General Strike againt Human Rights
হরতাল বনাম নাগরিক অধিকার : হারুন রশীদ আজাদ (সিডনি থেকে )
২৯শে নভেম্বর বি এন পি তথা বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি দেশব্যাপী হরতাল আহবান করেছে।বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডাকা তা দেশবাসী ও আমরা প্রবাসীরা অবগত। হরতালের দিন কি দোকান পাট অফিস আদালত,রিক্মা,পরিবহন যান,রেল, বিমান এসব বন্ধ রাখা বাধ্যতামূলক?নাগরিকের কি সাংবিধানিক কোন অধিকার নেই ! নেই কি কোন স্বাধীনতা ? উন্নত দেশ গুলিতে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ করে সকল দলীয় মিছিল মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয় আইন শৃংত্থলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে। মিছিল মিটিং এর নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হয় আয়োজকদের। আর ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হলে পুলিশ বিকল্প পথ নির্দেশ করে জানিয়েছেন আয়োজকদের। এ সব কিছুই সম্পন্ন হয় কড়া পুলিশি ব্যারিকেডের অধীনে কারণ জনস্বার্থ সব স্বার্থের উপরে।
এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিবেচনায় আনা হয় নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। তাদের চলাচলের পূর্ণ স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে শান্তিপুর্ণাবস্থা রক্ষার সবধরনের ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।অস্ট্রেলিয়াতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়, তাই বলে নাগরিক জীবন অচল করে যানবাহন বন্ধকরে ধর্মঘট করার নজীর নেই ! ধর্মঘট মানেই বিনা পয়সায় ভ্রমণ।আর্থিকভাবে রাষ্ট্র তথা সরকারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। জনগণের তাতে কোনক্ষতি হয়না। উন্নতশীল দেশে কোন রাজনৈতিক দল উন্মাদ এমন কি রাজনৈতিক দেউলিয়া হলেও দেশ অচল করে দেওয়ার হরতাল ধর্মঘটের কর্মসূচি দিবেনা,কারণ ঐসব রাজনৈতিক কর্মসূচি দলের জনপ্রিয়তাকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতিকরে জনপ্রিয়তা অর্জন কখনো সম্ভব নয়। তবে অতীত ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই, পাকিস্তানি সামরিক স্বৈর শাসকদের অমানবিক আচরণ,নির্যাতন ও অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং করে জাতিয় ঐক্য সুসংহত করে হরতাল ধর্মঘট করে, আইনি শাসনের জন্য আন্দোলন করেছে।
আবার স্বাধীন বাংলাদেশ,দেশের প্রতিষ্ঠাতা সরকারের রাষ্ট্রপতিকে হত্যাকরে তার সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সকল কে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হরতাল ধর্মঘট করে অবৈধ শাসকদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির আন্দোলন গড়ে উঠেছে । আর সেই পথটি সৃষ্টি করেছে বর্তমান মহাজোটের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।তবে সেদিনের প্রেক্ষাপট আজকের প্রেক্ষাপট কি এক? দেশে এখন সংবিধানই একটি নির্বাচিত সরকার ৫ বছর মেয়াদে আধিষ্ঠ রয়েছে। বিরুধী দলগুলির এখন উচিত সরকারের অসাংবিধানিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া।অন্যদিকে সরকারের ভুল কাজগুলি ও তাদের বক্তব্য ও কাজকর্মকে জনগণের কাছে তুলে ধরা,যাতে আগামী নির্বাচনে তারা জয়ী হতেপারেন। সংসদ সদস্য হয়েও সংসদে না যাওয়া কি গণতান্ত্রিক চর্চা?সোনার চেয়ারটি জনগণ আমাকে দেয়নি বলেকি রুপার চেয়ারে বসবোনা? বিরুধীদলকি সংসদের অংশ না? রাজধানীতে ধংসলীলা ঘটিয়ে কি জনপ্রিয়তা অর্জন সম্ভব? গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, ও রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা কি সরকারের একা কাজ? জিয়া আর এরশাদিয় যুগের সাথে কি আজকের প্রেক্ষাপটের মিল আছে? সময় উপযোগী রাজনীতির চর্চা করলে বাংলাদেশে ধর্মঘট সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। প্রতিহত করতে হবে সকলে মিলে।
খালেদাজিয়া ও তার সমর্থকদের ধারনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাড়ীথেকে উচ্ছেদ করেছে !-শেখ হাসিনা কি বিচারপতি? দেশে এখন বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে।আদালতের নির্দেশ সরকার বিরোধীদল ও রাষ্ট্রের নাগরিকগণ শ্রদ্ধার সহিত মানতে বাধ্য। তাই উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে রাষ্ট্রের বেতন ভুক্ত কর্মচারীরা আদালতের হুকুম পালন করেছেন।কেঁদে মামলায় জিতার জাল বিছানো হলেও খালেদা জিয়া যে আদালতের নির্দেশ পালন করতেছিলেন ,তা চার দিন আগে থেকে মালা-মাল সরিয়ে নেওয়ার সংবাদ দেশের মানুষ পড়েছে।দেখেছে তার নিজের গাড়ীতে নিজ গাড়ীর চালকের সাথে দলীয় কার্যালয়ে উঠেছেন। এরপর ভাইয়ের বাড়ীতে বসবাস করে স্মৃতিবিজড়িত ইতিকথা লজ্জা আরও বাড়িয়ে তুলবে, কারণ আপনাকে আরও একটি বাড়ী দিয়েছে এরশাদ, বর্তমান সরকার বিরোধীদলীয় সরকারি বাস ভবন সু-সজ্জিত করে রেখেছে। জিয়ার মৃত্যু স্থল চ-গ্রাম সার্কিট হাউসের সরকারি সম্পত্তিটি আপনার সরকার জাদুঘরে রূপান্তর করেছেন । খালেদা জিয়া বলেছেন তিনি বাস্তুহারা সরকারি দলের এক আইনজীবী বলেছেন ৬৭ জন কর্মচারী ব্যবহার করে তিনি মোগল সম্রাঞ্চির মত জীবন যাপনকরে আসছিলেন।
আইন সাধারণ মানুষের জীবন বান্ধব, অত্যাচারীর জন্য নির্দয় ! তারপরেও সাধারণ মানুষ তাদের অনেক আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে খালেদাজিয়া একফোঁটা অশ্র²র বিনিময়ে রাষ্ট্র ও জনগণের আনুমানিক ১৫হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। সত্য কথা বলাতে,অতি কাছের এক সিনিয়র আইনজীবীও দলীয় নেতার কে তার প্রাথমিক পদ সহ শীর্ষ পদটিও কেড়ে নিয়েছেন ! ২৫শে নভেম্বর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে চলমান যান আহত করেছে,এই অভিযোগে সন্ত্রাসী ছাত্ররা দলীয় আন্দোলনকে আতংকিত করার মহড়া দিয়ে ২০টি গাড়ী ধংসকরেছে !
২৯ নভেম্বর উচ্চাদালতে রায় পুনর্বিবেচনার ফলাফলকে প্রভাবিত করার লক্ষে ৩০ নভেম্বর হরতাল আদালতকে হুমকি দেওয়ার সামিল বলে ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ নেতাদের দাবি । দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়িক সমিতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ হরতালের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। সর্বশেষ আলোচিত সংবাদ হল, বি এন পির সাংসদগণ সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ও প্রস্ততি স্বরূপ দলীয় নেত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ পত্র সাক্ষর করে বিরুধী নেত্রীর কাছে জমা দিতে শুরু করেছেন। সংবিধান বিশেষঞ্চ সুরঞ্জিত বাবু বলেছেন পদত্যাগে সংসদের কোন সংকট হবে না । অনেক সাধারণ লোকের ভাষ্য,যারা সংসদ সদস্য হয়ে ও সংসদে যাননা তারা পদত্যাগ করলে জনগণ আর খুশি হবে !কোন আসন শূন্য হলে,নির্বাচন কমিশন শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন দিয়ে সংবিধানের নির্দেশ পালন করবে।হরতাল যেমন রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার, তারচেয়ে বড় জনগণের স্বাধীন চলাচল ও মতামত প্রকাশের অধিকার।জনগণের সম্মতি ও সর্মথন নিয়ে ৫ বছর দেশ পরিচালনার সনদ ধারিকে, বিরোধীদলের অযাচিত হরতাল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে এটা গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারেনা। বিরোধীদলের উচিত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষাকরে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। সময়ের চাকা এখন অনেক উন্নত। জনগণের স্বাধীন চলাচল অধিকার সুরক্ষা করা, জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা রাজনৈতিক নয় সাংবিধানিক অধিকার তাই রাজনৈতিক দলের চেয়ে জন স্বার্থ রক্ষা করা,সেই সাথে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষাকরা সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্ব। সরকার নাগরিক স্বার্থে আইনের কার্যকর শক্তি প্রয়োগে ব্যর্থ হলে, সরকারের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তাই হরতাল দলের রাজনৈতিক অধিকার, আর জন স্বার্থ রক্ষাকরা সরকারের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।
PriyoAustralia.com.au