Cake cutting for Birthday

Cake cutting for Birthday

জম্মদিনের কেক কাটা -ড. ফরিদ আহমেদ
বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার ৬৬ পাঊন্ড ওজনের কেক কেটে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে জম্মদিন পালন করলেন। আর এভাবেই তিনি কি জাতির জনকের হত্যার দায় স্বীকার করে নিলেন? এ কেমন বিভৎস রাজনীতি! আমরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি এই দলটিকে ও দলের নেতৃবৃন্দকে যে আমরা তাদের কাছে ন্যায় বিচার পাব যদি তাঁরা আবার কখনও ক্ষমতায় আসেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনগণের জন্য যতটুকু করেছিল তাতে তাঁদের ইমেজ বেড়েছিল। কারণ দলটি আর জিয়াউর রহমানের সামরিক ফরমানের দল ছিল না। দলটি ১৯৮২ থেকে ১৯৯১ নয় বছর রাজপথে সংগ্রাম করে সামরিক সৈরাশাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আমাদের ধারণা হয়েছিল বেগম জিয়া জিয়াউর রহমান থেকে আলাদা ব্যক্তিত্ব।

আমরা অনেক আশাবাদী হয়েছিলাম যখন তিনি ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নিলেন। হয়তো রাজনীতিতে সত্যিকার্থে একটি গুণগত পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম তারা সংসদে আসবে, সরকারকে সু পরামর্শ দেবে। সরকারকে সঠিক পথে চলতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমাদের সকল আশা কেবল তিমিরেই রয়ে গেছে। দেশ টা বুঝি আর ভাল হবে না।

আমাদের শহরে প্রতিদিন যানজট। আমরা কি আশা করতে পারিনা সরকারী দল ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করবেন? যদি তারা এভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে কি আমরা জনগণ তাদেরকে শ্রদ্ধার আসনে বসাবো না?

আজ বিদ্যুতের দাবিতে মানুষ হাহাকার করছে। আমরা কি দুই দলের নেতাকর্মীদের কি আমাদের পাশে দেখতে পারি না? তারা পাড়ায় পাড়ায় দল বেঁধে মনিটর করবে কোন বাড়িতে নিয়ম ভঙ্গ করে এসি চালাচ্ছে। কারা অপরাধ করছে। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যদি হয় জনসেবা তাহলে এগুলি কি জন সেবা নয়?

বেগম জিয়া ৬৬ পাউন্ড কেক না কেটে তিনি দরিদ্র এতিম শিশুদের সঙ্গে নিজের জম্মদিন পালন করতে পারতেন। আজ নিজের ছেলেরা দেশে নেই। তাই এতিমদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে খবরের কাগজে স্থান করে নিতে পারতেন। অথবা তিনি ছুটে যেতে পারতেন একটি ফুলের তোড়া নিয়ে বনানী গোরস্থানে। প্রতিষ্ঠিত হতো জাতীয় ঐক্য। আগামী ২০১৪ নির্বাচনে হয়তো বিএনপি বিজয়ী দল হতে পারতো!
বেগম জিয়া আজ আবার নিজে ঠিকানা করে নিলেন পাকিস্তান-রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী-খুনীদের কাতারে। আপনিতো তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনার স্বামী দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তবে কেন আবার ক্ষমতার জন্য বারবার খুনী-যুদ্ধাপরাধীদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন। জনগণের প্রতি কি আপনার কোন আস্থা নেই?

বিগত কয়েকদিনের সংবাদপত্র অনেকগুলো দু:সংবাদ নিয়ে এসেছে। বিদ্যুতের দাবিতে মিছিল, যানজট, দ্রব্যমূল্য, যানজট নিরসনে স্কুল কলেজ বন্দ, এমপির পিস্তলের গুলিতে কর্মী নিহত, সার্জেন্টের আত্মহত্যা, শিক্ষকে হত্যা, সড়ক দু:ঘটনায় সচিবদ্বয় নিহত, জামাতের সকালবেলার সমাবেশ, ভিসিদের গানম্যান, প্রভৃতি। আমরা এমনি দু:সময় বেগম জিয়ার কেক কাটার সংবাদে মর্মাহত। আপনাদের প্রতি কোন শ্রদ্ধাই আমাদের অবশিষ্ট রইলো না বুঝি! আপনার কেক কাটা কেক কাটা নয় বঙ্গবন্ধুর গলায় ছুরি চালানো! জাতির জনকের হত্যার দায় স্বীকার করে নেওয়া! যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া। ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে নেওয়া! আপনি যদি বুঝতে তাহলে ঐ ফাঁদে পা দিতেন না। আপনি কেবল আপনার সন্তানদেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিলেন না সমগ্র জাতির অগ্রযাত্রায় অন্ধকার ছড়িয়ে দিলেন।

নাকে খত নয়, যেমনটি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনককে শ্রদ্ধা করেই আবার রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে আপনাকে। তারেক রহমানকে ফিরে আসতে হবে শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে নিয়ে। এর বাইরে আর কোন সমাধান নেই। এ প্রজম্ম জাতির জনকের অবদানে গৌরাবান্বিত। সেই গৌরবের অংশীদার না হয়ে একাবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ক্ষমতার স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই রয়ে যাবে বলে আমার আস্থা।

লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment