BD Minister Profile: একজন দিলীপ বড়ুয়ার জীবন: ইস এমন যদি সবাই হত
একজন দিলীপ বড়ুয়ার জীবন
দিলীপ বড়ুয়া। সাম্যবাদী দলের নেতা। অনেকটা নাটকীয়ভাবে মহাজোট মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রী হবেন ভাবনার মধ্যে ছিল। তবে বাস্তবে রূপ পাবে তা বিশ্বাস করতে পারেননি। মন্ত্রিত্বের দৌড়ে রাশেদ খান মেনন ছিলেন এগিয়ে, অন্তত মিডিয়ায়। মনোনয়ন দেয়ার আগে শেখ হাসিনা রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও দিলীপ বড়–য়াকে অপশন দিয়েছিলেন। বলেছিলেন এমপি হতে চান, নাকি মন্ত্রী। প্রথম দু’জন এমপি হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। দিলীপ বড়–য়া চুপচাপ থাকেন। মনোনয়ন নেয়ার জন্য দরখাস্ত পর্যন্ত করেননি। শেখ হাসিনা তখনই মনঃস্থির করেন দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করবেন জোট ক্ষমতায় এলে।
২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে সুযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে কপাল পোড়ে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু’র। মিডিয়া জুড়ে ছিলেন এই দুজন। দিলীপ বড়–য়ার নাম একদম অনুপস্থিত। এতে হতাশ হন বড়–য়া। কিন্তু কে জানতো বাংলা প্রবাদ বাক্যটি পুরোপুরি বাস্তবে তার সামনে এসে হাজির হবে ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। একেবারে শিল্প মন্ত্রণালয় পেয়ে যান। আগের মতোই জীবনযাপন করছেন। থাকছেন আগের ভাড়া বাড়িতেই। এখনও বাসা থেকে খাবার নিয়ে যান অফিসে। লাঞ্চ করেন না অফিসের পয়সায়। ঢাকায় তার কোন বাড়ি-গাড়ি নেই। নেই কোন ব্যাংক ব্যালেন্স। মোবাইল ফোনটিও কিনে দিয়েছে মেয়ে। স্ত্রীর টাকায় সংসার চলে। রাজনীতি করেন বলে শাশুড়ি তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চাননি। বিয়ের শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন তার মা। শুরুতে সংসার পাতেন ঢাকায় বোনের সঙ্গে সাবলেটে একটি বাসায়। আগে চড়ে বেড়াতেন রিকশা আর বাসে। এখন চড়েন সরকারের গাড়িতে। সংসারের খরচ কমাতে খান ভর্তা আর ছোট মাছের চচ্চরি। এখন মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বেতনের অর্ধেক টাকা সংসারে আর অর্ধেকটা দলের জন্য ব্যয় করতে চান। জীবনে আট মাস চাকরি করলেও রাজনীতি তার পেশা।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মন্ত্রিত্ব পেয়ে বড় লোক হতে চাই না। জবাবদিহি রাখতে চাই। সৎ জীবন যাপন করেছি সব সময়। এটা মন্ত্রী হওয়ার পরও থাকবে। স্ত্রী তৃপ্তি বড়–য়া জানান, তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৪ সালে। ওই সময় তিনি কেবল গ্র্যাজুয়েশনের পাট চুকিয়েছেন। দিলীপ বড়–য়া জীবনের বেশির ভাগ সময়ই ব্যয় করেছেন তার রাজনীতির পেছনে। এটা করতে গিয়ে সংসারের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারেননি। তাদের চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ে ডাক্তার আর এক মেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ছে। এই চার মেয়ের পড়ালেখার খরচ দিলীপ বড়–য়া দেননি। দিয়েছেন তার স্ত্রী, মা, ভাই ও বোনেরা। দিলীপ বড়–য়ার ভাই তাকে একটি দোকান করে দিয়েছেন। সেখান থেকে মাসে আয় হয় ১০ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রী একটি বেসরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রধান। বেতন পান সব মিলিয়ে ১৯ হাজার টাকা। স্ত্রী’র আয়েই চলে তাদের সংসার। দিলীপ বড়–য়ার নামে নেই কোন এপিএস, ডিপিএস, এফডিআর। ঢাকার পুরো জীবনই কাটছে ভাড়া বাড়িতে। তৃপ্তি অভাবের সংসারকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। যদিও স্বামীর সততার কারণে গর্বও আছে তার।
বিবাহ বার্ষিকীতে, বৌদ্ধ পূর্ণিমায় কিংবা কোন উৎসবে স্বামীর কাছ থেকে কোন উপহার পাননি তিনি। মেয়েদেরও কোন উপহার দিতে পারেননি দিলীপ বড়–য়া। তার সংসারের হাঁড়িতে মাসে প্রায় একদিনও মাংস ওঠে না। মাঝে মধ্যে মেয়ে বাসায় এলে বড় মাছ কেনা হয়। দিলীপ বড়–য়া মন্ত্রী হওয়ার আগেও জামা কিনতেন বঙ্গবাজার আর ফুটপাথ থেকে। দাম সর্বোচ্চ দেড় শ’ টাকা থেকে দুই শ’ টাকা। সব মিলিয়ে তার শার্ট আছে আট থেকে দশটি। এর মধ্যে কয়েকটি তার ভাইয়েরা দিয়েছেন। তার দু’টি কোট আর দু’টি ব্লেজার রয়েছে। তা তার ভাইদের দেয়া। শিল্পমন্ত্রী বলেন, বেশি দামি পোশাকের প্রতি কোন মোহ নেই তার। সাধারণ পোশাকই আমার পছন্দ। দিলীপ বড়–য়ার বাড়ি চট্টগ্রামে। কুমিল্লায় ছিলেন জীবনের অনেকটা সময়। সেখান থেকে মেট্রিক পাস করেন। চৌমুহনী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। চৌমুহনী কলেজে থাকতে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় কারাবন্দি হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় একবার কারাবন্দি হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ তাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি হননি। তার মা খুব চাইতেন ছেলে মন্ত্রী হবেন। এবার মায়ের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুশি দিলীপ বড়ুয়া
(সূত্র: মানবজিমন)