মুর্শিদাবাদ থেকে মুজিবনগর: জিয়া থেকে শাহজালাল

মুর্শিদাবাদ থেকে মুজিবনগর: জিয়া থেকে শাহজালাল

দিন বদলে এক স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি লড়াই করছে পলাশীর সেই রক্তান্ত প্রান্তর থেকে। সেই স্বপ্ন পূরন করতে আমাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে বৃটিশ উপনিবেশ ও পাকিস্তানী সৈরাশাসনের বিরুদ্ধে। এরপর এল ৭১। বাঙালিকে দাবায় রাখতে পারবা না বলে হুশিয়ার উচ্চারণ করলেন বঙ্গবন্ধু। আমরা যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হলাম। এবার বাঙ্গালি সফল হল। ২৫শে মার্চ কালোরাতে হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো। নতুন সরকার গঠিত হলো ১৭ এপ্রিল ১৯৭১। মুজিবনগর নামে অভিহিত হল বাংলাদেশের রাজধানী। আজ আবার দিনটি ফিরে এসেছে বাঙালির জীবনে। তবে আজ নেই আমাদের সেই্ বাঙালির ঐশর্য মুজিব, বীর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলামসহ অনেক মহামানব। আজ সেই মহান মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায়। আজ এই সরকারকে ঘিরে অনেক আশা। কারণ এ দলটিকে একবার ২১ বছর ও আরেকবার ৭ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে। জনগণের বিপুল প্রত্যাশা। আজ হয়তো সময় হয়নি মূল্যায়ন করবার, তবে এতটুকু বলতে পারি পরিকল্পনা করতেই যদি ১৪ মাস চলে যায় তবে কিভাবে বাস্তবায়িত হবে দিন বদলের স্বপ্ন?

জিয়া থেকে শাহজালাল বা পিজি থেকে বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল হলেই দাবী করা যাবে আমরা কিছু করতে পেরেছি? আজ আমরা মহামহা সব পরিকল্পনার কথা শুনছি। বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর হবে, গভীর সমুদ্রবন্দর হবে, উড়াল মহাসড়ক আর পাতাল রেল হবে, পদ্মায় কেবল একটি নয় দুটি সেতু হবে। বিদ্যুত আর মিসকলে মত নয় ব্রডব্যান্ড কানেকশনের মত সার্বক্ষণিক থাকবে ইত্যাদি।

আমার প্রশ্ন: একটি নতুন লক্ষ কোটি টাকার বিমানবন্দর আমাদের কতটা জরুরী? লন্ডনের হিথ্রো যদি এত ব্যাপক চাহিদা পূরণ করতে পারে তবে শাহজালাল বিমানবন্দর পারবেনা কেন? নতুন বিমানবন্দর হলে কি আর যমুনা ফিঊচার পার্ক ভাঙ্গতে হবে না, ডিওএইচএস, নিকুজ্ঞ, আশুলিয়ায় আরোও নগরায়ন সম্ভব হবে? এর পরিনাম কি কখনও ভাবা হয়েছে?

আজ আমাদের খাদ্য নিরাপওায় গোয়েন্দাগিরি করতে যুক্তরাষ্ট্র আসতে চায়? কি ভাবছেন আপনারা? কিছুদিন আগে মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাইতে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম বিনিয়োগবোর্ড চেয়ারম্যান ড. সামাদ স্যারের সঙ্গে। ওনাকে বলেছিলাম স্যার যে বিমানবন্দর অন্ধকারে থাকে, যে বানিজ্যনগরীতে যেতে ২ ঘন্টা যানজটে পড়তে হয়, যেখানে লালফিতার দৌরত্ব এত প্রকট সেখানে আপনার সার্থকতা কিভাবে আসবে। আগে যা আছে তাকে মানসম্মত করতে হবে এর পর নতুন সন্তানের প্রত্যাশা করাই কি বাস্তবসম্মত নয়? আমরা গ্রামের অশিক্ষিত মানুষকে ছবক দেই বছরে বছরে পোলাপান জম্ম দেওয়ার জন্য। আরোও কঠিন হয়ে বলি বাঘের বাচ্চা একটি হয়। আর আমরা আরেকটি বিমানবন্দরের স্বপ্ন দেখছি বর্তমানটিকেই মানসম্মত না করে।

নতুন কিছু ভাববার আগে আমাদেরকে বর্তমানকে সুন্দর করতে হবে। সরকারের মন্ত্রীরা মোড়ক উম্মচনে ব্যস্তবেশী। বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই, পানি নেই, বাজারে ব্যবসায়ীদের কারসাজি শহরের এইসব সমস্যার পাশাপাশি গ্রামের মানুষের কথাও ভাবতে হবে। কিছুদিন আগে মাননীয় রাষ্ট্রপতি বলেছেন আমাদের শিক্ষার মান কমছে। আমার আশা ছিল দিন বদলে জন্য দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগতমানের জন্য সরকারী আনুকুল্য পাওয়ার সংগ্রামে নামবে। কিন্তু সেখানে ক্রমশ হতাশা বাড়ছে।

নতুন ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তবে তারা আদেও গ্রামে যাবেন কিনা সন্দেহ। কারণ হিসেবে তারা বলবেন গ্রামেতো পানি বিদ্যুত, গ্যাস নেই। আমাদের পথ খুঁজতে হবে যাতে এমন সংকট না হয়। আজ বেগম জিয়ার দলও বলছেন তৃণমূল পর্যায়ের কথা শুনতে হবে। আমার প্রশ্ন: আমরা কেন বলতে পারছিনা যে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা হবে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নতি। ৫০ হাজারকোটি টাকার বিমানবন্দর গিয়ে দাড়াবে ২ লক্ষ কোটিতে। দেশের ১৩ কোটি মানুষ গ্রামে থাকে। তাদের কাছে ডাক্তার, শিক্ষক, নার্স, সার, ঔষধ প্রভৃতি পাঠাতে হলে প্রয়োজন: উন্নত যোগাযোগ। সেজন্য অবশ্যই সেতু-রাস্তা নির্মান প্রয়োজন। সেখানে যাতে বিদ্যুত থাকে সেজন্য প্রতিটি কম্যুনিটি ক্লিনিকে একটি করে জেনোরেটার দিতে হবে। অবিলম্বে জ্বালানী সমস্যা মেটাতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। তেল-গ্যাস জ্বালানী কমিটির ভয়ে বসে থাকলে চলবে না। প্রয়োজন অনুযায়ী ঐ কয়লা তুলতে হবে। যাতে ১০০ বছর আমরা চলতে পারি।

আজ রাস্তায় নতুন নতুন গাড়ি নামছে কিন্তু ১০০ বিআরটিসি বাসের কথা শুনছি সেই একবছর ধরে। একবছরে কি ১০০ বাস তৈরী করতে লাগে? যানজট কমাতে প্রাইভেট গাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ভাল বাস সার্ভিসের প্রয়োজন।

কেবল গ্রামে গ্রামে ভিজিএফ কার্ড দিলেই চলবে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উন্নতমানের খাবারও দিতে হবে। বিদ্যা চর্চার জন্য কেমন পুষ্টি দরকার তা সবাই জেনেও আমরা তেলাপোকার সাতারকাটা ডাল আর মোটা ইরির ভাত খাইয়ে উচ্চতর কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

প্রথমে প্রতিটি বিভাগে স্কয়ার, ইঊনাইটেড বা ্এ্যাপোলর র মত একটি হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে প্রতিটি জেলাতে তা গড়তে হবে। প্রতিটি জেলায় দ্রুত সর্বাধুনিক মানের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় চালু করতে হবে যাতে একজন শাসক, চিকিৎসক বা একজন বিনিয়োগকারী ব্যাবসায়ী বা রাজনীতিবিদ তাঁদের সন্তানদেরকে নিয়ে অহেতুক চিন্তা না করতে হয়। আমরা সবাই সিঙ্গাপর ছুটছি চিকিৎসার জন্য। কেন আমরা পারিনা তেমন একটি হাসপাতাল করতে?

সম্প্রতি একটি লেখা শ্রদ্ধেয় গফফার চৌধুরী লিখেছেন ৩২ হাজার ফুট উপরে সকল সুবিধা সম্বলিত বিমানে মশা কত যন্ত্রনাদায়ক। আমরা সবাই মিলে যদি পরিবেশকে পরিচছ্ন্ন রাখি তবে মশা থাকবে না, তাতে রাতে যদি বিদ্যুত না থাকে তবে নিরাপদে মানুষ ঘুমতে পারবে। আর তখনই তার সক্ষমতা বাড়বে। সে সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারবে। আগে মশা মারতে হবে তবে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।

আমার ছাত্ররা আমাকে জিজ্ঞেস করে বিদেশ আর বাংলাদেশের মাঝে পার্থক্য কি? আমি তাদের বলি আমরা নোংরা, অগোছালো, অপরিকল্পিত, আর ওরা পরিচ্ছন্ন। আমরা নামে মুসলমান ঈমানে দুর্বল ওরা ঈমানে শক্ত তবে ধর্মান্ধ নয়। ওদের জীবনে নামাজ-রোজা নেই কিন্তু বাকি সকল দিকদিয়ে ওরা খাঁটি। আমাদেরও খাটি মানুষ হতে হবে। পরিচ্ছন্নতা-তা কাজে হোক বা পরিধেয়তে হোক বা পরিবেশে হোক সত্যি ঈমানের অঙ্গ। ওরা পরিচ্ছন্ন তাই ওরা ঈমানদার। ওরা চিন্তায় পরিচ্ছন্ন তাই সদুরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। ওদের পরিকল্পনা কেবল তাৎক্ষনিক সন্তুষ্টির জন্য নয়। ওরা নিয়মের বেলায় কঠোর। ওরা কেবল গায়ে সাদা নয় মনেও সাদা। আমি ওদের কাছে জানতে চাই: আমরা কি মনের দিক দিয়ে সাদা? ওরা উওর দেয় না।

জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে মনকে সাদা করতে হবে। ৫০ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর নয় মাছে-ভাতে বাঙালি- এই অতি সাধারণ স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছেন। তাই বাঙালি মুর্শিদাবাদ থেকে মুজিবনগর, পলাশী থেকে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়েছে। আমরা একটি মুজিবনগর চাই। সেটা হতে পারে জাঁকজমকহীন বঙ্গবন্ধুরমত, জিয়ার মত সোনার চেইন বা রঙিন সাফারী নয়। আমরা এ বাংলাদেশ চাইনি, যেখানে লোহার গ্রিলদিয়ে মোড়া ঘরে দরজাজানালা বদ্ধকরে মাঝরাতে কখন বিদ্যুত আসবে বলে মশারীর নীচেয় ছটফট করি। আমরা খোলামেলা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে জানালা দিয়ে জোছনা দেখতে চাই। আর বেলীফুলের ঘ্রাণে বুকভরে নিশ্বাস নিতে চাই। গাড়ি কালো ধোঁয়া , ট্যানারির দু:গন্ধে দমবন্ধ হয়ে মরতে চাই না।

আমরা ইট-পাথরের উন্নয়ন নয় সবুজ বাংলাকে আরোও সবুজ দেখতে চাই। হে মহান নেত্রী আপনি কি ওদের নিবৃত করবেন? আপনি নিরাপত্তা দিন আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দিন, দেশ আপনাকে ভালবাসা ও উন্নয়ন দেবে। তখন এসি বন্দ করতে আইন করতে হবে না, অথবা বিদ্যুত সংস্থানের চিন্তা নিয়ে আপনাকে রাত জাগতে হবেনা। রাজাকার সাকা সরকার নিয়ে মসকারাও করতে পারবে না। আপনি আমাদের কথা শুনবেন কি?

আমাদেরকে একটি মুজিবনগর দিন যেটি পরিচ্ছন্ন, যেটি নিরাপদ ও যেটি বঙ্গবন্ধু মত ঐশর্যময়। আমাদের একটি হাসপাতাল দিন যেন সিঙ্গাপুর যেতে না হয়। আমাদেরকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় দিন যাতে বিদেশ যেতে না হয়। আমাদেরকে একটি স্কুল দিন জেলা শহরগুলিতে যাতে ঢাকায় ছুটতে না হয়। আমাদের বন্দরদুটিকে উন্নত করুন, যা আছে তাকে আরোও মানসম্মত করুন, মশা মুক্ত শহর ও বথাটে মুক্ত সমাজ দিন যা পরিচ্ছন্ন তবে গুণগতমানে বাঙলাদেশ পাওয়া যাবে। আর পরিমাণগত উন্নতি নয় গুণগত উন্নতি চাই।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment