Its a signal for Capital Dhaka
রাজধানীর জন্য সতর্কসংকেত – অরুণ কর্মকার
গত শুক্রবার রাতে দুবার এবং পরদিন শনিবার ঈদের দিন দুপুরে আরও একবার মাঝারি মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এই ভূমিকম্পকে ঢাকার জন্য সতর্কসংকেত বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দুটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল ঢাকার খুব কাছে চাঁদপুর এলাকা। ফলে অপরিকল্পিত ও যেনতেনভাবে গড়ে ওঠা শহর ঢাকার জন্য এই কম্পন বড় বিপত্তির ইঙ্গিত বহন করে।
গত ৩১ জুলাইও চাঁদপুরের হাইমচরে মাঝারি মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে এ রকম কয়েক দফা ভূমিকম্প অদূর ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের সংকেতবাহী হতে পারে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি নিয়ে বিভ্রান্তি: শনিবার রাত ১১টা ২৪ মিনিটে সংঘটিত ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ও মাত্রা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ওই ভূমিকম্পটি সম্পর্কে আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (ইউএসজিএস), ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও নেপালের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে (এরিয়াল ডিস্টান্স) চাঁদপুরের মতলব এলাকায়। আর রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৮।
অপরদিকে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে এর উৎপত্তিস্থল বলা হয়েছে মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ সীমান্তে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা বলা হয়েছে ৪ দশমিক ৬।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মো. মজিদুল ইসলাম গতকাল তাঁর অফিস কক্ষে প্রথম আলোকে বলেন, পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (অবজারভেটরি) সংখ্যা কম থাকায় তাঁদের হাতে তথ্যও আসে কম। তা ছাড়া ফাইবার অপটিক লিংক এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা থাকায় অনেক সময় তাঁদের তথ্যে গরমিল হতে পারে। তবে সেটা তাঁরা পরে সংশোধন করে নথিভুক্ত করেন। তিনি বলেন, একইভাবে ইউএসজিএসের তথ্যেও অনেক সময় গরমিল হয়। ঘটনার কয়েক দিন পর সংশোধন করার নজিরও ইউএসজিএসের আছে বলে তিনি দাবি করেন। শনিবার রাতের ওই ভূমিকম্পের তথ্য তাঁরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাইরাসের আক্রমণে ওয়েবসাইটটি কাজ করছে না। এটি ঠিক করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মেহেদী আহম্মদ আনসারী এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ টি এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইউএসজিএসের তথ্যই সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ এর চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা কোথাও নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, অনেকগুলো তথ্যের মধ্যে দু-একটি ভুল থাকায় তাদের প্রতিবেদনে চাঁদপুরের জায়গায় মাদারীপুর-গোপালগঞ্জ সীমান্ত হয়েছে।
এ বছর ১৯টি: বাংলাদেশ ঘিরে এ বছর এখন পর্যন্ত সংঘটিত ১৯টি ভূমিকম্প নথিভুক্ত (রেকর্ড) করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ছাড়া সবগুলোই রিখটার স্কেলে ৪ থেকে ৫ দশমিক ৪ মাত্রার। অন্য দুটি ৪ মাত্রার নিচে। এই ১৯টির মধ্যে চারটির উৎপত্তিস্থল (এপিসেন্টার) দেশের অভ্যন্তরে। বাকিগুলোর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ-মিয়ানমার ও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায়। এগুলোর সবই বাংলাদেশ অঞ্চলে বড় কোনো ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু এর মধ্যে যে চারটির উৎপত্তিস্থল দেশের অভ্যন্তরে (একটি ময়মনসিংহের ফুলপুর ও অন্য তিনটি চাঁদপুর এলাকায়), সেগুলো আরও বেশি বিপজ্জনক, বিশেষ করে চাঁদপুর এলাকার তিনটি।
চাঁদপুর বেশি বিপজ্জনক কেন: গত দেড় মাসে চাঁদপুর তিনটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়ায় ঢাকার জন্য তা বেশি বিপজ্জনক মনে করা হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে মেহেদী আহম্মদ আনসারী বলেন, প্রথমত, এলাকাটি ঢাকার খুব কাছে। এখানে আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হলে তা ঢাকাকে দারুণভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ছয়টি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নিয়ে গবেষণা করে তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই উৎপত্তিস্থলগুলো থেকে আগেকার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের আড়াই শ থেকে তিন শ বছরের মধ্যে আবারও একই ধরনের ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, এই ছয়টি স্থানের একটি হচ্ছে সীতাকুণ্ড চ্যুতি, যেখান থেকে ১৭৬২ সালে রিখটার স্কেলে সাতেরও বেশি মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছিল। চাঁদপুরের যে এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে, সেটি ওই চ্যুতির সন্নিহিত এলাকা। তাই ওই এলাকাটি বড় কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হতে পারে।
এ টি এম আসাদুজ্জামান বলেন, চাঁদপুরের ওই অঞ্চলে বড় কোনো ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি না থাকলেও এলাকাটি অনেকগুলো ছোট ছোট চ্যুতির একটি সংযোগস্থল (টেকটোনিক প্লেট জংশন)। ফলে এলাকাটি বড় কোনো ভূমিকম্প সৃষ্টির সহায়ক হতে পারে। আর তা হলে ঢাকার জন্য তা বিপজ্জনক হবে। কারণ, এলাকাটি ঢাকার কাছে। ঢাকার এত কাছের কোনো এলাকা সুদীর্ঘকাল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয়েছে বলে জানা যায় না।
ঢাকার বড় বিপদ কী: সব বিশেষজ্ঞই একমত যে ভূমিকম্পে ঢাকার সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ ভরাট করা জমিতে নিম্নমানের ভবন তৈরি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আরজুমান্দ হাবিব বলেন, ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক ঝুঁকির চেয়ে ঢাকার বড় বিপদের কারণ হবে মানুষের সৃষ্ট ঝুঁকি। যেখানে-সেখানে খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ভরাট করে যেসব বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলো তো বড় কোনো ভূমিকম্পে টিকবে না।
মেহেদী আহম্মদ আনসারী বলেন, মানুষ যত্রতত্র জমি কিনেই চলেছে। ইমারত নির্মাণ নীতিমালা না মেনে এখনো ভরাট করা জমিতে বাড়িঘর তৈরি করা হচ্ছে। বড় কোনো ভূমিকম্পের সময় এগুলোই হবে ঢাকায় ধ্বংসযজ্ঞের প্রধান কারণ। এ ব্যাপারে নগরবাসী এখনো তেমন সচেতন নয়। প্রতি বর্গফুটে মাত্র ১০ টাকা বেশি ব্যয় করে ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়িঘর তৈরির কথাও কেউ কানে তুলছে না।
link requested by : Borhanuddin Shafi Bijoy | original source http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-09-14/news/93298