একজন মাকসুদুল আলম এবং বহিরবিশ্বে ইতিবাচক বাংলাদেশ
মাকসুদুল আলমের আস্তিনে আরও কত কী আছে, তা নিয়ে বিশ্বের জিনোম গবেষকদের আগ্রহের সীমা নেই। ২০১০ সালে তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পর সবাই ভেবেছিলেন, এখানেই হয়তো শেষ। কিন্তু ২০১২-তে এসে মাকসুদুলের নেতৃত্বে বিশ্বের ৫০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের প্রধান শত্রু ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। আবারও চমকে উঠল বিশ্ব।পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এর নতুন জীবন দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা না থামতেই সুদূর নিউজিল্যান্ড থেকে এল আরেক চমকপ্রদ খবর। মহা বিপদে আছেন সেখানকার চাষিরা। তাঁদের অন্যতম রপ্তানি পণ্য ও জাতীয় ফল ‘কিউই’ তিন বছর ধরে পিএসএ নামক এক ছত্রাকের আক্রমণে মারা যাচ্ছে। ওপরে সোনালি আবরণ ও ভেতরে সবুজাভ এই সুস্বাদু ফলের রপ্তানি গত এক বছরে ৪৩ শতাংশ কমে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বাঘা বাঘা জৈব প্রযুক্তিবিদেরা ওই ছত্রাক নির্মূলের সূত্র এখনো বের করতে পারেননি। অন্য উন্নত দেশের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের ডেকেও কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না তাঁরা।শেষ পর্যন্ত সারা দুনিয়া চষে বেরিয়ে তাঁদের কাছে খবর এল, ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানীরাই পারবেন কিউই ফলের শত্রুর প্রাণভোমরাকে বধ করতে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম গবেষণাকেন্দ্রে গবেষণারত আমাদের মাকসুদুল আলমের কাছে খবর পাঠাল নিউজিল্যান্ডের কিউই উৎপাদনকারী সমিতি। বলল, যেকোনো শর্তে তারা রাজি, শুধু ওই ছত্রাক নির্মূলের রহস্যটাকে ভেদ করে দিতে হবে।বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী জার্নাল বিএমসি জিনোমিক্সে ইতিমধ্যে ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনের ওপর লেখা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়ে গেছে। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) কাছে করা ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনের মেধাস্বত্বের আবেদন প্রাথমিকভাবে গ্রহণের পর এবার তা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়েছে। ফলে ছত্রাকের জীবনরহস্যকেন্দ্রিক যেকোনো গবেষণার স্বত্বাধিকার নীতিগতভাবে বাংলাদেশ পাবে। এটা মেনে নিয়েই নিউজিল্যান্ডের কিউই চাষিদের সঙ্গে মাকসুদুল আলম ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনাও হয়ে গেছে। এখন দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হলে মাকসুদুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা কিউই ফলের প্রধান শত্রু পিএসএ ছত্রাক বধের মিশনে নামবেন। গত বছর কিউই ফল রপ্তানি থেকে নিউজিল্যান্ডের মোট আয় হয়েছিল এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার। কিউই চাষ করে নিউজিল্যান্ডের চাষিরা খরচ বাদ দিয়ে প্রতি হেক্টর জমি থেকে কমপক্ষে চার লাখ ডলার আয় করতেন। ওই আয়ও এখন অর্ধেকে নেমে গেছে। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তাঁরা। আর ওই অন্ধকারে আলোর দিশা নিয়ে এসেছে মাকসুদুলের দল।
মাকসুদুল আলম নিউজিল্যান্ডের চাষিদের অনুরোধকে আন্তরিকভাবে বিবেচনায় নিয়েছেন। এত দিন আমরা বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য উন্নত দেশের কাছে গিয়েছি। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীদের অর্জন এখন উন্নত দেশের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া তো বটেই। প্রিয় অস্ট্রেলিয়া এই কৃতি মানুষটির কাছে কৃতজ্ঞ বিশ্বে আমাদের ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরার জন্য।
Source: www.prothom-alo.com