স্বপ্ন ও বাস্তবতা!! কোন মডেল কাম্য?

স্বপ্ন ও বাস্তবতা!! কোন মডেল কাম্য?

অতিসম্রতি বাচ্চাদের নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম “গেমস সফটস ও ভবিষ্যত প্রজন্ম”। ধন্যবাদ প্রিয়অষ্ট্রেলিয়া’কে তা প্রকাশ করার জন্য। মাঝে মধ্যেই মনের মাযে উকি-ঝুকি দেয় কিছু একটা লিখি অবসরে। কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়না। আবার ভাল লেখা উপহার দিতে পারবো কিনা সে সংশয়তো আছেই! তবে এসব আত্ন-অবিশ্বাস থেকে মধ্যম-গোচের চিন্তাবিদদেরকেই বেরিয়ে আসতে হবে কারণ বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার কাযে রাঘব-বোয়ালরা ধরাশায়ী (কারণ সবার লেজ এক সুতায় বাধা – সাত রসুনের এক কুয়া)। উন্নত বিশ্বের মানুষ কিন্তু যা মনে আসে তাই বলে বা করে ফেলে কোন রকম রাখঢাক বা কাচুমাচু না করে (বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতিফলন)। পাচে লোকে কিছু বলে ফিলোছফি এ্যাবছুলিটলি অগ্রাহ্য। এসব বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় গড়ে তোলা দরকার আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে। কারণ আমাদের নানা রকম সমস্যা ঘরে ও বাইরে। দেশের দিকে তাকালেতো মনে হয় শ্বশান – কোথায় আছি আর কোথায় যাচ্ছি পাত্তা নেহি! কারণ দেশ নিয়ে খেলতেছে আমাদের রাজনৈতিক খেলোয়াড়’রা সেই জন্মলগ্ন থেকে। এখানে একটা গানের কলি মনে পড়ছে রবী ঠাকুরেরঃ ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা; তোমাতেই বিশ্বমায়ের আচল পাতা, ও আমার দেশের মাটি –। আজ এ কথা মিথ্যা প্রমাণ করেছে আমাদের রাজনৈতিক খেলোয়াড়’রা। আমার মনে হয় এর বর্তমান পেক্ষাপট অনেকটা এরকমঃ ও আমার দেশের মাটি তোমায় ঠকায় নেতার মজা। আমরা মিলেছি মোর নেতার সনে – তোমায় হারায়েছি নেতার মোহে; তোমাকেই জ্বালাও পুড়াও আর্তি মোদের নেতার স্লোগান, ও আমার দেশের মাটি — ।

এ থেকে পরিত্রাণের অভয় বাণী কে শুনাবে আমাদের! কে দেখাবে আশার আলো? কে ভরসা দেবে জাতিকে? কারণ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড ভেংগে হাতে ধরায়ে দিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন মানেই মারামারি, কাটাকাটি, ফাটাফাটি – এটাই এখন শিক্ষার মূলমন্ত্র (দু’একটা এক্যসেপশন ছাড়া)। সুশিক্ষায় দামাল ছেলেরা দিক্ষিত হোক আর না হোক তাতে যাই আসেনা কারণ ওদের দেখভালের গুরুদায়িত্ব নিয়েছে বিএনপি, আমেলিগ ও জামাত। কোপাকোপি, রগকাটাকাটি ও লাঠালাঠির জন্য শিক্ষাংগন ইজারা দিয়েছে আমাদের লেজনীতিবিদরা (আমাদের রাজনীতিবিদরা কি পলিটিশিয়ান?)। এর উপর হরহামেশা শিক্ষা ব্যবসহা পরিবর্তন হচ্ছে দেশে গঠনমূলক কোন নীতিমালা ছাড়া। কোটি-কোটি টাকা পুড়িয়ে, জেটে চড়ে আমলারা ঘুরে আসেন বিশ্বকোষ শিক্ষায় আলো দিতে। আর ফিরে এসে ধরায়ে দেয় কাচকলা। এতে উনাদের কিন্তু কিছু যাই আসেনা কারণ ওনাদের বাচ্চারা কেউ দেশে পড়ে না। (আমি বুঝিনা কেরানিগিরি করে ২/৩টা বাচ্চাকে বিদেশে পড়াই কিভাবে! কত টাকা জোচ্চুরি করে এক টেবিলে বসে?)। ফলে আমরা জানি না কাল আমাদের বাচ্চারা কোন কারিকুলামে পড়বে! বহু রংধারী আমলাদের এই দাপট আর আনাংলা লেজনীতিবিদরা কারিকুলামের মাথায় সিদুর পরায়ে নেংটা করে ঘুরায়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের ললাটের উপর। কারণ ভবিষ্যতের দেখভালের দায়িত্ব জাতিতো উনাদেরকেই দিয়েছেন ম্যান্ডেটের মাধ্যমে। তো এ যখন অবসহ্যা ভবিষ্যত প্রজন্ম ঘুরে দাঁড়াবে কিভাবে? কোথায়? কোন ভিত্তির উপর আমরা দাড়াবো? কাদা-বালি-চুন-সুড়কি সব মিশে যে একাকার হয়ে গেছে! এই হাইব্রিড ফাউন্ডেশনের উপর জন্ম নেবে যে প্রজন্ম তারা কি শিখবে? কি হবে তাদের সত্যিকারের পরিচয়?

আজকাল্কার জেনারেশন মোটিভেট করা খুব দুঃসাধ্য। কারণ ওদের সামনে কোন মডেল নেই – ফলো করার মতো কোন মানুষ বা নীতি ওরা চৌহদ্দীতে দেখতে পায় না। তার উপর টেকনোলজির নির্যাতন বাচ্চাদের মরার উপর খাড়ার ঘা। জন্মের পর থেকে বাচ্চারা লেগে থাকে বনেদী গেমস নিয়ে – পার করে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে গেমস খেল্লে মাসে ৫~৬ দিন ব্যয় হয় গেমসে; বছরে ২~৩ মাস। ১ বছরের ১/৪ ভাগ শুধু গেমস খেলায়। ফলে বাচ্চাদের বাস্ববের থেকে অবাস্ববে গোচারণ বেশী, বিশেষ করে শৈশবে ও কৈশরে যখন মানুষের মধ্যে মরালিটি গ্রো করে। ফলে ছেলে-মেয়েরদের মরালিটির Exposure হলো আনরিয়েল চরিত্র বাস্ববে রুপ দিতে – গেমসের ভাষা ও কোপাকুপি-কাটাকাটির সংস্কৃতি। ওরা স্বপ্ন দেখে নাড়ুতো হবার, বেকাগন ও ড্রাগন হবার; রাম’দা-পিছতল চালানোর ষ্টাইল নকলে। আজকাল্কার বাচ্চাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি হতে চাও বা তোমার হবি কি? সোজা-সাপ্টা উত্তর নাড়ুতো, কাকাহাসি, গোকু, ইত্যাদি। বাবা-মা থ’মেরে যান এটা কোন যান, কিসের উদ্রেক সোনামনির! এ নিয়ে প্রতিবেশীর/বন্ধু-বান্ধবের সাথে আলাপ-আলোচনায় ফল শুন্য কারণ বিষবাষ্প গিলেছে পুরা প্রজন্মকে। অবাক ব্যাপার হলো বাচ্চাদের মাঝে এখন এগুলো নিয়েই তর্কবিতর্ক হয়, নিত্যদিনের হবি। দুংখের বিষয় হলো এগুলো সবই কল্পিত চরিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (নোবেল জয়ী সাহিত্যিক), কাজী নজরুল ইসলাম (বিদ্রোহী কবি), জগদিস চন্দ্র বসু (বিজ্ঞানি), মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (সাহিত্য বিশারত), সত্যেন বোস (বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানি), ব্রোজেন দাস (সাতারু), প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (কেমিষ্ট ও ফার্মাসিষ্ট), নিয়াজ মোর্শেদ (গ্রান্ড মাষ্টার), ইত্যাদি মডেল এখন সেকেল – পড়ে আছে অরক্ষিত অবসহায় যাদুঘরে; ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। ক্লাসে এগুলো পড়ানো হয় না। এখন লেটেষ্ট ফিলোছপি হলো শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ইতিহাস; সাথে বিকৃত মুক্তিযুদ্ধের ফলোআপ – ক্লাস ওয়ান থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মিডিয়ামে ইতিহাসের ও সাহিত্যের ভিত।

এখানে একটা নাটকের গল্প মনে পড়ছে – দু’জন শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে। একজন শিক্ষকের অভিমত হলো বাচ্চাদের ক্লাসে ইতিহাস ও সাহিত্য পড়াতে হবে ইংরেজী ও হালফ্যাশান ক্যালচারের সাথে-সাথে কারণ আজকাল্কার বাচ্চারা ইভেন জানে না যে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলো; হালে প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুছ অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। অন্যজনের উক্তি, এসব পড়িয়ে কি হবে! এগুলোতো নিত্যন্তই সেকেলে, তাছাড়া এগুলো পড়ে না পাবে চাকুরী, না অভ্যস্ত হবে মডার্ণ ক্যালচারে। একেবারে আমাদের সমাজের কোরের রিফ্লেকশনস নাটকে। এই হলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বাস্তবতা ও সমাজের মডেল। এ যদি হয় আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা তখন পরবর্তী জেনারেশনের উপায় কি? ভাবছেন কিছু, বাস্তবতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের জেনারেশন কোন রেশন খাচ্ছে? কোন মডেল আমাদের জেনারেশন ফলো করে মানুষ হবে ভবিষ্যতে?

৩০ জুলাই ২০১০ || ব্রোখহেভেন ল্যাব


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment