ করা হয় এবং দিন পরিবর্তন করে জুলাই মাসের দ্বিতীয় রোববার ধার্য করা হয়। পরে ১৯৯১ সালে টরেস স্টেইট আইল্যান্ডের আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে একদিনের পরিবর্তে সপ্তাহব্যাপী নেইডক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
‘পরিবর্তন : পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের’ -এই থিমকে উপজীব্য করে এ বছরের নেইডক সপ্তাহ পালিত হয়েছে ৩ থেকে ১০ জুলাই। সপ্তাহব্যাপী এই নেইডক উদযাপন উপলক্ষে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী এবং প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চিত্র ও শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ, জাতীয় পতাকার সঙ্গে আদিবাসীদের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন, ফ্যাশন প্যারেড, বারবিকিউ লাঞ্চ এবং পোস্টার অঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ।

1st Published


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment