সুপার ফুড ও কালোজিরা কাহিনী

সুপার ফুড ও কালোজিরা কাহিনী

দিলরুবা শাহানা: সুপার ফুড নামে নয় তবে বড়দের মতে দারুন উপকারী খাবার অনেক আগেও ছিল । ছোটদেরকে অনেক কষ্ট করে ওইসব খাবার গলাধঃকরণ করতে হয়েছে । ছোটবেলায় মুরুব্বী ও গুরুজনদের নানা শাসন আর দাবরানি সহ্য করতে করতেই প্রায় সব মানুষ বড় হয় । সময়ের স্রোত পেরিয়ে পরিনত বয়সে পৌঁছায় । মাঝে মাঝে মনে হয় গুরুজনদের অনেক শাসন-বারন অন্যায় পর্যায়ে পড়ে, রীতিমত অত্যাচার । যেমন গরম ভাতের হাড়িতে থার্মোমিটার ঢুকিয়ে ভাতের জ্বর মাপা অন্যায় মানলাম, নতুন অংকখাতার সাদা পাতা ছিড়ে ছিড়ে নৌকা বানিয়ে বৃষ্টির পানির নহরে ভাসানোও ঠিক নয় বুঝলাম । কিন্তু কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয় বারান্দায় এক চিমটি চিনি ছড়িয়ে পিপড়াকে দাওয়াত দিলে ? তাতেও শাসন, তাতেও বারন । পিপড়ারা সারি বেঁধে কোথা থেকে আসে আর চিনি মুখে নিয়ে কোথায়ই বা যায় তা জানার ছোটবেলার সে ইচ্ছাটাই অপূর্ণ থেকে গেল । অথচ এখন ঘরে কৌটা ভর্তি অনেক চিনি, এক চিমটি নয় এক মুঠো ভর্তি করে নিলেও কেউ কিছু বলবে না । কিন্তু আজ ছোট্ট বেলাটাই উধাও হয়ে গেছে । কোন অজানায় গেছে কেউ তা জানেনা ।

খাবারদাবার নিয়ে ছোটদের উপর গুরুজনেরা অনেক জোরজবরদস্তি করতে পছন্দ করেন । বড়দের মতে (তাদের মত ঠিক কি বেঠিক তা জিজ্ঞেস করার সাহস কারও ছিল না) যা স্বাস্থ্যকর খাবার তা ছোটদের খাওয়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন তারা । বড়দের কথা মেনে অনেক বিস্বাদ খাবার ছোটরা খেতে বাধ্য হয় একথা খাঁটী সত্যি । তবে খেতে খেতে একসময়ে ওই খাবার তাদের ভাল না লাগলেও খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ।

আজকাল পশ্চিমা ধনী বিশ্বে সুপার ফুডের বিরাট আবেদন । একসময়ের ভেনিজুয়েলার গরীব মানুষের খাদ্য কিনওয়া, আর অন্য কোন একদেশের চিয়া, লিনসিড(সম্ভবতঃ আমাদের দেশে এটাকে তিসি বলে) ধনীদের বিশ্বে এখন দারুন জনপ্রিয় । আমাদের দেশে বলা হয় বা বলা হতো শাকপাতা গরীবগোর্বাদের খাবার । বর্তমানে অবাক হতে হয় দেখে কেইল নামের ঘন সবুজ রংএর কুঁকড়ানো পাতা যা কিনা সুপার ফুড নামে দারুন জনপ্রিয় । গরীবদের জন্য এসব এখন মহার্ঘ বস্তু । তারা ওই পাতা খেতে পায় বলে মনে হয় না ।

আমাদের মা, চাচী, খালারা করলা, কালোজিরাকে সুপার ফুড মনে করতেন । ওই সব বিরক্তিকর খাবার আমাদের ওষুধ খাওয়ানোর মত জোর করে খাওয়াতেন । খাবারে যেদিন এসব পদ থাকতো সেদিন এক চামচ করলা ভাজি বা কালোজিরা ও শুকনো মরিচ ফোঁড়ন দিয়ে কুচি কুচি করে পলা পেপে ভাজি দিয়ে বিসমিল্লাহ করতে হত । প্রথম গ্রাস বা লোকমা ওই বেমজা সুপার ফুড দিয়ে শুরু করা ছিল রেওয়াজ । ছোটরা খাব না বলার সাধ্য ছিল না । কত ভুলকি ভালকি দিয়ে যে খাওয়ানো হতো । করলার কত গুণ শুনতে শুনতে কান ব্যথা । আর কালোজিরা মহৌষধী! একদিন কালোজিরা থেকে মানুষ অমরত্বের ওষুধ বের করতে পারবে বলে মুরুব্বীদের ধারনা ।

ধীরে ধীরে করলা অল্প অল্প করে খেয়ে অভ্যাস হল । মজা করে খেয়েও নিতাম । নিজের সন্তানদেরও এই সুপার ফুড খেতে, ও এটাকে পছন্দ করতে শিখিয়েছি ।

তবে কালোজিরা ভীতি দীর্ঘদিন ছিল । স্বচ্ছ হালকা সবুজ রঙা পেপে ভাজিতে কালো কালো ছোট ছোট কালোজিরা দেখতে মোটেও ভাল লাগতো না । ছোটবেলায় লুকিয়ে চুরিয়ে কালোজিরা বেছে বেছে ফেলে পেপে ভাজি খেয়ে নিতাম । পেপে ভাজিতে কালোজিরার গন্ধ মিশে থাকতো তা ছিল মজার । বড় হয়ে মায়ের হাতে বানানো নিমকিতে কালোজিরা ভাল লাগতো । সুপার ফুড বলে নয় এর স্বাদই তখন ভাল লাগতো ।

আজকাল পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন সাময়িকী খুললেই করলা, রশুন, কালোজিরা সহ নানা খাবারের গুণের বিস্তারিত বর্ননা চোখে পড়ে । পত্রিকাওয়ালাদের মুরুব্বীরাও তাদেরকে ওসব মূল্যবান সুপার ফুড খাইয়েছেন নিশ্চয় । অনেক সময় পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা ইমেইল বা মোবাইলেও মেসেজ করে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাঠিয়ে থাকেন । বোধহয় সুপার ফুড নিয়ে মানুষ ভীষণ ব্যাকুল এখন ।
কালোজিরার তেল এখন বাজারে পাওয়া যায় । বিদেশেও দেশী গ্রোসারী শপে এই তেল পাওয়া যায় । বলা হয়ে থাকে ঠান্ডা লাগলে, শরীরে ব্যথাবেদনা হলে কালোজিরার তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায় ।

বাংলাদেশে কালোজিরার ভর্তা খাওয়া এখন বেশ চোখে পড়ে । কালোজিরা সুপার ফুড হিসাবে খুব পাত্তা পাচ্ছে । এখন ভাবি আমাদের মুরুব্বীরা বহু আগেই এই খাদ্যবস্তুর উপকারিতা জেনেই ভাজি, নিরামিসে কালোজিরা ফোঁড়ণ দিতে ভুলতেন না ।

বিদেশবিভুঁইয়ে কালোজিরা, রশুন আর শুকনা মরিচ টেলে(রোষ্ট) শিলপাটাতে পিষে ভর্তা করা ঝামেলার কাজ এতে কোন সন্দেহ নেই । বাংলাদেশে বুয়ারা বাটাবাাটি, মশলা বা ভর্তা পেষার কাজ নিষ্ঠার সাথে করে দেন বলেই সবাই আয়েষ করে খেতে পারেন । একদিন বুয়ারাও পাটার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবেন আশা করছি । বিদেশে বুয়া নেই ঠিকই তবে আছে ছোট্ট কফি গ্রাইন্ডার । শিলপাটা বা শিলনোরার কাজটা কফি গ্রাইন্ডার করে দিতে পারে সহজেই ।

বিদেশেও পরিস্কার ভাল কালোজিরা পাওয়া যায়, সুপার মার্কেটে গার্লিক গ্রানুল পাওয়া যায়, শুকনা মরিচতো সবখানেই মিলে । চার কি পাঁচ চা চামচ কালোজিরা, গার্লিক গ্রানুল এক চা চামচ ও শুকনা মরিচ দু’টো কি তিনটে । অল্প আঁচে পাত্র গরম করে এক এক করে প্রথমে শুকনা মরিচ(কিচেন কাচি দিয়ে কেটে কেটে ছোট টুকরা করে নিতে হবে ), তারপর কালোজিরা, সবশেষে গার্লিক গ্রানুল ছেড়ে সামান্য সময় নাড়াচাড়া করলেই মুচমুচে হয়ে যায় । ঠান্ডা হলে গ্রাইন্ডারে দিয়ে গুড়ো করে নিলেই হবে । ইচ্ছে করলে সামান্য লবন মিশিয়ে নেওয়া যায় । খাওয়ার সময় গরম ভাতে এক বা আধ চামচ গুড়ো নিয়ে তাতে ঘি বা সর্ষের তেল মিশিয়ে নিলেই হবে । ভেজেটেবল স্যুপ, চিকেন স্যুপেও এই সুপার ফুডের সামান্য গুড়ো ছিটিয়ে নিলে স্বাদ বাড়ে । একদা গুরুজনের মুখে ও বর্তমানে ছাপার হরফে ঘোষিত কালোজিরার উপকারিতাও পাওয়া যাবে নিশ্চয় ।


Place your ads here!

Related Articles

ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বর ২০০৯ , মহান বিজয় দিবস

ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বর ২০০৯ , মহান বিজয় দিবস । বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অর্ভ্যূদয় । ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতি লাভ

রবিবার ২৫ আগষ্ট অমর্ত্যর চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী

প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীর বড় ছেলে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির বানিজ্য অনুষদের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তৌকির তাহসিন বারী অমর্ত্য ২০২০

Bulbul Ahmed performance reaches the final act

After four decades of performance Bulbul Ahmed accomplished his final journey to “the undiscovered country from whose bourns no traveller

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment