বাংলাদেশ যখন ভারতীয় ভোটের রাজনীতির কেন্দ্রে, একজন মোদী ও মমতা

বাংলাদেশ যখন ভারতীয় ভোটের রাজনীতির কেন্দ্রে, একজন মোদী ও মমতা

শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারী নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নরেন্দ্র মোদী। ব্যাখ্যা দিলেন তাঁর আগের বারের মন্তব্যের। কিন্তু তাতে বিতর্ক কমল না। বরং, বাংলার মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টার জন্য মোদীকে গ্রেফতারের দাবি তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্নে তৃণমূলের মতোই কড়া অবস্থান নিয়ে মোদীর বক্তব্য খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন সিপিএম নেতা বিমান বসুও।

বাঁকুড়ার তামলিবাঁধ স্টেডিয়ামের জনসভায় রবিবার বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীরা এ দেশে স্বাগত। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের ফিরে যেতেই হবে। একই সঙ্গে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে মোদী তৃণমূল নেত্রীকে এক হাত নিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থী প্রসঙ্গে মোদী এ দিন যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা বিজেপি-র দীর্ঘ দিনের অবস্থান।

গত সপ্তাহে শ্রীরামপুরের সভায় মোদী বলে গিয়েছিলেন, “১৯৪৭ সালের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা বিছানা-বেডিং বেঁধে রাখুন। ১৬ মে-র পরে তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।”

তৃণমূল নেত্রী তখনই মোদীর বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলছিলেন। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ এর পরে রাজ্যে এসে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, যাঁরা বিনা ভিসা-পাসপোর্টে এখানে এসেছেন, তাঁদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়াই উচিত। মোদীও এ দিন স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে দু’ধরনের লোক এসেছে। এক দল শরণার্থী, যাঁদের জোর করে ওই দেশ থেকে ধর্মের নামে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দল বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। মোদীর কথায়, “পৃথিবীর যে দেশেই হিন্দুস্তানি রয়েছেন, পাসপোর্টের রং তাঁদের যা-ই হোক, তাঁরা হিন্দুস্তানে আসবেন না? কোথায় যাবেন তাঁরা?” শরণার্থীদের রক্ষা করা তাঁদের কর্তব্য বলেও জানিয়েছেন মোদী। কিন্তু ‘ভোটব্যাঙ্কের’ কথা ভেবে যে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকানো হয়েছে বলে বিজেপি মনে করে, তাদের ফিরে যেতে হবেই বলে মোদী মন্তব্য করেছেন।

মোদীর এ দিনের বক্তব্যের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা ঘৃণা ছড়াচ্ছেন, হিংসায় উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হবে না? কৃষ্ণনগরের কারবালার মাঠে জনসভায় তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া, “বাংলার একটা মানুষের গায়ে হাত তুলতে দেব না! নির্বাচন কমিশনকে বলব, তাঁকে গ্রেফতার করুক। কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে যাক! এই ব্যক্তি রাজনীতিতে শোভা পায় না!” তৃণমূল নেত্রীর চ্যালেঞ্জ, “আমি এখনও বলছি, একটা লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখ! কে শরণার্থী, কে অনুপ্রবেশকারী, তা তুমি বলার কে? এরা সবাই নাগরিক। বাংলাদেশের যুদ্ধের আগে এসেছে। বাংলার বাইরে থেকে এসে এ কথা কেউ বলতে পারেন না!”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও মোদীর কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এ রাজ্যেও মোদী যে ভাষায় কথা বলছেন, তা ভয়ঙ্কর!

ওঁর বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বিমানবাবুর আশঙ্কা, মোদী যা বলতে শুরু করেছেন, এর পরে হয়তো বলবেন ‘বঙ্গালি খেদাও।’

তাঁর অভিযোগ, “কিছু ভোটের জন্য মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছেন মোদী। বিভ্রান্ত করতে চাইছেন রাজ্যের বাকি ২৩টি কেন্দ্রের ভোটারদের।” পাশের রাজ্য অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করে এ রাজ্যে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন মমতা-বিমান, দু’জনেই।

source: www.anadabazar.com


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment