প্রিয় মানুষের শহর – ৮
আবুল ভাই আর আমিনা বু দু’জনই খুবই সন্মানী পেশায় জড়িত।
আমিনা বু আসলেন। বসে আছেন ড্রয়িং রুমে। কয়েকদিন যাবত ঘুমাতে পারছেন না। কাউকে কথাটা বলতেও পারছেন না। আমাকেও বলতে চাচ্ছেন না। আমি কোন কিছু না বুঝেই আন্দাজের উপর শান্তনা দিতে থাকলাম। যা আমার বহুদিনের মুদ্রা দোষ। এগুলো ছাড়া উচিৎ, চেষ্টা করি কিন্তু বহু দিনের অভ্যাস চলে আসে। না বুঝেই সান্তনা দিতে থাকি মানুষকে। কিছুতেই শান্ত হলেন না আমিনা বু। হয়ত আমার হতাশ চোখ মুখ দেখে ওনার এবার মায়া হলো। ঠিক করলেন – আমাকে বলবেন। বললেন “ওনার ১১ বছরের মেয়েকে নিয়ে ওনি চিন্তিত”। কয়েকদিন থেকে মেয়েটা অভিযোগ করছে “একজন শিশু যৌন নিপীড়নকারী” তাকে প্রা্য় (যখন সুযোগ পায়) দিনে রাতে আক্রমন করছে। ওনি মেয়ের কথা বিশ্বাসও করতে পারছেন না; আবার অবিশ্বাস ও করছেন না। জানেন না মেয়েটাকে কি বলে সান্তনা দিবেন।
আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। বললাম কে সে – ওকি নাম বলেছে? সেই লোক কি আমাদের পরিচিত?
আমার মাথায় আর কাজ করছিল না। বলে কি?
সাথের একজন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে “ইদানিং আমিনা বু’র মাথা কাজ করছে না – গন্ডগোল দেখা দিয়েছে – কি বলতে কি বলে!”
আমি বললাম না – পুলিশে রিপোর্ট করা প্রয়োজন। আমি পুলিশে রিপোর্ট করতে চাই। আমিনা বু’র চোখের পানি আর বাধ মানে না। আমি ভাবলাম মেয়ে তো আর মিথ্যা বলবে না। ওকে জিজ্ঞেস করেই – পুলিশ রিপোর্ট করবো। এখানে আমাদের বাচ্চারা যে পরিবেশে বড় হয় – সে পরিবেশে তারা পারত পক্ষে মিথ্যা বলে না। স্কুল থেকেও শিক্ষা দেয়া হয় – বিশেষ করে নিজের অধিকার ও শরীরের নানান বিষয় গুলো। তা ছাড়া এ রকম এক জন ফেডাফাইল’কে এভাবে বিভিন্ন পরিবারে মিশতে দেয়াও ঠিক না। তাকে চিহ্নিত করাও প্রয়োজন এবং এটা একটা দ্বায়িত্ব আমাদের, আমরা যারা সচেতন।
এমন টাবু বিষয় নিয়ে কেউ আর বাড়াতে আগ্রহ পেলেন না।
সবাই আমাকে নিয়ে বসল। কিছুক্ষন পর আমিনা বু’র স্বামী আবুল ভাইও আসলেন। সবাই মিলে আমাকে এটাই বোঝানো হল যে – সব মিথ্যা। বানানো। আসলে কিছুই হয়নি – হলেও এত গুরতর কিছু না। আমি অযথাই পুলিশ পুলিশ করে ঝামেলা সৃষ্টি করছি। আমি বললাম সব ঠিক আছে – কিন্তু বাচ্চাটার সাথে কথা বলতে সমস্যা কি? কেউ রাজি হল না। সবাই ব্যাপারটা – জাষ্ট পাগলামি বলে – ধুলা বালি, সব আবর্জনা কার্পেটের নিজে রেখে দিল। আমি বাধ্য হলাম চুপ করতে। চুপ হয়ে গেলাম – পুলিশ পুলিশ বাদ দিলাম।
আবুল ভাইকে বললাম, বুবু যা বলছে তা কি সত্যি? – বললেন ওর মাথা ঠিক নাই। বললাম উনি তো এ ব্যাপারটি ছাড়া – অন্য সব বেপারেই ঠিক আছেন, তাই না? অফিস করছেন – মক্কেল দেখছেন? সংসার দেখছেন? কিন্তু এই নিজের মেয়ের ব্যাপারে “মাথা ঠিক নাই” হলো কেন? তা তো আমি বলতে পারবো না বলে এড়িয়ে গেলেন আবুল ভাই। ওনার চোখে অনেক বিচলয়, অনেক ভয় দেখেছি আমি। জানি না কেন।
আমার আর আড্ডার মুড থাকলো না। নিজের রুমে চলে গেলাম – মেহমানদের অন্যদের হাতে রেখেই। যদি পুরা ঘটনাটাই সত্যি হয়। কি হবে তবে মেয়েটার? সারা জীবনের জন্যে – আপনদের কাছেই পর হয়ে থাকবে সে। এই মানসিক আঘাত সে কি ভাবে সামলাবে? জীবনে কোন পুরুষ কে কি “মানুষ” রুপে ভাববে আর? মাথা কাজ করে না। আমরা আসলে কি ধরনের মানষিকতা নিয়ে জন্মের পর বড় হয়েছি, বেড়ে উঠেছি, নিজেদের শিক্ষিত দাবি করছি!
মনে মনে দোয়া করছি গঠনাটা যেন পুরোই মিথ্যা হয় – বানোয়াট যেন হয় পুরোপুরি। ভাল থেকো ছোট রাজকন্যা, ভাল থেকো মা।
হয়ত জন্ম নেয়ার পর থেকেই আমি, আমরা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠি – একটা নিস্পাপ প্রাকৃতীক পরিবেশে। যেমনি, অন্য সব মানষিকতা মূল্যবোধের সাথে বড় হই – তেমনি সাথে সাথে গড়ে উঠে ধর্ষক মানষিকতাও। হয়ত মনের অজান্তেই। সমাজের বিচারহীনতা – ধর্মীয়, পারিবারিক গোড়ামী – অন্ধত্ব – আমাদের ভিতরকার কাল শক্তিকে আরো শক্তিশালী হতে সাহস দেয়। ব্যক্তি, পরিবার, দেশ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি সব কিছুই আমাদেরকে পরোক্ষ ভাবে হলেও ধর্ষক বানিয়ে ছাড়ে। মুখোশ পরেই আমরা বেড়ে উঠি। মুখে এক, মনে আরেক। হয়ে উঠি – এক বিশাল হিপোক্রেট সমাজের ধারক বাহক। সত্যি মিথ্যা – জীবনের সকল ক্ষেত্রেই – কম বেশি ধর্ষকের ভুমিকায় লেগে থাকি জীবনের শেষ পর্যন্ত।
Related Articles
সামারে একদিন: পর্ব -১ ওয়াসিম খান পলাশ প্যারিস থেকে
এখানে প্রায় সবাই সামারকে উপভোগ করার আপ্রান চেষ্টা করে । সামার আসে খুব অল্প সময়ের জন্য। দেখতে দেখতে দিন, সপ্তাহ
Padma Bridge Saga
On September 21 the World Bank (WB) at a press release revived the $1.2 billion loan on the Padma Bridge
ki bolbo?
Raising such things needs strength and deep concern for children. Thanks S. Manik