রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর সন্তান ববি হাজ্জাজদের বাংলাদেশে রাজনীতি নয়

রাজাকার যুদ্ধাপরাধীর সন্তান ববি হাজ্জাজদের বাংলাদেশে রাজনীতি নয়

ফজলুল বারী: যে কোন মিশনে পারিবারিক প্রভাব-শিক্ষাটাও গুরুত্বপূর্ন। অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকতার প্রথম দিনের ক্লাসে জানতে চাওয়া হচ্ছিল সাংবাদিকতায় আগ্রহী হবার কারন কী? অনুপ্রেরনাটি কার? পরিবারের অথবা বংশের কেউ সাংবাদিক ছিলেন কীনা! ববি হাজ্জাজের রাজনৈতিক দল ঘোষনা দেখে বিষয়টি আবার মনে পড়লো। রাজাকার মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ। আমরা যখন তার যুদ্ধাপরাধী বাবা’র বিচার দাবি করছি তখন ববি হাজ্জাজ প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন মানী লোকের ইজ্জতহানির চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজাকার হোক আর যুদ্ধাপরাধী হোক রাজাকার মুসা বিন শমসের ববি হাজ্জাজের বাবা। জন্মদাতা। এমন একজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের ঔরসে তার জন্ম। তাই আমাদের বিচার দাবিকে ববির কাছে বাবা’র ইজ্জতহানিই মনে হবে। সে তার রাজাকার বাবা’র ইজ্জত রক্ষার কাজ করার চেষ্টা করুক। মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদের রক্তে ভেজা বাঙলায় আমরা যুদ্ধাপরাধী মুসা বিন শমসেরের বিচারের কাজ করে যাবো। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মুসার পক্ষ নেয়া যে কোন বান্দাকেও রুখে দেবো।

কারন কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অধিকার থাকেনা। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের শপথের আগে যে অনলাইনে পরীক্ষা হয় সেখানে রাষ্ট্র নিশ্চিত হতে চায় আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন দেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ছিলোনা। অস্ট্রেলিয়ায় কোন সঠিক তথ্য গোপন করা গুরুতর অপরাধ। মনে করুন একজন যুদ্ধাপরাধী তার তথ্য গোপন করে দেশটির নাগরিক হয়ে গেলো। সেটি প্রমান হলে তার শাস্তি হবে। তার জেল-জরিমানা, এমন তাকে বহিষ্কারও করা হতে পারে। বাংলাদেশে ববি হাজ্জাজদের সৌভাগ্য হচ্ছে টাকায় বা ভিন্ন কারনে এখানে জেনে না জেনে তার বা তাদের পক্ষে কথা বলার লোক আছে। এবং এক্ষেত্রে সহজ বানীটি হলো, ‘বাবা’র অপরাধে ছেলে দোষী হবে কেনো?’ ঠিক আছে, এটি এক ধরনের যুক্তিপূর্ন কথা। কিন্তু ছেলেরতো আগে বাবা’র অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। কারন সে বাংলাদেশ নামের একটি দেশে রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইছে। তার বাবা যে দেশটি চায়নি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করেছে। ববিকে বলতে হবে বাবা যা করেছিল ভুল করেছিল। বাবা’র পক্ষে আমি দেশের মানুষের পক্ষে ক্ষমা চাইছি। অথবা বলুক, আই’এম সরি। কিন্তু ববি দেশের আর সব রাজাকারের বাচ্চার মতো সমান কাজ করেছে! সে প্রেস কনফারেন্স করে বলেছে তার যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার বাবা’র ইজ্জতহানি করা হচ্ছে! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে এমন কেউ ববি’র মতো রাজাকারের বাচ্চা’র পক্ষ নিতে পারেনা।

যুদ্ধাপরাধীর সন্তানদের ঔদ্ধত্যের আচরনটি সাম্প্রতিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে সবাই দেখেছে। গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন সাঈদি, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সময় দেশের মানুষ দেখলো ক্রিমিনালগুলো কোনদিনতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-গণহত্যাকে অপরাধ হিসাবে মানলোনা, স্বীকার করলোনা, উল্টো তাদের ছেলেপুলেরাও জেলখানা থেকে বেরিয়ে দেশের মানুষকে ঔদ্ধত্যের ভি চিহ্ন দেখায়! এরমানে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বাবা’র ফাঁসি হচ্ছে এটা তাদের গৌরবের বিষয়! এই গৌরবওয়ালাদের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার দিতে হবে?

শুধু এই ববি হাজ্জাজ না, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, গনহত্যা চালানো পাকিস্তানি একটা লোক বা পরিবার পাবেননা যারা একাত্তরের অপরাধের জন্যে দূঃখিত-লজ্জিত। উল্টো বলবে তারা মুসলমানদের দেশ পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো! তা বাংলাদেশ কী অমুসলিমদের দেশ নাকি? রাজাকার যুদ্ধাপরাধীরা কত ঘৃণ্য, হিংস্র হয় তা দেখিয়েছে ববির যুদ্ধাপরাধী বাবা মুসা বিন শমসের। তার একাত্তরের অপরাধ নিয়ে লেখায় সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে সে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। অনেক কষ্টে প্রবীরকে বাঁচানো গেছে। কিন্তু সারা জীবনের জন্যে পঙ্গু হয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সন্তান সাহসী সাংবাদিক প্রবীর শিকদার। আর সেই রাজাকারের সন্তান ববি সংবাদ সম্মেলন করছেন আর তার কভারেজ দিচ্ছেন সাংবাদিকরা! কতো ভাগ্যবান ববি! একজন সাংবাদিকও সেখানে তাকে প্রশ্ন করেনি যে প্রবীর শিকদারের একটা পা নেই কেনো? অতবড় ঘটনার পরও ববি হাজ্জাজের দুটি পা যে ঠিকই আছে দেখা যাচ্ছে! তিনি অতটুকু ভাগ্য নিয়েই থাকুন। আর বাড়ার দরকার নেই। বেশি বাড়লে ঝড়ে মাথা ভাঙ্গে।

যুদ্ধাপরাধী রাজাকাররা কতোটা শয়তান-দুষ্ট প্রকৃতির হয় তা নিয়ে আমার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। ভোলায় মোখলেসুর রহমান নামের এক বিখ্যাত রাজাকার ছিল। তার ইন্টারভ্যু করেছিলাম। মোখলেসুর রহমান বলে মুক্তিবাহিনী যখন টাউনে ঢুইকা পড়ল তখন জান বাঁচাইতে আমার এক ভাগ্নের বাড়িতে চইলে গেলাম। ওখানে গিয়ে দেখি আমার মতো আরও অনেকে সেখানে গিয়ে উঠেছে। ভাগ্নে এক পর্যায়ে বললো মামারে লোকজন আপনাদের দেখলে মাইরে ফেলবে। এরচেয়ে জেলখানায় দিয়ে আসি। সেখানে অন্তত নিরাপদে থাকবেন। ভাগ্নে আমাদের জেলখানায় রেখে আসলো। ওখানে নিরাপদে থাকছি আর আল্লারে ডাকছি। একদিন শেখ সাহেব ক্ষমা করে দিলো। বার অইয়া গেলাম। ‘এই যে শেখ সাহেব ক্ষমা করে দিলো এ সম্পর্কে আপনার আজকের মূল্যায়ন কী?’ এ প্রশ্নে রাজাকার মোখলেসুর রহমানের আসল চেহারা বেরোয়! এক রকম হাত গুটিয়ে আমাকে সে বলে, ‘ক্ষমা করবেনা মানে আমাদের গায়ে হাত দেয় সে সাহস শেখের ব্যাটার আছিলোনি?’ এই হচ্ছে অকৃতজ্ঞ রাজাকার, তাদের বংশধরবৃন্দ! এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারেনা।


Place your ads here!

Related Articles

ব্রিসবেনের আবহাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ!

শুক্রবার বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের জানার আগ্রহের তালিকার পয়লা নম্বরে ছিল ব্রিসবেনের আবহাওয়া রিপোর্ট! সারাদিনই নানাজন ফোনে, ক্ষুদে বার্তায় অথবা ফেসবুকের ম্যাসেজবক্সের

সুস্থ থাকার উপায় পসেটিভ থিঙ্কিং

‘পজেটিভ থিঙ্কিং-এর কারনে মস্তিস্কের হাইপোথালমাস অরিজিন  থেকে যেসব কেমিক্যাল নি:সরন হয় সেইসব কেমিক্যাল মানুষকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।  আর নেগেটিভ

শুধিতে হইবে ঋণ’-এই দায়বদ্ধতায় সিডনীতে বাংলাদেশের বন্যার্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ

কাজী সুলতানা শিমিঃ সিডনী থেকে প্রকাশিত বাংলা ওয়েব পোর্টাল বাংলা-সিডনি ডটকমের সার্বিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ডিজেস্টার রিলিফ কমিটি অস্ট্রেলিয়া এর

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment