প্যারিসের চিঠি: প্যারিসে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ’র সমাধিস্থল আবিস্কৃত
বিখ্যাত লাল সালু ও আমাবশ্যার চাঁদ উপন্যাসের রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ’র কবর সম্প্রতি প্যারিসের একটি কবরস্থানে পাওয়া গিয়েছে। সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ’র জন্ম ১৯২২ সালে বৃহত্তর নোয়াখালী জিলায়। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ ই অক্টোবর ৪৯ বছর বয়সে প্যারিসের মৃত্যুবরন করেন।
মৃত্যুর দীর্ঘ ৩৭ বছর পর প্যারিসে তার কবরস্থানের সন্ধান লাভ একটি আশ্চর্য জনক ও বিস্ময়কর ঘটনা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন রূপকার। লাল সালু, আমাবশ্যার চাঁদ, কাঁদো নদী কাঁদো তার অমর রচনা। ১৯৪৮ সালে তিনি বিখ্যাত লাল সালু উপন্যাসটি রচনা করেন। পরবর্তীতে, ১৯৬৭ সালে লাল সালু উপন্যাসটি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ফরাসি ভাষায় উপন্যাসটির নাম দেয়া হয়েছে, l’arbe meme। উপন্যাসটি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন তার ফরাসি স্ত্রী এ্যান মারী। অনুবাদে তাকে সহযোগিতা করেন তিনজন ফরাসি সাহিত্যিক। উল্লেখ্য, এ্যান মারী ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে বাংলা ভাষায় ডিপ্লোমা করেন।
সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্যারিসে ইউনেস্কোতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি এক ফরাসি রমণী এ্যান মারীকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান। ছেলে ইরাজ ও মেয়ে শিমিন।
উল্লেখ্য,সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেন লেখক নির্মলেন্দু গুণ। গত বছর তিনি কথা সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রের আমন্ত্রনে প্যারিসে এসেছিলেন। প্যারিসে ভ্রমনের সময় তিনি প্রবাসী সাহিত্য ও সংস্কৃত সংশ্লিষ্টদের সাথে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ সম্পর্কে কথা বলেন। লেখক নির্মলেন্দুগুনের মাধ্যমেই প্রথম জানা যায় যে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ চাকুরি সুত্রে প্যারিসে ছিলেন। সে সময়ে তিনি ইউনেস্কোতে চাকরি করতেন। ফ্রান্সে থাকাকালীন তিনি এক ফরাসী রমণীর প্রেমে পড়েন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
নির্মলেন্দু গুনের এই তথ্যটি ফ্রান্সে বাংলাদেশ ক্যমুনিটিতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ সম্পর্কে খোজ খবর নেয়ার চেষ্টা চলে। এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন কথা সাহিত্য চর্চা কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট,তরুন কবি মোঃ জাকারিয়া রিপন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই সৈয়দ ওয়ালী ঊল্লার সমাধিস্থল ঊদ্ধার করা সম্ভব হয়। সহযোগিতা করেন প্যারিসের মেরী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
গত ১০ই অক্টোবর প্রথম বারের মত তার কবর স্থান জিয়ারত,দোয়া ও তার জীবনীর উপর আলোচনা করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব জ়নাব ঝুনা চৌধুরী, জনাব মানিক, ওয়াসিম খান পলাশ, মোঃ জাকারিয়া রিপন, স্বপন, জুয়েল প্রমুখ।
সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর সমাধিস্থল প্রাপ্তির খবরটি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এন টিভি, চ্যানেল আই, চ্যানেল এস , বাংলা টিভি ও জনপ্রিয় ওয়েব ম্যাগাজিন ‘একটি বাংলাদেশ’ ,এন ওয়াই বাংলা, নিউজ বাংলা, অন লাইন ম্যাগাজিন সুপ্রভাত ফলাও করে প্রচার করে।
আগামীতে জাতীয়ভাবে সৈয়দ ওয়ালী উল্লার উপর একটি ডকোমেন্টারি তৈরী ও তার সাহিত্য কর্ম সংরক্ষনের ব্যাবস্থা করা উচিত ।
এরই মধ্যে লেখক নির্মলেন্দুগুণ সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর কবর বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রলায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সরকার তার এই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
২৯–১১–২০০৮ polashsl@yahoo.fr ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে