Bangladesh Caretaker System

Bangladesh Caretaker System

সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে (সমর্থনে) দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনঃ নতুন তত্ত্বাবধায় সরকার গঠনের একটি বিকল্প মডেল

ড. আবু তাহের মল্লিক

সারসংক্ষেপঃ

বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে (সমর্থনে) কিভাবে একটি দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সারকার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সরাসরি সংলাপ বা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই গঠন করা যায় তা এখানে উপস্থাপন করা হল। মূলত, এখানে একটি ভিন্নতর নির্বাচন পদ্ধতি বর্ণনা করা হল যাতে দলনিরপেক্ষ যোগ্য ব্যক্তিদের প্রার্থী তালিকা থেকে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির নিজ নিজ দলীয় পছন্দমত ব্যক্তিদের গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ আন্যান্য উপদেষ্টাদের নির্বাচন করে সকল দলের আস্থাভাজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কর যায়। এ নির্বাচনে সকল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই শুধু নির্বাচিত হবেন। সংলাপ বা আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল সমস্যাই এরূপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত, কিন্তু সকল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলসমূহ আন্তরিক হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হতেন এক্ষেত্রেও সন্দেহাতীতভাবে তারাই নির্বাচিত হবেন। এ নির্বাচনটি বিঙ্গান সম্মত এবং সহজে অনুষ্ঠানযোগ্য। সময় ও অর্থব্যয়ও যৎসামান্য। নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি বা যে কোন তৃতীয় পক্ষই এ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। কারচুপির সুযোগ নাই।

ভুমিকাঃ

সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের নির্দিষ্ট সময়শেষে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহন করবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহনের পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নিরপেক্ষভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আনুষ্ঠান করে নবনির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। গঠনবিধি অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হবেন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এবং তিনি তার পছন্দমত অনধিক দশজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবেন। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে না পাওয়া গেলে তার স্থলে যারা হবেন তারাও বিচারপতি অথবা সর্বশেষ বিকল্প হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যিনি স্বাভাবিকভাবেই কোন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন। গঠনতান্ত্রিক ত্রুটির জন্য সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সূপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাক এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছিল। সংসদে বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবসথা বাতিলের বিপক্ষে। সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটি আদালতের রায় অনুস্মরন করে ত্রুটিপূর্ণ পুরাতন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবসথা পূনর্বহালের সুপারিশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের একটি নতুন বিকল্প মডেল খুঁজছেন। বিরোধীদলসহ দেশের আন্যান্য শ্রেনী-পেশার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন বিকল্প মডেলের প্রস্তাব পেলে তা বিবেচান করবেন। এবং জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এমতাবসথায়, আমি বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের একটি সুনির্দিষ্ট মডেল/ পদ্ধতি উপস্থাপন করছি যাতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সরাসরি সংলাপ বা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই সকল (সরকারি ও বিরোধী) রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে/সমর্থনে একটি দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সারকার গঠন করা যায়।

উল্লেক্ষ্য, ২০০৬-এ তৎকালীন বিরোধীদলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ সকল দলের সমর্থনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রস্তাব করেছিল। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে গবেষনা করে ২০০৬/৭-এ আমি এ মডেলটি ডেভেলপ করি। মডেলটিতে একটি সুনির্দিষ্ট বৈঙ্গানিক পদ্ধতিতে উভয় রাজনৈতিক জোট/দলই যৌথভাবে নির্ধারণ করবে কারা তত্তাবধায়ক সরকারের সদস্য/উপদেষ্টা হবেন, কিন্তু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক জোটে/দলের মধ্যে কোন আলাপ-আলচনার প্রয়োজন হবে না। মডেলটির সংক্ষিপ্তাকারে নিন্মে বর্ণনা করা হল।

গবেষনা পেপার হিসসেবে মডেলটি একটি সেমিনারে প্রেসেন্ট (উপসথাপন) করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার/ যে কোন রাজনৈতিক দল চাইলে মডেলটি ব্যবহারের উপযুক্ততা পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। আমি যে কোন ফোরামে মডেলটি প্রেসেন্ট (উপসথাপন) ও ডেমনস্ট্রেট করে দেখাতে আগ্রহী।

সকল দলের অংশগ্রহনে (সমর্থনে )নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতি

মডেল গঠনে বিবেচ্য বিষয় সমুহঃ

পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও অন্যান্য উপদেষ্টা নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পূর্বের প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ কোন ভুমিকা ছিলনা। কোন সদস্যের প্রতি বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন না থাকলেও বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হত এবং পরে তার কাজের সমালোচনায় মূখর হত।

তারপর এমন একটি সুনির্দিষ্ট ও সঠিক প্রক্রিয়ায়/ পদ্ধতিতে উপদেষ্টাদের নির্বাচন করতে হবে যাতে সকল রাজনৈতিক দলের যৌথ সমর্থনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের নির্বাচন করা যায়। সকল দলের সমর্থন উপদেষ্টাদের দল নিরপেক্ষতা নিশ্চিৎ করবে। এবং সকল দলের সমর্থন পেলে উপদেষ্টাগন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দেশের স্বার্থে কাজ করতে উৎসাহ পাবেন।

প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সরাসরি সংলাপ বা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা নির্ভর হবেনা। কারণ, ইতিপূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের কোন সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে- নিজেদের মধ্যে সরাসরি সংলাপ অথবা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা উভয় ক্ষেত্রেই।

সুতরাং এমন একটি সুনির্দিষ্ট ও সঠিক প্রক্রিয়া/ পদ্ধতি আমাদের নির্ধারণ করতে হবে যাতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনে সকল (সরকারি ও বিরোধী) রাজনেতিক দল অংশগ্রহন করতে পারে, কিন্তু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে সে ব্যাপারে পরস্পরের সাথে আলোচনা করতে না হয়। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন, নির্বাচিত ব্যক্তির যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা, এবং এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি/উপদেষ্টা নির্বাচন রাজনেতিক দলগুলোই করবে কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার দরকার হবেনা।

নির্বাচনের স্বার্থে বাংলাদেশের রাজনেতিক দলগুলো সরকারি এবং বিরোধী দুটি জোট/দলে বিভক্ত। সুতরাং দুটি জোটের সমর্থন/ অংশগ্রহনকে সকল রাজনেতিক দলের সমর্থন/ অংশগ্রহন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল সর্ববৃহৎ সরকারি ও বিরোধী দলের সমর্থন/ অংশগ্রহনকেও এক্ষেত্রে একইভাবে সকল রাজনেতিক দলের সমর্থন/ অংশগ্রহন হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

দলনিরপেক্ষতাই এ মডেলের ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মাপকাঠি বলে বিবেচিত হবে। সধারণভাবে, দলনিরপেক্ষ তিনি যিনি কোন রাজনৈতিক দল অথবা তার অংগ সংগঠনের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত নন অথবা তাদের কাছ থেকে কোন প্রশ্নবোধক সুবিধা ভোগ করেননি। যেমন দলীয় প্রভাবে কোন বিশেষ পদ গ্রহন বা চাকুরীতে প্রমশনে বা অন্য কোন ক্ষেত্রে কোন বিশেষ সুবিধা ভোগ করেননি। ইত্যাদি ইত্যাদি যতদূর সম্ভব। অন্যান্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে, সংবিধানে বর্ণিত যোগ্যতা বা এ পর্যন্ত যারা উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন তাদের যোগ্যতাকে সাধারণভাবে মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পেশাগতভাবে বিচারপতি, শিক্ষক, আইনজীবি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যাংকার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যব্যসায়ী এবং উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন যে কোন সচেতন ও যোগ্য নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। রাজনীতিকরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।

প্রশ্ন হল সকল রাজনৈতিক দলের যৌথ সমর্থনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের নির্বাচন করা যাবে কিভাবে? এ মডেল অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বৈঙ্গানিক পদ্ধতিতে একটি বিশেষ নির্বাচনের মাধ্যমে।

সংক্ষেপে সম্পূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতিটি

প্রার্থী তালিকা/ প্যানেল তৈরীকরনঃ

প্রথমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য সকল দলনিরপেক্ষ ও ইচ্ছুক ব্যক্তিদের একটি প্রার্থী/ সদস্য তালিকা/প্যানেল তৈরী করতে হবে। যেমন অন্যান্য প্রচলিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থী তালিকা করা হয়। নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি বা যে কোন তৃতীয় পক্ষই এ তালিকা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। বিচারপতি, শিক্ষক, আইনজীবি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যাংকার, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যব্যসায়ী এবং উচ্চমূল্যবোধসম্পন্ন যে কোন সচেতন ও যোগ্য নাগরিককে প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। রাজনীতিকরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।

উপদেষ্টা নির্বাচনঃ

তালিকাভুক্ত যোগ্য ও দলনিরপেক্ষ সদস্যদের মধ্য থেকে প্রত্যেক রাজনৈতিক জোট (সরকারি ও বিরোধী) পৃথক পৃথক ভাবে নিজ নিজ জোটের (/দলের) পছন্দমত সদস্যদের গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যকে নির্বাচন করবে যাতে কমপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক (এক্ষেত্রে দশ-এগার জন) সদস্য পাওয়া যায় যারা উভয় জোটেরই ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ তারা সকল দলের কাছে গ্রহনযোগ্য নিরপেক্ষ ও যোগ্য সদস্য। এভাবে নির্বাচিত সদস্যরাই হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। কতজন (সমান সংখ্যক) সদস্যকে প্রত্যেক রাজনৈতিক জোট ভোট দিবে সে নির্দিষ্ট সংখ্যাটিই এ মডেলের প্রধান ক্রিটিক্যাল ফ্যাক্টর। এই নির্দিষ্ট সংখ্যাটি সঠিকভাবে নির্নয় করার জন্য একটি ম্যাথাম্যাটিক্যাল মডেল ডেভেলপ করা হয়েছে যার আলোচনা এখানে নিঃস্প্রয়োজন। এখানে এটুকু জানাই যথেসঠ যে মডেলটি নিশ্চিৎভাবে সকল রাজনৈতিক দলের (সরকারি ও বিরোধী উভয় দল/জোটের) সমর্থনপুষ্ট প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য/ উপদেষঠা নির্বাচন করতে সক্ষম।

এ নির্বাচনে যিনি/যারা সকল প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বা জোটসমূহের ভোট পাবেন তিনি/তারাই শুধু উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত হবেন। উদাহরনস্বরূপ, যিনি সরকারি দলের ভোট পাবেন কিন্তু বিরোধী দলের ভোট পাবেন না তিনি নির্বাচিত হবেন না। একইভাবে যিনি শুধু বিরোধী দলের ভোট পাবেন কিন্তু সরকারি দলের ভোট পাবেন না তিনিও নির্বাচিত হবেন না।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠনঃ

উভয় রাজনৈতিক জোটের (সরকারি ও বিরোধী দলের) ভোটে নির্বাচিত সদস্য/উপদেষ্টারা মিলে এবার প্রেফারেনসিয়াল ভোটিং পদ্ধতিতে প্রেফারেনস র‌্যাংকিং-এর মাধ্যমে তাদের (নির্বাচিত সদস্য/উপদেষ্টাদের) মধ্য থেকে একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবেন। প্রেফারেনস র‌্যাংকিং কিভাবে করা হবে তা মূল প্রবন্দে বর্ণনা করা হয়েছে।

এভাবে নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবার অবশীষ্ট নির্বাচিত উপদেষ্টা/সদস্যদের মধ্য থেকে প্রেফারেনস র‌্যাংক অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রোজনীয় সংখ্যক উপদেষ্টা/সদস্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবেন।

এভাবে সকল দলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি কার্যকর নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন গঠন করা সম্ভব। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলচনা ছাড়াই তা সম্ভব।

এক্ষেত্রে দেশের সর্বাপেক্ষা যোগ্য ও নিরপেক্ষ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হচ্ছে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমত সদস্য/উপদেষ্টা নির্বাচন করছেন যা তারা সংস্কার প্রস্তাবে দাবি করেছিলেন। সকল রাজনৈতিক দলের ভোট পেয়েই প্রত্যেক সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বা জোটের মধ্যে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন হচ্ছেনা।

বিদ্রঃ এ নির্বাচনটি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে নির্বাচন। প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচন নয়। কিভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রার্থী তালিকা করা যাবে এবং কিভাবে এ বিশেষ নির্বাচনটি অনুসঠান করা যাবে মূল প্রবন্দে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

——————————–

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সংসদ প্রতিনিধি (যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায়)

আমি মনে করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্দলীয় হওয়া বা®নীয়। কিন্তু সরকারি দল সংসদ সদস্যদের নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং বিরোধী দল এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে নীরব। ধরে নেয়া যায় মৌনতা সম্মতির লক্ষন। যা হোক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নির্বাচিত রাজনৈতিক সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব (যা সরকারি দল প্রস্তাব করেছে) রাখতে চাইলেও আমার মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কার্যকর করার স্বার্থে তা ৪০%-এর বেশী হওয়া উচিত নয়। সেখেত্রে সরকারি ও বিরোধী দল থেকে উক্ত ৪০% (= ৪ জন) সংসদ সদস্য মনোনয়ন নীতি/পদ্ধতি নিন্মরূপ হলে ভাল হবে বলে আমার বিশ্বাসঃ

১। সরকারি দল থেকে ২০% (= ২ জন) ও বিরোধী দল থেকে ২০% (= ২ জন) করে মোট ৪ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যাবেন। উল্লেক্ষ্য, সংসদীয় কমিটির কাছে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবে বিরোধী দলকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।

২। সরকারি ও বিরোধী দলের সভাপতি/ চেয়ার পারসন, সেকরেটারী/ মহাসচিব, মন্ত্রী (প্রাক্তন/ বর্তমান), উপমন্ত্রী (প্রাক্তন/ বর্তমান), প্রতিমন্ত্রী (প্রাক্তন/ বর্তমান)-দের কেহ উক্ত চারজনের মধ্যে থাকবেন না।

৩। উক্ত (২) নম্বর অনুসারে সরকারি দল তাদের ১০ (দশ) বা দশের অধিক সংসদ সদস্যের নামের একটি তালিকা বিরোধী দলের কাছে দিবে এবং বিরোধী দল উক্ত তালিকা থেকে ২ (দুই) জন সংসদ সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার জন্য সিলেক্ট (নির্বাচন) করবে। একইভাবে, উক্ত (২) নম্বর অনুসারে বিরোধী দল তাদের ১০ (দশ) বা দশের অধিক সংসদ সদস্যের নামের একটি তালিকা সরকারি দলের কাছে দিবে এবং সরকারি দল উক্ত তালিকা থেকে ২ (দুই) জন সংসদ সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার জন্য সিলেক্ট (নির্বাচন) করবে।

৪। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবশিষ্ট ৬০% (= ৬ জন) উপদেষ্টা নির্দলীয় হবেন এবং তারা সরকারি ও বিরোধী উভয় দল কর্তৃক উপরে প্রস্তাবিত নতুন নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন।

সংবিধান সম্মত করতে নির্বাচিত নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি বিদায়ি সংসদে পাস করে দেয়া যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাতে লাগামহীন না হয় তার জন্য ব্যর্থ (তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষঠানে ব্যর্থ) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙ্গে দিয়ে নতূন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষমতা সদ্য বিদায়ি সংসদের (সরকারি ও বিরোধী দলের) হাতে রাখা যেতে পারে। ।

বিস্তারিত বিবরন অনেক বড় বিধায় এখানে সম্পূর্ণ মডেলটি উপসথাপন করা সম্ভব হোলনা। আগ্রহী হলে নিন্মের ই-মেইল-এ যোগাযোগ করুন।

ড. আবু তাহের মল্লিক

Dr. Abu Taher Mollik

Email:abumollik@yahoo.com.au

The author is an academic in Banking & Finance, University of Canberra, AUSTRALIA.

2011/pdf/Caretaker_Sarkar_2_2011F1_771551389.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment