বিশ্ব গণমাধ্যমে কাদের মোল্লার ফাঁসির খবর
রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, বাংলাদেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতে ইসলামীর স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে কোনো কোনো প্রতিবেদনে।
বিবিসি ও রয়টার্সসহ অনেক গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার থেকে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের মূল প্রতিবেদন করে রাখে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির খবরটি।
মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষ মুহূর্তে আসামিপক্ষের এক আবেদনে চেম্বার বিচারপতির আদেশে তা পিছিয়ে যাওয়া এবং সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও স্থান পায় এসব প্রতিবেদনে।
কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা, ভারতের এনডিটিভি ও পাকিস্তানের দৈনিক ডনের অনলাইন সংস্করণে সর্বাধিকপঠিত খবরের শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়মুক্তির এই খবরটি।
প্রায় সবকটি প্রতিবেদনে কাদের মোল্লার রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মিরপুরে গণহত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতাকামীদের গণহত্যায় তার ইন্ধন দেয়ার বিষয়টিও উঠে আসে।
বিবিসি
বিবিসি তাদের শিরোনাম করে ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি (বাংলাদেশ ইসলামিস্ট আব্দুল কাদের মোল্লা হ্যাংগড ফর ওয়ার ক্রাইমস)।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর মিরপুরে কাদের মোল্লার নৃশংসতার দায়ে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন তাকে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচয় দেয়।
তবে আদালতের কাছে তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি।
ফাইল ছবি ফাইল ছবি
কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক সময় বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ১মিনিট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ আগে মোল্লার সঙ্গে দেখা করে এসে তার স্বজনরা জানান, তাকে দেখে বেশ শান্তই মনে হয়েছে।
কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিলের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ইসলামী আন্দোলন করার জন্যই তার বাবাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে। আর সেজন্য তিনি (মোল্লা) গর্বিত বলে তাদেরকে জানিয়েছেন।
কাদের মোল্লার দল জামায়াতে ইসলামী ফাঁসির প্রতিশোধ নেয়ার হুঁমকি দিয়েছে এবং এর প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে।
ফাঁসির খবরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে জামায়াত নেতাদের সমালোচনাও উঠে আসে।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্ন তোলার বিষয়টিও সংবাদের শেষাংশে উল্লেখ করে বিবিসি।
রয়টার্স
কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো পর পর দুটি খবর ছাপে রয়টার্স।
‘বাংলাদেশে ইসলামী নেতার ফাঁসি, রাজপথে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে
বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে এক মাসের বেশি সময় রাজপথে সহিংসতার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় করা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
বিচার ও রায় নিয়ে নাটকীয় এক সপ্তাহ পার হওয়ার পর তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
রায়ের পর বিভিন্ন স্থানে কাদের মোল্লার সমর্থকদের সহিংসতা এবং রাজধানীতে তার ফাঁসি প্রত্যাশীদের উল্লাসের কথা তুলে ধরে রয়টার্সের খবরে বলা হয়-মোল্লার বিচারের মধ্য দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশটিতে কিছুটা বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে কাদের মোল্লার ফাঁসির পক্ষে বিপুল জনসমর্থন থাকার কথাটি উল্লেখ করা করা হয়।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দল, জামায়াতে ইসলামী এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রশ্ন তোলার বিষয়টিও রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সিএনএন
সিএনএন তাদের শিরোনাম করেছে ‘জাতিসংঘের বারণ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ইসলামপন্থী নেতার ফাঁসি’।
প্রতিবেদক তানিয়া রশীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানায়, ফাঁসি না দিতে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে এক ইসলামী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
প্রতিবেদনে রায় কার্যকরের পর বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জামায়াত সহিংস বিক্ষোভ দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।
আল জাজিরা
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিরোধী দলের নেতাকে ফাঁসি দেয়ার পর বাংলাদেশে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বেড়েছে। দেশটিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েই চলেছে।
সৌদি গেজেট
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সৌদি গেজেট বাংলাদেশের সরকারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের খবর প্রকাশ করে।
সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে সৌদি গেজেট ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে এদেশের কিছু ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়ার কথাও তুলে ধরে।
মুক্তিযুদ্ধে শত্রুবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের তিন লাখ মানুষ নিহত হন এবং নয় মাসের যুদ্ধে দুই লাখের বেশি নারী ধর্ষিত হন বলে সৌদি গেজেট তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
এনডিটিভি
কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অন্যতম সম্প্রচার মাধ্যম এনডিটিভির অনলাইনে শিরোনাম ছিলো ‘বাংলাদেশে ইসালামিক নেতার মৃত্যুদণ্ড, রাজপথে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ’।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্যের সহযোগিতা নেয়া হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতারও কথা তুলে ধরে এনডিটিভি।
Source: http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article714343.bdnews