খাদের গল্প নয়, শিখরের গল্প বলুন – সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

খাদের গল্প নয়, শিখরের গল্প বলুন – সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

সপ্তাহ দুয়েক ধরে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরগরম করে রেখেছে ক্রমিক খুনি রসু খাঁ। ১০০ খুনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১১ খুন করার পর এই ভয়ানক খুনিটি ধরা পড়েছে। তবে পত্রপত্রিকা ও পুলিশ ধারণা করছে, খুনের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। রসু খাঁর শিকার অরক্ষিত নারীরা; একজনকে মরা ভেবে ফেলে গেলে তিনি বেঁচে গেছেন। বাকিদের সে মেরেছে খালের পানিতে চুবিয়ে।

খুন-রাহাজানির মতো গুরুতর সব অপরাধ সব দেশেই যেন স্বতঃসিদ্ধভাবেই সংবাদের মর্যাদা পেয়ে যায়। একজন ভালো মানুষ, যিনি কোনো এক নিভৃত গ্রামে ১০টি শিশুকে শিক্ষার আলো দিয়েছেন, কোনো দিনই সংবাদের বিষয় হবেন না, হলেও ছোট আকারে, পত্রিকার সপ্তম অথবা নবম পৃষ্ঠায় এবং লোকজন তাঁর সংবাদ পড়ে মনে মনে বলবে, বোকা লোক, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছে। কিন্তু ওই গ্রামেই যদি একটা খুনি জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে, দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো তার সংবাদই শুধু ছাপবে না, তার সাক্ষাত্কার নিতে প্রতিবেদক পাঠিয়ে দেবে। প্রতিবেদক তাকে জিজ্ঞেস করবেন, দ্বিতীয় খুনটা করার সময়, মুণ্ডুটা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলার সময় আপনি কী ভাবছিলেন? রসু খাঁ অবশ্য এই জোড়া খুনের কারিগর থেকেও বড় কারিগর। সে যাকে বলে সিরিয়াল কিলার। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসটা তাই বেশি। আমার মনে হয়েছে, রসু খাঁ যেন এত দিনে বাংলাদেশকে একটা অপবাদ থেকে মুক্তি দিল। আমাদের অনেক দুর্ধর্ষ খুনি রয়েছে, কিন্তু এত দিন কোনো সিরিয়াল কিলার ছিল না। পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রতিবেদনে যেন সেই আফসোস মোচনের স্বস্তিও কিছুটা ছিল। রসু খাঁ যেন আমাদের আমেরিকা-ইংল্যান্ডের কাতারে নিয়ে গেল। এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক তো বলেই ফেললেন, রসু খাঁর এই ক্রমিক খুন বাংলাদেশের অপরাধজগতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করল। এই মাত্রা যোগ করাটা আমরা সাধারণত ইতিবাচক অর্থেই তো ব্যবহার করি, যেমন বিদেশে জাহাজ বিক্রি বাংলাদেশের শিল্প-ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করল। যা হোক, নতুন মাত্রার জোগানদার রসু খাঁর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে লিখেছেন মনোবিজ্ঞানীরা, তার খুনের ফুট প্রিন্ট বা বিন্যাস খোঁজার চেষ্টায় নেমেছেন অপরাধ মনস্তত্ত্ববিদেরা। এদিকে কাগজে দেখেছি, রসু খাঁ জানিয়েছে তার খুনটুন নিয়ে সে গান লিখবে। হয়তো সিনেমাও হবে তাকে নিয়ে; প্রেমিক কেন খুনি অথবা আমার যত খুন নামের। শনিবারের কাগজে দেখেছি, রসু খাঁ এখন বিশ্রামে।

রসু খাঁ বিশ্রাম নিক, কিন্তু আমাদের ছাপা ও দৃশ্য মিডিয়া যদি এই ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেয়, রসু খাঁকে ছেড়ে দেয় আইনের হাতে এবং একটু আত্মবিশ্লেষণে বসে, ভালো হয়। রসু খাঁ একটা বিবরের মানুষ, একটা অন্ধকার খাদের মানুষ, তাকে এতটা আলোময় করাটা মোটেও উচিত নয়। বাংলাদেশে অপরাধের শেষ নেই, অপরাধীরও শেষ নেই। মিডিয়ায় রসু খাঁর এ রকম সাড়া জাগানো উপস্থিতি দেখে কোনো অপরাধী বা অপরাধপ্রবণ মানুষ যদি তাকে অনুকরণ করতে শুরু করে, তাহলে তা খুব অবাক হওয়ার মতো কিছু হবে না। খাদে নামাটা সহজকেউ নিজে নামতে না চাইলেও তাকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে ফেলা যায়। উঁচুতে ওঠা বরং কঠিন। উঁচুতে কাউকে টেনে তোলা আরও কঠিন। কিন্তু উঁচুতে তো উঠছেন অনেক মানুষ আমাদের দেশের, অন্যদেরও টেনে তুলছেন। উঠতে উঠতে ছোটখাটো অনেক শিখরও তাঁরা জয় করছেন। সেই শিখর জয়ের গল্পগুলো কোথায়? এক রসু খাঁ সংবাদপত্র থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেবে সেসব শিখর জয়ের গল্প? একটি দৃষ্টিহীন ছেলে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। ছেলেটি শুধু নিজের দৃষ্টিহীনতার প্রতিবন্ধকতা জয় করেনি, টিউশন করে মায়ের চিকিত্সাও করিয়েছে। মা এখন সুস্থ। এ গল্পটি একটি শিখর জয়েরহোক না খুব ছোট একটি শিখর সেটি। কিন্তু তার এই সংগ্রাম আর সাফল্য যদি বড় করে ছাপা হতো কাগজে, তাকে দেখা যেত টেলিভিশনের পর্দায়, আরও অনেকে তার মতো শিখর জয়ের অনুপ্রেরণা কি পেত না? এ রকম কত গল্পই তো ছড়িয়ে আছে আমাদের চারদিকে। তাহলে আমাদের দৃষ্টি কেন খাদের দিকে? এর কারণ কি আমাদের অশিক্ষা, দারিদ্র্য, আমাদের অপরাজনীতি? যার ঠাকুরেরা এক-একটা অন্ধকার গর্তে বসে দেশটাকে এই গর্তের ভেতর আটকে রাখতে চান? আমাদের যাঁরা শাসন করেছেন, বেসামরিক-সামরিক কর্তারা, তাঁরা তো খাদের দিকেই নিয়ে গেছেন দেশটাকে। যেটুকু উচ্চতার দিকে, ছোটখাটো নানা শিখরের দিকে, যাঁরা একে ফিরিয়ে এনেছেন, টেনে তুলেছেন, তাঁরা তো ক্ষমতাধর নন, তাঁরা সাধারণ মানুষ। তাঁরা মাঠে কাজ করেন, তাঁরা কৃষক—দেশের মানুষ যে না খেয়ে সব মরেনি, সে তো তাঁদের জন্য। তাঁরা শ্রমিক, তাঁরা গ্রামের স্কুলের শিক্ষক, তাঁরা বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা বাঙালি তরুণ, তাঁরা পোশাকশিল্পের নারী, যাঁরা স্বল্প আয়ে, স্বল্প বেতনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশটার সমাজ ও অর্থনীতির চাকার গতি জুগিয়েছেন। অথচ তাঁদের কোনো স্থান নেই পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশনে। শুধু যখন খারাপ সংবাদ আসে তাঁদের জায়গা থেকে, তখন তাঁরা সংবাদের বিষয় হন। শনিবার টঙ্গীতে একটি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের তিন মাসের মজুরি বকেয়া রেখে মিলটি হঠাত্ বন্ধ করে দিল মালিকপক্ষ। শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে রাস্তা অবরোধ করলেন, হামলা করলেন মিলটিতে, আর লাগল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। শোনা যাচ্ছে তিনজন শ্রমিক মারা গেছেন পুলিশের গুলিতে। বিজিএমইএ বলল, এটি চক্রান্ত। বটে, চক্রান্ত শুধু তাদের বিরুদ্ধেই হয়। বিজিএমইএর নেতাদের বিনয়ের সঙ্গে বলি, তিন মাস একটু উপোস থাকুন এবং কবে হাতে পাবেন ঘাম-ঝরানো ন্যায্য টাকা, তা না জেনেও কাজ করে যান, এবং হঠাত্ আপনাদের মুখের ওপর বলে দেওয়া হোক, চাকরি গেল; উপরন্তু পাওনা কোনো কিছু জুটবে না, তখন কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, নাকি ন্যায্য টাকা পাওয়ার চক্রান্ত’ করবেন? বিএনপি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলছে, ভারতীয়দের হাতে পোশাকশিল্প তুলে দেওয়ার জন্য এটি সরকারের ষড়যন্ত্র। শ্রমিকদের তিন মাসের রক্ত-মাংস পানি করা পরিশ্রমের পাওনাটা তাহলে কীভাবে পাবেন তাঁরা? কোন অষড়যন্ত্র-অচক্রান্ত করলে?

যাক, খাদের গল্প অনেক হলো, এখন শিখরের একটা গল্প বলি। হিমালয়ের চো-ইয়ু শৃঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে। পৃথিবীর ষষ্ঠতম উঁচু শৃঙ্গ এটি এবং সেখানে লাল-সবুজ পতাকাটি উড়িয়েছেন বাংলাদেশের ভোলার ছেলে এম এ মুহিত। তাঁর সঙ্গে আরেক আরোহী তারেক অনুও শৃঙ্গজয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু শরীরে অক্সিজেনস্বল্পতা দেখা দেওয়ায় তাঁর পক্ষে শৃঙ্গে চড়াটা সম্ভব হয়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে এই শৃঙ্গজয়ের ঘটনাটি ঘটেছে। বাংলাদেশের আরও পর্বতারোহী আছেন, তাঁরাও যাচ্ছেন হিমালয়ে, উঠছেন নানা উচ্চতায়। তাঁদের সবার স্বপ্ন, একদিন এভারেস্টে ওড়াবেন বাংলাদেশের পতাকা।

আমার ধারণা ছিল, বাংলাদেশের একেবারে সমতল ভূমির মানুষদের—যারা একটা আস্ত ছোটখাটো পাহাড়ও হয়তো জীবনে দেখেনি—পর্বতজয়ের গল্পটাই একটা বড় আগ্রহ সৃষ্টি করবে সবার মনে, বিশেষ করে যখন ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি জয় করে ফেলা হলো। আমি নিজে এই সংবাদে দারুণ আনন্দিত। আমার মনে আছে, প্রথম যখন বাংলাদেশিরা যায় হিমালয়ে, সেই দলে দুটি মেয়েও ছিল। তাদের আমি টুপি খোলা অভিবাদন জানিয়েছিলাম। বাংলাদেশের দুটি মেয়ে চড়ছে হিমালয়ে! দেশের সব মেয়ের কাছে কতখানি অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দিতে পারত ওই দুজন পর্বতারোহী—অসম্ভবকে সম্ভব করার, অজেয়কে জয় করার। কিন্তু পত্রপত্রিকায় তাদের কথা আসেনি। এসেছে বরং রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, দুর্নীতির বরপুত্র আর খুনি-ধর্ষকদের কথা। তারা দখল করে নিয়েছে পর্বতারোহীদের জায়গা। কজন জানে মুহিত-মুসা-সজল-তারেক-সাদিয়া এমনকি তাদের যিনি দীক্ষাগুরু, সেই ইনাম-আল-হকের নাম? অনেকে হয়তো বলবেন, একটা পাহাড়ে ওঠা আর এমন কী, এ জন্য হইচই করার কী আছে? তাঁদের কথায় সত্যতা হয়তো আছে, কিন্তু পাহাড় জয় যদি খুব ক্ষুদ্র একটি বিষয় হবে, তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জিম্বাবুয়ে দলের সঙ্গে একটা জয়ই বা এমন কী বিরাট ব্যাপার। জয় না হয় বোঝা গেল, সেই সঙ্গে হারাটাও? যেদিন দলটি জেতে, সেদিন খবরের কাগজের প্রধান শিরোনাম হয় সেই সংবাদ, হারলেও প্রথম পৃষ্ঠায়, প্রায়-শিরোনাম হয়। ক্রিকেট তাহলে কী দিচ্ছে আমাদের? অসম্ভবকে সম্ভব করার অনুপ্রেরণা? দিনের পর দিন অনিশ্চিত পথে একটা স্বপ্নকে পুঁজি করে ছোটার শক্তি? হয়তো দিচ্ছে। ঠিক আছে, মেনে নিলাম ক্রিকেট দিচ্ছে আমাদের জেগে ওঠার মন্ত্র। তাহলে ক্রিকেট যদি থাকে প্রথম পৃষ্ঠা ও খেলার পৃষ্ঠাজুড়ে, পর্বতে ওঠার খবরটি কেন নয়? অন্তত একবারের জন্য নয়? এই না থাকাটা কি এ জন্য যে এর পেছনে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি নেই, শত শত কোটি টাকার ব্যবসা নেই? সেদিন একটি ছেলে কলকাতায় আর্চারি প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়ে ফিরল, একটুখানি শুধু সে সংবাদ হলো কাগজে। কোনো উচ্ছ্বাস নেই তাকে নিয়ে। বাংলাদেশে আর্চারি কি প্রচলিত খেলা এখন? ছেলেটি সংগ্রাম করছে প্রতিকূলতা জয় করে একটা গন্তব্যে যেতে। তার সঙ্গে মাল্টিন্যাশনাল নেই, মিডিয়াও নেই। তাহলে কোত্থেকে সে পাবে আরও দূরে যাওয়ার অনুপ্রেরণা এবং অন্যদের জোগাবে সেই অনুপ্রেরণার অংশ, তার নিজের শিখর জয়ের গল্প দিয়ে?

বাংলাদেশের তরুণেরা হিমালয়ের সবগুলো শৃঙ্গ জয় করে ফেললেও দেশের উন্নতি-অনুন্নতিতে কোনো উনিশ-বিশ হবে না, এ কথা হয়তো ঠিক। হয়তো পর্বতারোহণে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে, শৃঙ্গের কাছাকাছি গিয়েও খারাপ আবহাওয়ার জন্য অনেকে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু একটি শিখর জয়ের গল্পকে আমি প্রায়োগিক কোনো মাত্রায় অথবা অর্থনীতির মাপজোকে ফেলে মাপতে নারাজ। আমার কাছে শিখর জয়টা একটা প্রতীকী ঘটনা। এই প্রতীকের প্রয়োজন আছে আমাদের কাছে। আমাদের তরুণদের কাছে। বাংলাদেশে মাদকচিত্রটির দিকে তাকান। এর ভয়াবহতা আপনাকে বিপর্যস্ত করবে। মাদকচিত্রটি সম্পূর্ণ খাদের চিত্র, অপরাধের চিত্রের মতো। সেদিন রাতে তেজগাঁওয়ের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দেখি রাস্তার পাশে জটলা। দু-তিনজন যুবক শুয়ে আছে রাস্তায়। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে মানুষজনের হাতে। তারপর খেয়েছে পিটুনি। পুলিশ হাজির না হলে হয়তো মারাই যেত। অপরাধী, অবশ্যই, কিন্তু এই ভাগ্য কি তাদের প্রাপ্য ছিল? খোঁজ নিলে আরও হয়তো দেখতে পেতাম, যুবকদের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দারিদ্র্য, বঞ্চনা, কর্মহীনতা অথবা মাদক-নেশা। এই যুবকদের মতো হাজার হাজার যুবক যখন তলিয়ে যাচ্ছে খাদে, তখন অন্য কিছু যুবক এক অজানার নেশায় যাচ্ছে হিমালয়ে। উঠছে পর্বতে। খাদে যারা আছে, অথবা খাদের কিনারে, তাদের কাছে এই শিখর-যাত্রা বা জয়ের গল্পটি ঠিক মতো পৌঁছালে, আমি নিশ্চিত, একটা ছোট পরিবর্তন কারও-না কারও মধ্যে আসত। যদি ১০ জন যুবকও বেরিয়ে আসত অপরাধ বা নেশা থেকে, নিজেদের বলত, আমিও খাদ ছেড়ে শিখরের দিকে যাব, তাহলেও যে পরিবর্তনটা শুরু হতো ১০০ রসু খাঁর গল্পও তার কিছুমাত্র অর্জন করতে পারবে না। বরং খাদের আরও গভীরে ঠেলে দিতে পারে অনেক যুবককে।

আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতায় দেখেছি, সামান্য অনুপ্রেরণায় কত অসামান্য স্বপ্ন দেখতে পারে তরুণেরা। তারা প্রত্যেকেই শিখর জয় করতে চায়—জীবনের, ইতিহাসের—নানা শিখর। কিন্তু অনেকেই বোঝে না কোনটি প্রকৃত, কোনটি অপ্রকৃত শিখর। এখন বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে একটা নিশ্চিত জীবন পেতে মরিয়া অনেকেরই শিক্ষকতায় আগ্রহ তেমন নেই, নিজের পায়ে স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর আগ্রহ তো আরও কম। এর কারণ, তাদের সামনে উন্নতির ও জাগতিক স্বাচ্ছন্দ্যের হাতছানি, অপ্রকৃত কিছু শিখরের প্রলোভন। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই, সমাজ বাস্তবতা এ রকমই আমাদের দেশে। কিন্তু এই অপ্রকৃত শিখরগুলোকেও তো প্রকৃত করা যায়। সরকারের কাজেও তো দেশপ্রেমের ও সততার সমাবেশ ঘটিয়ে শিখরগুলোকে সবার জন্য অবশ্য বিজেয় করা যায়। কিন্তু তরুণদের সামনে দেশপ্রেম ও সততার উদাহরণ, হায়, অতিশয় সামান্য। হিমালয়ের পিঠে চড়ছে যেমন তরুণ, তাদের শিখর জয় যদি সত্যিকার অর্থে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এসব তরুণের কাছে, তাহলে তারা তাদের নিজেদের জীবনের নানা শিখরে ওঠার অনুপ্রেরণা পাবে। আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে।

বাংলাদেশের সামনে এখন অসংখ্য শিখর। সব জয় করতে হবে। করার জন্য তরুণেরাও প্রস্তুত। এখন আমাদের বেছে নিতে হবে, শিখর জয়ের গল্পগুলো আমরা বলব, নাকি খাদে যাওয়ার গল্পগুলো। খাদের গল্প খুব চটকদার, কিন্তু মর্মান্তিকভাবে সহজ!

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Link requested by Borhanuddin Shafi | original source


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment