ইন্টারভ্যু: মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদ

ইন্টারভ্যু: মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদ

ছেলের সঙ্গে কথা বলে ব্রিসবেন যাত্রা বাতিল করেছেন মুশফিকের বাবা মাহবুব হামিদ। শুক্রবার রাতে সিডনিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কথাটি বলেছেন। ছেলে তাকে বলেছে, ব্রিসবেনের মাঠের যে অবস্থা তাতে খেলা হবার সম্ভাবনা কম। আইসিসি হয়তো শনিবার সকালে বিষয়টি ঘোষনা করবে। ছেলের ও বাংলাদেশ দল নিয়ে অনেক খুঁটিনাটি কথা বলেছেন মাহবুব হামিদ। তাকে মনে হয়েছে তিনি শুধু মুশফিকের না, দলের সব ছেলেদেরই বাবা-অভিভাবক। দলের সাফল্য-ব্যর্থতার নানা পরিসংখ্যান তার মুখস্ত। বিশ্বকাপের খেলা দেখতে তিনি তার আরও দু’ভাইকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছেন। দলকে উজ্জিবিত করাই তাদের মিশন-ভিশন। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সব ভেন্যুতেই তারা বাংলাদেশের খেলা দেখতে যাবেন। দল কোয়ার্টার ফাইন্যালে গেলে আরও বেশিদিন থাকার ইচ্ছা দলের সঙ্গে। সিডনিতে তারা উঠেছেন মুশফিকের চাচা ডা হামিদের বন্ধু মি মামুনের গ্ল্যান্ডফিল্ডের বাসায়। সেখানেই আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। ক্যানবেরায় বাংলাদেশের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে গিয়ে মুশফিকের বাবা বললেন, বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে এত বাঙ্গালি! আমার মনে হচ্ছিল যেন ফতুল্লায় বসে খেলা দেখছি। এ ঘটনা জীবনে ভুলবোনা।

এরআগে দেশের বাইরে শ্রীলংকায় ছেলের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন মুশফিকের বাবা। সেই সফরে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল মুশফিক। বললেন এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। খুব ভালো একটা দল নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে। কিছু মিডিয়া অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেট নিয়ে প্লেয়ারদের মাঝে এক ধরনের জুজুর ভয় তৈরি করেছিল। কিন্তু ক্যানবেরার মাঠে সেই ভয় কেটে গেছে। আমি হোটেলে গিয়ে ছেলেদের বলেছি খামোখা ঝুঁকি নিয়ে চার-ছয় মারার দরকার নেই। উইকেটে টিকে থেকে যতটা বেশি সম্ভব সিঙ্গেলস নিতে হবে। মাহবুব হামিদ বলেন, ক্যানবেরার সাকিব-মুশফিক দুজনেই খুব স্বাভাবিক খেলা খেলেছে। শারীরিক ক্ষমতার পঞ্চাশ ভাগও কাজে লাগায়নি। মুশফিক যে ছক্কা মেরেছে ২০০৭ সালে ঢাকায় ভারতের নবোজাত সিং সিধুর বলে একই ছক্কা হাঁকিয়েছিল। প্লেয়াররা এই স্বাভাবিক খেলাটা খেললেই এ দল বিশ্বকাপে অনেক দূর যাবে।


মাহবুব হামিদ বলেন, মুশফিকের নেতৃত্বে দল অনেকগুলো ক্লোজড ম্যাচ হেরেছে। সে জন্যেই হয়তো অধিনায়কত্বে পরিবর্তন এনেছে ম্যানেজম্যান্ট। মাশরাফিকে নেতৃত্বে আনায় দলের ঐক্যে কোন সমস্যা হয়নি।কারন মাশরাফির সঙ্গে দলের সবার সম্পর্ক ভালো। আমার সঙ্গেও বন্ধুর মতো কথা বলে মাশরাফি। এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি সহ ক্যানবেরার ম্যাচে তিন পেসার মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন লাইন-লেন্থে খুব ভালো বল করেছে। বিশেষ করে ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপরীতে ৩-৩-৩ তথা ৩ ওভারে ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট, এটি পেসারদের দারুন এক সাফল্য। মূলত খেলার ভাগ্য তখনই ঠিক হয়ে গেছে। মাহবুব হামিদের মতে তাসকিনের বল ড্রপ না হলে সে দারুন জ্বলে উঠতো। ক্যানবেরাতেই তার পাঁচ উইকেট পাওয়া সম্ভব ছিল। একজন বোলার উইকেট পেলেই জ্বলে ওঠে সত্যিকার অর্থে। আগামিতে স্পিনাররাও আরও ভালো করবে, এ আশা তার। রুবেলকে নিয়ে মাঠে দর্শকদের হ্যাপি হ্যাপি চিৎকার-কটাক্ষে হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, একটা ছেলে দেশের জন্যে এত পরিশ্রম করছে, ভালো বল করছে তাকে উৎসাহ না দিয়ে উল্টো হতদ্যম করাটাই বুঝি আমাদের জাতীয় স্বভাব! তবে তার সঙ্গে আমার হোটেলে কথা হয়েছে। সে এসব নিয়ে এখন ভাবেনা। দেশের জন্যে সর্বোচ্চ কিছু করা ছাড়া ভিন্ন কিছু তার ভাবনায় নেই। সিনিয়রদের তামিম, মাহমুদুল্লাহ, নাসিরেরর পাশাপাশি জুনিয়রদেরএনামুল বিজয়,, আরাফাত সানি, সৌম্য, সাব্বির, তাইজুল সহ দলের নতুন সদস্যরা খুব ভালো করবে, এটা তার বিশ্বাস।

মুশফিকের বাবার মতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের খেলা না হবার নেগেটিভ-পজিটিভ দুটোই আছে। আমাদের এখন টার্গেট কোয়ার্টার ফাইন্যালে যেতে হবে।এরজন্যে গুরুত্বপূর্ন হলো পয়েন্ট। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও অঘটন ঘটানোর যোগ্যতা রাখে বাংলাদেশের এই স্কোয়াড। শ্রীলংকা-ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিতবে এ আশা তার। এ ব্যপারে তার বক্তব্য হারতে হারতে এ দুটি দলের আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে। এদের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নেবার এখনই সময়। তবে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে আমরা জিতবোই ইনশাল্লাহ। এ নিয়ে অহেতুক ভীতি ছড়ানো হচ্ছে।

বুধবার ক্যানবেরার মাঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার নেবার পর চিৎকার করে মুশফিককে ডেকেছিলেন তার বাবা। ছেলে তখন তার আদর নিতে ছুটে এসেছিল। মাহবুব হামিদ বলেন, ঢাকায় আমি মুশফিকের মা’কে নিয়ে খেলা দেখতে যাই। ছেলের খেলা দেখে মায়ের যে কী আনন্দ হয়, তা আমি ভালো জানি। সে যে একজন প্রতিবন্ধী তা তাকে যে জানেনা তা সে বুঝতেই পারবেনা। অস্ট্রেলিয়া থেকে তাদের বড় বৌমার মাধ্যমে নিয়মিত খেলার খুঁটিনাটি নিয়ে ম্যাসেজ পাঠান মুশফিকের মায়ের কাছে। সেখান থেকে আসে মায়ের আনন্দ-প্রতিক্রিয়ার খবর। যার ছেলে বিশ্বকাপ খেলছে, ভালো খেলে দল-দেশকে জয়ী করছে, সে মা’তো খুশি হবেনই। তিনি যে মা।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment