কৃতী প্রবাসী : একজন ডা. রফিকুল ইসলাম – ফজল হাসান, ক্যনাবেরা থেকে

কৃতী প্রবাসী : একজন ডা. রফিকুল ইসলাম – ফজল হাসান, ক্যনাবেরা থেকে

মোমবাতি নিজে জ্বলে, কিন্তু অন্যকে আলো বিতরণ করে। তেমনই কিছু কিছু মানুষের ভালো কাজের জন্য অন্যেরা আলোকিত হয় এবং সঠিক পথের সন্ধান পায়। সেরকম একজন হলেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী এডেলেডের অনাবাসী গবেষক এবং বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সুপরিচিত ওয়েব ম্যাগাজিন priyoaustralia.com.au-এর পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. রফিকুল ইসলামকে তার সারা জীবনের গবেষণা এবং বাংলাদেশীসহ মুসলমান কমিউনিটিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ‘প্রিয় বাঙালি’ খেতাব প্রদান করে পুরস্কৃত করা হয়।

১৯৩৯ সালে ড. রফিকুল ইসলাম বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন করার পর বজ মোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট এবং বিএসসি করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (কৃষি) এবং এমএসসি (কৃষি) ডিগ্রি অর্জন করেন। চাকরি জীবনে প্রথম কয়েক বছর কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং পরবর্তীতে আণবিক শক্তি কমিশনের গবেষণায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৭০ সাল থেকে সপরিবারে তিনি অস্ট্রেলিয়ার অনাবাসী।

১৯৭২ সালে ড. রফিকুল ইসলাম এডেলেড ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত কৃষি গবেষণা কেন্দ্র Waite Research Institute-এ গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গম এবং বার্লির জেনেটিক্সের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি গম ও বার্লির Cytogenetics Ges genetic engineering-এর ওপর উচ্চতর গবেষণা করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন। এই আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির ফলে who is who in the world Ges who is who in Science and Engineering in the world-এর মতো সম্মানিত তালিকায় তার নাম সংযোজিত হয়।

ড. রফিকুল ইসলাম বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন জার্নালে তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেন। পরবর্তীতে আমন্ত্রিত বিজ্ঞানী এবং গবেষক হিসেবে চারটি বইয়ের চ্যাপ্টার লেখেন। তিনি বিভিন্ন সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করার জন্য কানাডা, চীন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ভারত, স্কটল্যান্ড, সুইডেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। এডেলেড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা এবং শিক্ষকতার সময় তিনি বেশ কয়েকজন এমএসসি এবং পিএইচডির ছাত্রছাত্রীকে সুপারভাইজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি গবেষণা এবং শিক্ষকতার স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এডেলেড ইউনিভার্সিটির ক.চ. Barley Award, William Culrose Award, Charles John Everald Award Ges Significant Service Award। এছাড়াও তিনি ১৯৬৪ সালে এমএসসিতে (কৃষি) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উপাচার্য পদক’ লাভ করেন।

এডেলেডের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ড. রফিকুল ইসলাম একটি সুপরিচিত নাম। বাংলাদেশ সোসাইটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার তিনি একজন ফাউন্ডার মেম্বার। ১৯৯৭ সালে তার উদ্যোগে এডেলেডে দ্বিতীয় প্রজন্ম বাংলাদেশীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম বাংলা স্কুল। বর্তমানে তিনি এই স্কুলের অবৈতনিক প্রিন্সিপাল। এছাড়াও তিনি এডেলেড মসজিদের অনারারি ট্রেজারার।

ড. রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা ইসলামও এডেলেড ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে একই ইউনিভার্সিটিতে পার্ট-টাইম শিক্ষকতা করেছেন। এ দম্পতি সুপ্রতিষ্ঠিত দুই পুত্র সন্তানের পিতা-মাতা। বাংলাদেশী এবং অনাবাসী বাংলাদেশী হিসেবে আমরাও ড. রফিকুল ইসলামের সাফল্য এবং বিশ্বব্যাপী সুনামের জন্য গর্বিত এবং অহংকারী।

1st published at jugantor


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment