একুশ আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবিয়ে তোলে : কামরুল আহসান খান

একুশ আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবিয়ে তোলে : কামরুল আহসান খান

প্রতি বছর একুশ আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবিয়ে তোলে । নিজ আত্মপরিচয়ে সার্বিক স্বকীয়তাসহ আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য একুশ যে জাতিসত্ত্বাবোধ নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে বহু বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। কায়েমী স্বার্থ, সামপ্রদায়িক, প্রগতি বিরোধী শক্তি একুশের প্রাণ শক্তিকে বারবার বাধাগ্রস’ করেছে। তবুও আমরা বাধামুক্ত হয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সামনে এগিয়েছি এবং আজও সে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

একুশকে আমরা জেনেছি বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তি আর ব্যক্তি ও সমগ্র জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচা থাকার মূল মন্ত্র হিসেবে। বৈষম্য, শোষন, বঞ্চনা, পরনির্ভর সমাজে দুর্ণীতি ও লাম্পট্যের আধিপত্য ও সর্বোপরি পরদেশীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য আমাদের চলার পথকে করছে বাধাগ্রস’। বিগত বছরগুলোতে কিছু দুর্ণীতিগ্রস’ রাজনীতিবিদ, সামরিক, বেসামরিক আমলা ও স্বাধীনতার চিহ্নিত শত্রুরা জাতিকে নানা সংকটে ফেলে মানুষের দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত শোষণমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্নকে বিপর্যস- করেছে।

নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদসহ জাতীয় নেতাদের হত্যা, পরবর্তীতে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও হত্যা চেষ্টার মধ্য দিয়ে দেশে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাভাবিক পথচলাকে বাধাগ্রস’ করা হচ্ছে। অতীতে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডসমূহের বিচারকে নানা অজুহাতে বিলম্বিত করে ন্যায় বিচারকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, নৈতিকভাবে জাতিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি অনিশ্চয়তা আর নৈরাজ্যের দিকে। পূর্বের মত নানা আবরনে একশ্রেনীর ছদ্মবেশী স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক মহল, সামরিক- বেসামরিক আমলা, কিছু বহুজাতিক সংস’া ও লুটেরা ধনিক স্বার্থরক্ষায় অতীতের মত নানা ধরণের ছল চাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে। এই মহল বিশেষের ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে প্রগতি ও সম্ভাবনার দিকে। বৈষম্যমূলক সমাজ যেখানে মানুষের সমঅধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করে না সেখানে শুধুমাত্র কিছু প্রলেপ দিয়ে আর লোক দেখানো চমক সৃষ্টি করে মানুষকে অসনে-াষ আর ক্ষোভ থেকে নিবৃত করা যাবে না। লুটেরা, ধনিকবনিক, কিছু দুর্নীতিগ্রস’ রাজনীতিবিদ ও অসৎ আমলাদের ক্ষমতাকে চিরদিনের মত খর্ব করে সৎ ও দেশপ্রেমিকদের সুশাসন কায়েম করে আমাদের দেশের অমিত সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশে ও প্রবাসে কোটি কোটি মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো এই বিশ্বাস আমাদের আছে। আমাদের চাই সহমর্মিতা, যোগাযোগ, সত্যানুসন্ধান আর দেশের মানুষের স্বাবলম্বী হবার কাজে সকলের যৌথ প্রচেষ্টা।

একুশে একাডেমী প্রবাসে নানামুখী চিন-ার খোরাক যুগিয়ে প্রতি বছর বইমেলা, রক্তদান, স’ায়ী আন-র্জাতিক মাতৃভাষা সৌধ স’াপন ও বহুমুখী কর্মতৎপরতা দিয়ে আমাদের চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে। শহীদ দিবসে একুশে একাডেমী সর্বত্র আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন তৈরী করে একটি সুন্দর, সৃষ্টিশীল কর্মক্ষম দেশপ্রেমিক মানসিকতা সম্পন্ন শক্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে এই আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা।

একুশ আমাদের উজ্জীবিত করুক নতুন ও সম্ভাবনাময় আগামী গড়ে তুলতে। আগামীতে আমাদের ভাবনা-চিন-া জুড়ে থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।

-কামরুল আহসান খান, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্র-যুব নেতা। বর্তমানে ক্যানবেরা প্রবাসী।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment