Bangla Article on Food by Almamun Ashrafi

Bangla Article on Food by Almamun Ashrafi

খাবারে বৈচিত্র, বাচ্চার স্বাস্থ্য ও সরকারের ভূমিকা – আলমামুন আশরাফী

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে কৃষি নির্ভরতা থেকে ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্টান ও ইন্ডাষ্ট্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষণীয় যে, বড় বড় পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে ছোট ছোট পরিবারে বিভক্তি হচ্ছে যেখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে কাজ করে সংসার দেখাশুনা করছে। এই আর্থসামাজিক পট পরিবর্তন মানুষকে যেমন স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী করছে, তেমনি ঠেলে দিচ্ছে ঘরের বাইরে সবাইকে; দুরত্ব বাড়ছে আপনজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে। ভালবাসার কুশল বিনিময় এখন টেলিটকে ও গ্রামিনফোনে সীমাবদ্ধ। এর ফলে সংসারের বাইরে সময় দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে; আনন্দ ভাগাভাগি হচ্ছে রেষ্টুরেন্টের টেবিলের চারিধারে। ফলে দৈনন্দিন রান্না-বান্নায় ভাটা পড়ছে শহর শুরু করে গ্রামে পর্যন্ত। ছেলেবেলায় দেখেছি, মানুষ সকালে পান্তাভাত খেয়ে কাজে যাইত। আর আজ গ্রামের মানুষও গরম ভাত/রুটি খেয়ে কাজে যাচ্ছে – সাব্বাস। পান্তাভাত এখন ঐতিহ্য; ১লা বৈশাখে সখের খাবার পান্তাভাত ও ইলিশ।

পরিবর্তনের এ ধারায় নূতন মাত্রা পেয়েছে নান রকমের খাবার বাইরে ও অন্ধরে। ইন্টারনেটে বসে রান্নার রেসিপি দেখে দেখে রান্না হচ্ছে আজ। রান্নার অতীত ঐতিহ্য নূতন জেনারেশনের কাছে আজ মরীচিকা, খাচ্ছে বাসি-পচা নূতন নামে ও স্বাদে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিজ্জা, স্যান্ডউইচ, চাইনিজ, বটিকাবাব, তেহারী, ম্যাগডোনান্ড, ফ্রাইড চিকেন, ইত্যাদি। এই খাবারের ধারা দেশে শুরু ১৯৯৫ সালের দিক যখন ম্যাগডোনান্ডের রমরমা বিজনেস সারা পৃথিবীতে। পাউরুটির মাঝে ১পিচ মাংস/মাছ মুড়িয়ে দিলে নাম হয় ফাস্টফুড। এর বড় পরিচিত নাম হল সান্ডউইচ বা বার্গার, সাথে আলুর স্টিক/চিপ্স। এরপর থেকে ফাস্টফুড খাবারের দোকানীদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মুহুর্তের মধ্যে ইন্ডাষ্ট্রি বড় হতে থাকে, জন্ম নেয় ম্যাগডোনান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রাইডচিকেন কোম্পানি, ট্যাকো বেল, ইত্যাদি। ইয়ং জেনারেশনের প্রায় ৬০% শুধু এ ফাস্টফুড খাবারের উপর নির্ভরশীল। এ হাওয়া শুধু বিদেশে নয়, আমাদের দেশেও গরম। ২০০৬ সালের মধ্যেই দেশের ফাস্টফুড ইন্ডাষ্ট্রি ১ হাজার কোটি টাকার ইন্ডাষ্ট্রিতে পরিণত হয়েছে (ঢাকার ফাস্টফুড ক্যালচার, দি ডেইলি স্টার, ২২ জানুয়ারী ২০১১, তিথি ফারহানা)। উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট ২০০৬ সালে ফাস্টফুডে উন্নতি করেছে ৫% যার অর্থের পরিমান দাঁড়ায় ১০২ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার ফাস্টফুড মার্কেটের রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা পৃথিবী যখন অর্থনৈতিক মেল্টডাইনে নিমজ্জিত তখন ফাস্টফুড ইন্ডাষ্ট্রি একাই ১৭০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে ২০১০ সালে (http://www.bukisa.com)। আমাদের দেশের দিকে তাকালেও দেখা যাচ্ছে যে, ফাস্টফুডের খাবারের প্রতি মানুষের ঝোক বেড়েছে হাজারগুন, বন্ধ হতে চলেছে চিরচেনা সব খাবারের দোকান। তাই শহরের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের সাতার মত গজিয়ে উঠেছে ফাস্টফুড খাবার দোকান।

এখন কথা হল, ঢাকার ফাস্টফুডের দোকানে আমরা খাচ্ছি কি! কোন ধরনের ফাস্টফুডে আমরা ও আমাদের বাচ্চারা অভ্যস্ত হচ্ছি! যদি নিউ মার্কেটের ফাস্টফুডের কথা বলি তবে এখানে দেখা যাবে যে, স্যান্ডুইচের ছড়াছড়ি, সাথে কিছু আলুর মরা চিপস। সত্য বলতে কি, এগুলোকে স্যান্ডউইচ না বলাই ভাল কারণ ওভেনে গরম করে যা পরিবেশন করে তা সত্যিই জঘন্য। কবে কখন এগুলো বানানো হয়েছে তার কোন হদিস নেই, নেই কোন প্রমান। যদিও মাঝে মধ্যে তেলাপোকা ও পিপড়ার আনাগুনা চোখে পড়ে। তিথি ফারহানার কথায়, ‘Public Health – Even though small food shops are available in every street, alley and almost every shopping center in Dhaka and other cities, NO AUTHORITY IS RESPONSIBLE to check the quality and standard of foods for the sake of public health’. পাবলিক হেলথ নিয়ে কারো কোন ম্যাথাবেথা নেই, নেই কোন মহলের নজরদারী। উদাহরণস্বরূপ, এখানে যে তেল ব্যবহার করা হয় তার গুনাগুন অত্যন্ত নাজুক। কারন তেলের গুনাগুন শেষ হবার পরও অন্ততঃ ১০/২০ বার ব্যবহার করা হয়। ফলে এখান থেকে জন্ম নিচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুকি ও হাইজেনিক সমস্যা। যদি বড়লোকের বসুন্ধারায় যায়, তবে এ অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। মুশকিল হল, আমাদের দেশের ফাস্তফুড ক্যালচার অবস্থা বিচার করলে এখন ফাস্টফুডের সংজ্ঞা পরিমার্জন বাঞ্ছনীয়। যাই হোক, এগুলো আমরা হরহামেশা খাচ্ছি এবং নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছি। সবচেয়ে বড় ঝুকিতে আছে আমাদের বাচ্চারা কারণ এগুলো তারা হরহামেশা খাচ্ছে এবং নানারকম জঠিল সমস্যায় ভুগছে যেমন মুটিয়ে যাওয়া, কিডনি সমস্যা, অল্প বয়সে ব্লাডপ্রেসার, চোখে কম দেখা, নানারকম স্কিন সমস্যা, জঠিল সব ছুয়াছে রোগ, ইত্যাদি।

এগুলো নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই, যে যার মত পারছে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। কোন পত্রপত্রিকা এগুলো নিয়ে লিখে না, মিডিয়া তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না আজোব্ধি। ডাক্তারতো টাকা কামানোয় ব্যস্ত, বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে ভাব্বার সময় কোথায়! ফলে খবরের কাগজে বাচ্চার কথা নেই, মিডিয়ায় বাচ্চার উপস্থিতি নেই, সরকারের বাৎসরিক এজেন্ডায় বাচ্চার কথা উল্লেখ নেই, তাহলে এরা আছে কোথায়? কেউ যখন এগুলো নিয়ে ভাবছে না, তখন বাচ্চাদের কান্ডারী কে বাবা-মায়ের বাইরে? উল্লেখ্য, বিদেশে কোন বাচ্চা জন্ম নেবার সাথে সাথে বলা হয় এটা স্টেট প্রপার্টি। বাবা-মার সাথে সাথে সরকার রীতিমত বাচ্চাদের দেখাশুনা ও খোজ-খবর রাখে। এর জন্য আলাদা ডিপার্ট্মেন্ট আছে যার দায়িত্বই স্টেট বাচ্চাদের দেখভাল। অথচ আমাদের দেশে শিশু বিভাগ নেই। সর্বসাকুল্যে একটা শিশু নিকেতন ছিল যা নোংরা পলিটিক্সের কারণে ধ্বংস করা হল। বিটিভি’র ফুলকুড়ি অনুষ্টান অনেক আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই এ নিয়ে নূতন কোন রূপরেখা আমরা আজো দেখতে পাচ্ছি না ডিজিটাল সরকারের আমলে। এ অবস্থায় বাচ্চাদের সাপ্তাহিক বিনোদনের কোন জায়গা আছে কি শহরে বা গ্রামে? রমনা বটমূল, সরওয়ারদী উদ্যান এখন নেশাখোরদের আড্ডার আস্থানা, রাতে এখানে দু’পায়ে ঘরু চলে। উপরন্ত, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে এগুলোর দখল নিয়ে রীতিমত মরা গরুর মত শিয়াল-কুকুরে টানাটানি করে। এক চিলতি জায়গা নেই, বিশেষ করে ঢাকাতে, যেখানে দু’দন্ড বাচ্চাগুলো খেলা করতে পারে। বিকালে বাচ্চাগুলো ঘরের বারান্দায় বসে থাকে বিড়ালের বাচ্চার মত গ্রিলের ফাক দিয়ে মুখ বের করে খেলার বদলে। দেখলে বড় কষ্ট হয়, কত অসহায় আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম!

ভেজালের জালে আটকে আজ মানুষ প্রানে বেচে থেকেও বুঝে উঠতে পারছে না বেচে আছি নাকি মরে গেছি (মরিনি, তার মানে কি বেচে আছি! আফজাল হোসেন)। বাচ্চাদের অবস্থা আরো নাজুক। ফরমালিন পেশানো সবজি ও মাছ, সয়াবিন তেল মেশানো দুধ, ইটপাথরের সুরকিতে উন্নত মসলা, ইত্যাদি ভেজালে আজ বাজার সয়লাব। কোথাও কোন ভরসা নেই যেখান থেকে নির্ভেজাল খাদ্য কিনতে পাওয়া যায়, সাথে ফাস্টফুড ক্যালচার। উন্নত দেশের প্রায় ৪০% মানুষ বাইরে খায় বা বাইরের খাবারের উপর নির্র্ভরশীল। বাচ্চারা তৈরী খাবার দেখলেই বায়না ধরবে এটাই স্বাভাবিক। বাবা-মা বাধ্য হয়ে কিনে দেয়, পেট ভরায় অজানা/অচেনা খাবারে। যখন ফরমালিন আর ভেজালে ভঁরা বাচ্চার খাবার আজ মেন আইটেম বাজারে, তখন ফাস্টফুড খাবারে কি থাকছে জনগণের জানা দরকার। অন্যথায় ভবিষ্যত বাচ্চারা মাতৃগর্ভেই জন্ম নেবে বিকলঙ্গ হয়ে। এখন থেকে তদারকি না করলে ভবিষ্যত আরো ভয়াবহ, বিশেষ করে ঢাকা’সহ দেশের বড় শরগুলোতে। সরকার যথাযথভাবে এর তদারকি করে অন্ততঃ ফাস্টফুড খাবারের বেলায় নিন্মলিখিত পদক্ষেপগুলো (বাধ্যতামূলক) নিতে পারেঃ

১। প্রত্যেকটা রেডীমেট/ফাস্টফুড খাবারের গুনাগুন পরিষ্কার করে লিখে রাখা (যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, বলবৃদ্ধি সহায়ক, ভেষজ, ইত্যাদি বিএসটিআই অনুমোদিত সীলসহ),
২। খাবারে কি পরিমান কোন কোন উপাদান আছে তা লিখা (যেমন কোলেষ্টেরল, লবণ, ক্যালরি, ইত্যাদি),
৩। খাবারের এক্সপায়ার ডেট লিখে রাখা (ডেডলি নেসেসারি), ও
৪। বাসায় খাবার রাখার ব্যবস্থাপত্র (যেমন ফ্রিজে রাখতে হবে বা খোলামেলা পরিবেশে রাখতে হবে)।

যদি এগুলো পরিস্কারভাবে ফাস্টফুড/রেডিমেট খাবার মেনুতে লিখে রাখা যায়, তবে কিছুটা হলেও রক্ষাপাবে আমাদের ভবিষ্যত বংশধ্বর। বিএসটিএ এগুলো নিয়ে আদেও ভাবে কিনা আমার জানা নেই। তবে একটা বিষয় আমি পরিষ্কার জানি যে, “চোখ বন্ধ করলে প্রলয় থামে না”। সুতরাং এ বিপদ থেকে কেউ রেহাই পাবে না কারণ শিশু সবার ঘরেই আছে এবং থাকবে ভবিষ্যতেও।

গভেষক ও শিক্ষক। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১১

2011/pdf/food_716415118.pdf ( B) 


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment