মেলবোর্ন কথা রাখে (না অশালীন না অপ্রাসঙ্গিক) দিলরুবা শাহানা

মেলবোর্ন কথা রাখে (না অশালীন না অপ্রাসঙ্গিক) দিলরুবা শাহানা

অশালীন ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা খরচ করা অযথা শক্তি ব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। তবে কবি ও কবিতা বিষয়ে কথা বলতে চাইলে প্রাসঙ্গিকতা দরকার হয়না, এটা অত্যন্ত সত্যি কথা। মেলবোর্ন সাহিত্যের দ্বিতীয় শহর ঘোষণারও বহু আগে এই শহরে ক’জন বাংলাদেশী দেশ বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের প্রয়াণের পর পরই শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অর্ঘ সাজিয়ে শোকসভায় মিলিত হয়েছিলেন। উদ্যোক্তা ছিলেন আবৃত্তি সংগঠন ‘কথক’। তাঁদের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় সাড়া দিয়েছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন ক’টি সংগঠন।

সে শোকসভাতে কবির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মারকবই খোলা হয়। কবির প্রতি যার যে অনুভূতি তারা ঐদিনে বইতে লিখেছিলেন। ‘কথক’ এর ডঃ তাজুল ইসলাম ঐ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছিলেন যে মেলবোর্নের এই স্মারকবইটি কবির পরিবারের হাতে পৌঁছানো হবে।

কৌতূহল ছিল দেখার যে ভারী বইটি প্লেনে করে সাথে নিয়ে হাজার মাইল উড়ে গিয়ে ঢাকায় কবি পরিবারের হাতে কবে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

এরমাঝে ক্যানবেরা, লন্ডন, আমেরিকা, কানাডা, সিংগাপুর, রিয়াদ, জাপান সব জায়গায় কবি শামসুর রাহমান স্মরণে অনুষ্ঠান হয়েছিল ঐ বছরে। লন্ডনেতো বিশাল কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়েছিল; ঢাকা থেকে কবি-লেখকেরাও যোগ দিয়েছিলেন তাতে।

যাক এবার অর্থাৎ ২০০৮এ শামসুর রাহমানের মৃত্যুদিবসের স্মরণে ইত্তেফাকে লেখক আশরাফ সিদ্দীকির একটি লেখা পড়লাম। বাঙ্গালীরা তার গুণী সনতানদের সম্মান জানাতে যে অকৃপণ কবি শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর এটা বিশেষ করে উদ্ভাসিত হয়েছে বলে আশরাফ সিদ্দীকি উল্লেখ করেছেন। লেখক আরও বলেছেন যে শামসুর রাহমানকে নিয়ে যেখানেই যা কিছু অনুষ্ঠানাদি হয়েছে, প্রকাশনা হয়েছে সব স্মারক দিয়ে একটি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হউক।

তখনি মনে পড়লো যে মেলবোর্নে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যে স্মারকগ্রনথ খোলা হয়েছিল সেটিও ঐ সংগ্রহশালায় থাকবে নিশ্চয়, থাকা উচিৎ। হয়তো আজ থেকে বহুবছর পর গবেষক-লেখকরা দেখতে পাবেন হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও কোথাও বিরাট আড়ম্বরে, কোথাও বা নম্রআনতরিকতায় বাংলাভাষীরা তাদের স্বাধীনতার স্বপ্নালু পিপাসা জাগানিয়া গুণী কবিকে অকৃপণ শ্রদ্ধা ভালবাসায় সিক্ত করেছিল।

প্রশ্ন হল ঐ স্মারকগ্রনথ কবি পরিবারের হাতে আদৌ পৌঁছেছে কি? সভা-সমিতি, বক্তৃতা-বিবৃতিতে অনেক আশ্বাস, অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তার মাঝে কঞ্চটা কথা রাখা হয়? হিসাব কে রাখে তার?

যোগাযোগ করা হল তাজুল ইসলামের সঙ্গে। ব্যবহারে অমায়িক কণ্ঠে জেদের মত কর্তব্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ডঃ তাজুল ইসলাম জানালেন যে স্মারকবইটি ঐ বছরই ঢাকায় কবিপত্মীর হাতে অর্পণ করা হয়েছে। প্রমাণও ছিল তাঁর কাছে। জানালেন উঁনি যখন কবির বাসায় পৌঁছেছিলেন লোডসেডিং চলছিল সেদিন। সে কারণে ভাল করে ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। তাও যে ছবি তুলতে পেরেছিলেন তা পাঠিয়েছেন এই লেখায় ব্যবহৃত হতে পারে ভেবে।

sr_wife1_557917021.jpg

কবিপত্নীর হাতে মেরুন রঙা মলাটের স্মারক বইটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে মেলবোর্ন সত্যিই কথা রেখেছে।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment