এ কেমন বিচার: ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে
বর্তমান সময়টা আমাদের জাতির জন্য নিয়ে এসেছে একটি শোক সংবাদ। সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে একরকম জোর করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে শত শত বাংলাদেশীকে। তাদের দোষ তারা প্রতিবাদ করেছিলো অন্যায়ের। আসলে পৃথিবীতে ইতিহাস বোধহয় এভাবেই সৃষ্টি হয়। তবে খেসারত দিতে হয় কিছু নিরপরাধীকে।
কুয়েতে বেশ কিছুদিন যাবত সেদেশের বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ে সেদেশের মালিক পক্ষের সাথে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে । মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত চাকুরেদের এ দাবী দীর্ঘ দিনের। কোন একজন ব্যক্তি যখন প্রথম বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আসে, প্রথম দিনেই তাকে বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। প্রথমত বাংলাদেশের রিক্রটিং এজেন্সিগুলো মিথ্যা লোভনীয় বেতনের অফার দিয়ে নিরহ মানুষদের ফাদে ফেলে থাকে। বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুন দের বিরাট একটি অংশ বেকার। দেশের কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে নুতন কোন ক্ষেত্রও তৈরী হচ্ছে না যেখানে বেকারদের পুর্নবাসিত করা যায়। দিন দিন বয়স বেড়েই চলেছে। পিতা-মাতা, পরিবারের সদস্যরাও দু চিন্তাগ্রস্থ। উপায়ন্তর না দেখে ধরা দেয় আদম ব্যাপারিদের হাতে। এই সুযোগে আদম ব্যাপারিরা ফাদে ফেলে একেক জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে আসতে একেক জনের লেগে যায় প্রায় দু লাখ টাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুলাখ টাকা অনেক টাকা। একজন মধ্যবৃত্ত, নিম্ন মধ্যবৃত্ত ঘরের সন্তান কোথায় পাবে এত টাকা। বাবা চাকুরিজীবি হলে ধার- কর্জ্জ বা লোন করে। আর যদি কৃষক হয় তাহলে হয়তো শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে নয়তো মায়ের ধরে রাখা স্মৃতি শেষ সম্বল গয়না টুকু বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ এতগুলো টাকা সংগ্রহ করতে হয়। কত আশাই না বাবা মা পরিবারের সকলের। সন্তান বিদেশ গিয়ে চাকরি করবে, টাকা দেশে পাঠাবে, পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে। কত স্বপ্নইনা মনে মনে। মধ্যবৃত্তদের স্বপ্ন একটু স্বচ্ছলতা। বার্ধক্যে পড়ে যাওয়া বাবার অচল সংসারকেএকটু সচল করা, তারপর নিজের ভবিষ্যত গড়া।
এরা প্রথমত প্রতারিত হয় রিক্র টিং এজেন্সি দ্বারা। এয়ার পোর্টে নেমেই তারা জানতে পারে তারা যে পোষ্টে ও বেতনে এখানে এসেছে তার সবই ভূয়া। সে দেশের লোকাল এজেন্টরা তদেরকে বাধ্য করে কন্ট্রাক্ট বর্হিভুত কাজ করাতে। যে বেতন দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশের রিক্রটিং এজেন্টরা পাঠিয়েছে , এখানকার দালালরা দিচ্ছে অনেক কম। মাসে বেতন মাত্র ৩০ ডলার। যে ছেলেটি প্রায় দু লাখ টাকা খরচ করে এসেছে, মাসিক ৩০ ডলার বেতন পেয়ে থাকা খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে কবেই বা আসার খরচ ঊঠাবে আর কিইবা দেশে পাঠাবে।
এ অবস্থায় ছেলেটি নিজের অজান্তেই প্রতিবাদী হয়ে উঠে। অস্বাভাবিক আচরন করা শুরু করে। সে নিজেও জানেনা যে সে তার ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য লড়ছে। এটা একজন মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের লড়াই। একটি প্রতারনার বিরুদ্ধে লড়াই। আর এরই খেসারত দিতে হলো কয়েকশত নিরপরাধ বাংলাদেশিকে। জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হলো তাদের। আরও কয়েকশ এয়ারপোর্টে অপেক্ষমান। প্রতিদিন প্রতিটি দৈনিকে একই ছবি। ঢাকা এয়ার পোর্টে শত শত হতভাগার মায়েরা ফিরে আসা সন্তানদের জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিচ্ছে।
মধ্য প্রাচ্যের এই সমস্যা গুলো দীর্ঘ দিনের। অতীতের সরকার গুলো দেখেও না দেখার ভান করেছেন। কখনোই সমাধানের উদ্যোগ নেননি। আজ এর বিস্ফোরন ঘটলো। তবে সরকার সঠিক সময়ে ব্যাবস্থা নিলে পাঠিয়ে দেয়া শ্রমিকদের ফেরত আসা হয়তো রোধ করা যেত।
অতি সম্প্রতি কুয়েত স রকার সে দেশে কর্মরত শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ১৫০ ডলার নির্ধারন করেছে। যা পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ডক্টর ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী কুয়েতের উপ- প্রধান মন্ত্রীকে একটি পত্র পাঠান। পত্রে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন যে, আমাদের সেনারা কুয়েতের জন
্য যুদ্ধ করেছে। আমরা আমাদের শ্রমিকের নায্য বিচার চাই।
ফিরে আসা সন্তানদের প্রতিবাদের কারনেই হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। অপরাধীরা সাজা পাবে। কিন্তু যাদের পাঠিয়ে দেয়া হলো তাদের কি হবে। কি হবে হতভাগা মায়ের সন্তানদের।
প্যারিস – 02-08-08
polashsl@yahoo.fr