অস্কারের গৌরব ছোঁয়ায় কক্সবাজারের নাশিত জামান!

অস্কারের গৌরব ছোঁয়ায় কক্সবাজারের নাশিত জামান!

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : অস্কারের গৌরবে শেষটায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কক্সবাজারের নাশিত জামান গর্বিত হতে পেরেছেন। গত ২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রপুরী হলিউডে অনুষ্ঠিত ৮৬তম একাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে ওয়াল্ট ডিসনির অ্যানিমেটেড পুর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি ‘ফ্রোজেন’ সে গৌরবটি অর্জন করেছে। তাতে ২০০৬ সালে কম্পিউটার গ্রাফিক্সে নিউ ইয়র্কের ইথাকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর নাশিত জামান সবিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

ড্রিম ওয়ার্কস অ্যানিমেশন এসকেজি-র ‘দ্য ক্রোডস’, ইউনিভার্সাল পিকচার্সের জন্য ইল্যুমিনেশন এন্টারটেইনমেন্টের তৈরি ‘ডেসপিকাবল মি টু’, জাপানি এনিমেটর হায়াও মিয়াজাকির ‘দ্য উইন্ড রাইজেস’ এবং ফ্রান্সের ‘আর্নেস্ট অ্রান্ড সেলেস্টিন’-কে টপকে এই ডিসনি ছায়াছবি ‘ফ্রোজেন’ অস্কারটি জিতে নিতে সক্ষম হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছবির দুই পরিচালক ও প্রযোজক যথাক্রমে ক্রিস বাক, জেনিফার লি ও পিটার ডেল ভেকো ওই পুরস্কারটি গ্রহন করেন। অবশ্য ক্রিস বাক সে পুরস্কারটি গত বছর ক্যালিফোর্নিয়ার হাইওয়েতে নিহত সঙ্গীতজ্ঞ পুত্র রাইডারের স্মরণে উৎসর্গ করেছেন। বলেছেন, ‘সে আকাশ থেকে আমাদের দেখছে’।

ফ্রোজেন ছায়াছবির কাহিনীটি হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন রচিত ‘দ্য স্নো কুইন’ থেকে সংগৃহীত। তাতে ক্রিস্টিন বেলের কন্ঠে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাজকুমারী তার বোন, রানীর সন্ধানে ছুটে গেছে হিমালয়তুল্য পাহাড়ে, যার হাতের ছোঁয়ায় রাজ্যের সব কিছু সুদীর্ঘ শীতের প্রকোপে বরফাচ্ছন্ন হয়।

সেটাই অ্যানিমেশনের অপরূপ কৌশলে র‌্যানট্রেকের হিসেবে থিয়েটারের ১ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি অর্থে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যসফল দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং ২০১৪ সালের একাডেমি পুরস্কার অস্কারের জন্য বিবেচিত হয়। আর সেই চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের বিশেষ ক্রিয়াকৌশল ঘটিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিশাত জামান। যদিও ‘লাইটার অ্যান্ড কম্পোজিটর’ হিসেবে ছবির ক্রু-টিমের অ্যানিমেশন ডিপার্টমেন্টে তার অবস্থান।

২০০৭ সাল থেকে নাশিত জামান বেশ কয়েকটি দর্শকনন্দিত ছায়াছবির ফিল্মোগ্রাফির ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও অ্যানিমেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- বিউউল্ফ (থ্রি-ডি কালার ও লাইটিংয়ে সহযোগি কারিগরী পরিচালক), জি-ফোর্স (লাইটার অ্যান্ড কম্পোজিটর), ট্যাঙ্গেল্ড (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিরেক্টর) , দ্য স্মার্ফস (লাইটিং অ্যান্ড কম্পেজিটিং), এলভিন অ্যান্ড চিপ মাঙ্কস (কম্পেজিটিং থ্রি-ডি), লাইফ অব পাই (কম্পোজিটর), র‌্যাক-ইট রাল্ফ (লাইটার অ্যান্ড কম্পোজিটর) এবং শেষটায় গত বছর ফ্রোজেন। ২০০৮ সাল বাদে যথাক্রমে প্রতি বছরই একটি করে এবং ২০১১-২০১২ সালে দুটি করে ছায়াছবিতে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ডিসনির ট্যাঙ্গেল্ড ছায়াছবিতে একত্রে কাজ করার সময় অপর সহকর্মী জ্যাকুলিন পিটের সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘কিকস্ট্রার্টার’ বলে একটি ১ বিলিয়ন ডলার উত্তোলনের একটি বিশেষ প্রকল্প, যা থেকে অনুরূপ পেশায় নবাগতদের ‘ওয়ান পার পার্সন, অ্যান অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম’ তৈরিতে যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বারব্যাংকে অবস্থিত ওয়াল্ট ডিসনি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে লাইটিং বিভাগে এবং লস এঞ্জেলসের ট্রেসবেক স্টুডিওর লেখক/পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার আগে রিদম অ্যান্ড হিউস স্টুডিওস ও সোনি পিকচার্স ইমেজওয়ার্কসে কম্পিজিটর ও লাইটিং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

নাশিত জামান বাংলাদেশের সাবেক শ্রমমন্ত্রী মৌলভী ফরিদ আহমেদের প্রথমপুত্র হারুনুজ্জামানের বড় মেয়ে। ১৯৭৮ সালে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট সম্পন্ন শেষে হারুনুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন এবং সেইসূত্রে নাশিতেরও জন্ম সেখানে। হারুনুজ্জামানের অপর দুই সহোদর যথাক্রমে মরহুম খালেকুজ্জামান ও ইঞ্জিনিয়ার সহীদুজ্জামান কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য। সে কারণে কক্সবাজারকে নিয়ে নাশিতের গর্বেরও কমতি নেই।

ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com

original source at http://www.coxsbazarnews.com/archives/88446 | http://www.priyo.com/2014/03/06/57270.html


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment