নাইট কুইন – এক রাতের অতিথি
নাইট কুইন নামটার মধ্যেই কেমন যেন একটা আকর্ষণ আছে রাতের রানী বলে কথা। ফেসবুকে একদিন দেখলাম রুনু আপার বাসায় নাইট কুইন ফুটেছে এবং উনি সেটার ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছেন। দেখে একইসাথে খুবই ভালো লাগলো এবং আফসোসও হল সামনাসামনি দেখতে পারলাম না বলে। কারণ এই ফুল রাতের বেলায় ফুটে এবং ভোর হতে না হতেই বুজে যায়। তাই আমি এই ফুলটার নাম দিয়েছি এক রাতের অতিথি। পরবর্তিতে একদিন অপু ভাই ফেসবুকে ছবি আপলোড করলেন তাঁর বাগানে ফুটে থাকা নাইটকুইনের এবং লিখলেন প্রায় সত্তর শতাংশ ফুল রাত সোয়া নয়টার মধ্যেই ফুটে গেছে।
উনার পোস্টটা দেখে মনেমনে খুবই আনন্দিত হলাম। তাহলে এইবার ভাগ্যদেবী আমার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন বলে মনেহল। অপু ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় সামান্যই। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উনার মেয়ে সুলগ্না নাচ পরিবেশন করে। আমার খুবই অবাক লাগে এই বিদেশ বিভুয়ে বাস করেও উনারা মেয়েকে বাঙালি সংস্কৃতিতে বড় করেছেন। সুলগ্নার নাচ আমাকে খুবই মুগ্ধ করে সেইসাথে আমন্ত্রিত দর্শকদেরও। অপু ভাই অনুষ্ঠানগুলোর উছিলায় বাংলা স্কুলে আসেন আর যেহেতু অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে আমাদের ব্যস্ততা থাকে চরমে তাই উনার সাথে সেইভাবে আলাপ হয়ে উঠেনি। কিন্তু দেখা হলেই বলেন ইয়াকুব কি খবর?
আমি আমার পরিবারের বড় ছেলে তাই বড় ভাইদের আদরের অভাব সবসময়ই অনুভব করি। তাই যখন নতুন কোন মানুষের সাথে পরিচয় হয় তখন বয়স অনুযায়ি সম্পর্ক ঠিক করে নিই। বয়সে কেউ ছোট হলে তাকে সরাসরিই তুমি বলি আর যদি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয় তাহলে তুইও বলি অনেককে। আর বয়োজেষ্ঠ্যদের কাছ থেকে আমিও তুমি ডাক শুনতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বয়োজেষ্ঠ্যদের কাছ থেকে আপনি সম্বোধন শুনলে মনেমনে কেমন জানি এক ধরণের অস্বস্তিবোধ করি। অপু ভাইয়ের মধ্যে দেখলাম এই অভ্যাসটা আছে। উনি পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই বললেন, শোন ইয়াকুব তুমি আমার চেয়ে বয়সে ছোট তাই তোমাকে তুমি করেই বলবো। আমি মনেমনে খুবই খুশি হলাম। এরপর থেকে উনার সাথে দেখা হলেই সামান্য আলাপ হয়।
ফেসবুকে উনার বাসার নাইট কুইনের ছবি দেখে আমি সাথেসাথে উনাকে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিলাম, ভাইয়া আপনার বাসা কোথায়? বেশকিছুদিনের পরিচয় কিন্তু উনার বাসা কোথায় সেটা আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি। তাই একটু লজ্জাও লাগছিল বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে। উনি সাথেসাথে উনার বাসার ঠিকানা পাঠিয়ে দিলেন। আমি লিখলাম, আমরা এক্ষুণি আসছি। উনি উত্তর করলেন, আমরা তোমাদের অপেক্ষায় আছি। আমার মেয়ে তাহিয়ার বান্ধবীরা জেইনারও পাশেই থাকে। উনাদেরকে আমাদের পরিকল্পনার কথা বলার সাথেসাথে উনারাও রাজি হয়ে গেলেন। তারপর আমরা দুই পরিবার অপু ভাইয়ার বাসায় পৌঁছে গেলাম রাত সাড়ে নয়টার মধ্যেই। যেয়ে দরোজায় নক করতেই অপু ভাই দরজা খুলে দিলেন। মনেহল উনি দরজার আশেপাশেই ছিলেন। আমরা উনাদের বসার ঘর পার হয়ে সরাসরি বাসার পিছনে নাইট কুইন গাছের কাছে চলে গেলাম।
নাইট কুইন গাছের কাছে যাওয়ার সাথেসাথে নাকে একটা খুবই সূক্ষ্ম সুবাস এসে লাগলো। বাংলাদেশে আশেপাশে কদম গাছ থাকলে এমন সূক্ষ্ম সুবাস পেতাম। তবে এটার সুবাসটা একটু অন্য ধরণের। অপু ভাইকে সেকথা বলতেই উনি আমাদেরকে নাইট কুইনের জীবনী বলা শুরু করলেন। উনি বললেন এটা আসলে নাইট কুইন ফুলের সুবাস। নাইট কুইনের গাছের জন্য বীজের দরকার হয় না। একটা শাখা মাটিতে ফেলে রাখলেই সেখান থেকে গাছ গজিয়ে যায়। আমি যোগ করলাম, অনেকটা পাথরকুচি গাছের মত? উনি বললেন, হ্যা ঠিক তাই। এছাড়াও এটার ফুলের জন্য আলাদাকরে কুঁড়ি আসে না। শাখার সাথেই আলাদাভাবে একটা শাখা বের হয়ে সেখানে এই ফুল হয়। আর এই ফুল মাত্র এক রাত্রের জন্যই ফুটে। রাত শেষ হবার সাথেসাথে আবার বুজে যায় বলে পাশেই আগের রাত্রে ফোটা ফুলগুলোকে দেখি দিলেন। আমরা দেখলাম সেগুলো ইতোমধ্যেই বুজে গেছে।
নাইট কুইন ফুলের শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য আমাদেরকে খুবই মুগ্ধ করলো। আমরা গাছটার চারপাশ ঘুরেঘুরে দেখতে লাগলাম। আর ছোট্ট রায়ান আর জাহিয়াও ছুটাছুটি করছিল। আমরা একসময় গুণেও ফেললাম মোট কতগুলো ফুল ফুটেছে কিন্তু এখন আর মনে করতে পারছি নাই তবে কুড়িটার উপরে ছিল সেটা মনেআছে। দেখা শেষে আমরা নাইট কুইন গাছ, ফুল, ফুলের শাখা এবং মরে যাওয়া ফুলের বেশকিছু ছবি তুলে নিলাম। তারপর ফেরার উপক্রম করতেই অপু ভাইয়ের ধমক। নাস্তা না খেয়ে যাচ্ছো কোথায়? তারপর বসার ঘরে বসে আরো অনেকক্ষণ আলাপ হল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। ভাবি আগে থেকেই সুস্বাদু নাস্তা তৈরি করে রেখেছিলেন। আলাপ করতে করতে আমরা সেগুলোর সদ্ব্যবহার করে গেলাম যদিও আমরা বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়েই বের হয়েছিলাম। অবশেষে আমরা অপু ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম।
নাইট কুইন ফুল যেমন মাত্র এক রাতের জন্য ফুটে থাকে আমরাও তেমনি শুধুমাত্র এক রাতের জন্য উনাদের বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু অপু ভাইদের কাছ থেকে যে আসকারাটা পেয়েছিলাম সেটা অতুলনীয়। এই যান্ত্রিক নগরে মাঝরাত্রে একজন প্রায় অচেনা অজানা মানুষকে বাসায় আসতে বলতে কতখানি উদার হতে হয় সেটা আমি এখন জানি। এখানে শিডিউল করেও কারো বাড়িতে যাওয়ার আগে অন্ততঃপক্ষে একবারের জন্য হলেও ফোন দিয়ে যেতে হয় সেখানে এই মানুষটা মাত্র ১৫ মিনিটের নোটিশে আমাদের কে বাসায় ডেকে নিয়েছিলেন। অপু ভাইয়ের এই ব্যবহার আমার মনে দাগ কেটেছিল। তাই যখন শুনলাম ভাইয়া অসুস্থ্য তখন থেকেই ভাবছি ভাইয়াকে দেখতে যাবো কিন্তু সময় আর বের করতে পারছি না সেটা নিয়ে মনেমনে খুবই বিচলিত। দোয়াকরি অপু ভাই আবারো সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আবারো আমরা অসময়ে উনার বাসায় হানা দিব এক রাতের অতিথি নাইট কুইন ফুল দেখতে।
Md Yaqub Ali
আমি মোঃ ইয়াকুব আলী। দাদি নামটা রেখেছিলেন। দাদির প্রজ্ঞা দেখে আমি মুগ্ধ। উনি ঠিকই বুঝেছিলেন যে, এই ছেলে বড় হয়ে বেকুবি করবে তাই এমন নাম রেখেছিলেন হয়তোবা। যাইহোক, আমি একজন ডিগ্রিধারী রাজমিস্ত্রি। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে অস্ট্রেলিয়াতে আমার আগমন ২০১৫ সালের মার্চে। আগে থেকেই ফেসবুকে আঁকিবুকি করতাম। ব্যক্তিজীবনে আমি দুইটা জীবের জনক। একটা হচ্ছে পাখি প্রকৃতির, নাম তার টুনটুনি, বয়স আট বছর। আর একজন হচ্ছে বিচ্ছু শ্রেণীর, নাম হচ্ছে কুদ্দুস, বয়স দুই বছর। গিন্নী ডিগ্রিধারী কবিরাজ। এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমি বলি টম এন্ড জেরির সংসার যেখানে একজন মাত্র টম (আমার গিন্নী) আর তিনজন আছে জেরি।
Related Articles
ধন্যবাদ বাংলাদেশের আত্বত্যাগী জনগন ও নির্বাচন কমিশনকে
লিখেছেন এডেলইড থেকে, আরশাদ হোসেন ভূঁইয়া please click attached below pdf files for details
Ami Shadhinota Dekhechi
আমি স্বাধীনতা দেখেছি ! ১৯৬৯’র ১৩ই ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে জনসভা থেকে “জেলের তালা ভাংগবো শেখ মুজিবকে আনবো”
চলমান সময় জাফর হোসেন
পৃথিবী একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । দেশে বিদেশে নানান রকমের সমস্যার ঘনঘটা । এক দিকে অন্ন বাসস্থানের সমস্যা