কাল বাংলাদেশের 'আফগান পরীক্ষা'
মাসুদ পারভেজ: বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ বলে চাপ থাকাটা অস্বাভাবিক না। তবে তার চেয়ে বেশি থাকার কথা ছিল রোমাঞ্চ। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান হওয়ায় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুটা যে প্রত্যাশিত! কিন্তু নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ দলে এখন রোমাঞ্চ-বাতাসের চেয়ে চাপের হাওয়াটাই প্রবল। গত বছরের এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে হারের ইতিহাস এর বড় কারণ। ছোট নয় অস্ট্রেলিয়ায় এসে চার প্রস্তুতি ম্যাচের সবকটিতে হারার ফলও।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মুখ থেকে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোচ্ছে। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে কাল যেমন মাহমুদ উল্লাহ বলে গেলেন, ‘আফগানিস্তানকে নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন না। কাজ করছি নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে। যদি সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে ওদের আমরা হারাতে পারব।’ এশিয়া কাপে হারের কথা মনে করিয়েও টলানো যায়নি তাঁর আত্মবিশ্বাস। প্রতিশোধের আলোচনাতেও নেই আগ্রহ, ‘হ্যাঁ, গত এশিয়া কাপে ওরা আমাদের হারিয়েছিল। কিন্তু এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কিন্তু ওদের ঠিকই হারিয়েছি। প্রতিশোধটা মনে হয় তখনই নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা চাই বিশ্বকাপের শুরুটা যেন খুব ভালোভাবে করতে পারি।’
ওই ভালোভাবে শুরুর দিকেই এখন পুরো বাংলাদেশের চোখ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলে বিশ্বকাপের স্বপ্নঘুড়ি উড়বে আরো ওপরে। আর হেরে গেলে ভো-কাট্টা। দুটি অনানুষ্ঠানিক এবং দুটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচের মধ্যে একটিও জিততে না পারাটা দলের আত্মবিশ্বাসে ঘুণ ধরানোর কথা। কিন্তু প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের মতো এই ব্যাপারেও গুরুত্ব দিতে নারাজ মাহমুদ, ‘অনুশীলন ম্যাচে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। কারণ বিশ্বকাপের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট সবাইকে খেলার সুযোগ দিতে চেয়েছে। প্রস্তুতির দিক দিয়ে তাই পরশুর ম্যাচ নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ প্রতিপক্ষ কাগজ-কলমের শক্তিতে পিছিয়ে বেশ। বাংলাদেশের ওপর তাই ‘জিততেই হবে’ গোছের চাপ রয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারেও ওই অলরাউন্ডারের সোজাসাপ্টা কথা, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ তো সব সময়ই থাকবে। এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পারফর্ম করতে হয়। এই ম্যাচে আমরা চাপ নিয়ে ভাবতে চাইছি না। ইতিবাচক থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার দিকে দিতে চাই মনোযোগ।’
ঘরের মাঠে দুর্বার, বাইরে দুর্বল- একসময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের শক্তি-দুর্বলতাকে সরলীকরণ করা হতো এভাবেই। অব্যশই যৌক্তিক কারণে। বাংলাদেশের মাটিতেও এখন বাংলাদেশকে সমঝে চলে বিশ্বের সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ। স্পিন-ভেলকিতে পরাশক্তিদের নাস্তানাবুদ করার রেকর্ডের পাতাটি সমৃদ্ধই হচ্ছে তাই। বিদেশের মাটিতে খেলার ক্ষেত্রে আবার সেটি বলা যাবে না। বিশেষত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেটে স্পিন-অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। গ্লাসের এই অর্ধেক শূন্য না দেখে অর্ধেক পূর্ণ দেখতে চাইছেন মাহমুদ। ভরসা রাখছেন তাই পেসারদের ওপর, ‘আমাদের উইকেটে স্পিনারদের যেমন ভূমিকা থাকে, এখানে পেসারদের সেটি থাকবে। পেসাররা সবাই ভালো ছন্দে আছে। রুবেল দারুণ বোলিং করছে। মাশরাফি ভাই, আল-আমিন, তাসকিনও।’ আর স্পিনারদের কাজ? ‘আমরা লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে গতির বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছি। সে ক্ষেত্রে এই উইকেটেও ভালো ফল পাব’- মাহমুদের দাবি।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেট কন্ডিশনটা স্পিনারদের জন্যই যে শুধু চ্যালেঞ্জিং, তা না। ব্যাটসম্যানদেরও নিয়মিত পরীক্ষা নেবে প্রতিপক্ষ দলের ফাস্ট বোলাররা। সে পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত ঘোষণা করেছেন মাহমুদ, ‘এখানে কন্ডিশন আলাদা, খেলা হবে দুই প্রান্ত থেকে দুটো নতুন বলে। পরে ব্যাটিং করলে উইকেট খানিকটা শুকিয়ে হয়তো ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হবে। আগে ব্যাটিং করলে ওই ময়েশ্চারের কারণে চ্যালেঞ্জিং হবে। এসব মাথায় রেখে খেলার জন্য আমরা প্রস্তুত।’ টপ অর্ডার থেকে বড় রান আসার ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি, ‘এই অভ্যাস তৈরির জন্য অনুশীলন করছি আমরা। এখন ম্যাচে গিয়ে সেটি দেখাতে হবে। আর আমাদের ব্যাটিং গভীরতা যেহেতু বেশ, তাই টপ অর্ডার ভালো করলে দলকে বড় স্কোর এনে দিতে পারব।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক সেটিকে অঘটন বলতে রাজি নন। কাল বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা মাহমুদের কণ্ঠেও এর প্রতিধ্বনি, ‘অঘটন ঘটানোর কথা বলতে চাই না। যদি সামর্থ্যের সবটা দিয়ে খেলতে পারি, তাহলে বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে আমাদের। এখন আমাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপে ভালো শুরু করা।’
কাল সেটি না করতে পারলে নিজেরাই যে অঘটনের শিকার হয়ে যাবে বাংলাদেশ!
Requested by: Fazlul Bari