ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে ভুগবে অর্ধেক পৃথিবীঃ মার্কিন গবেষণায় সতর্কতা

ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে ভুগবে অর্ধেক পৃথিবীঃ মার্কিন গবেষণায় সতর্কতা

চলতি-শতক শেষ হবার আগেই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেককেই ভয়াবহ খাদ্য-সঙ্কটে পড়তে হবে। বৈশ্বিক-উষ্ণতা বৃদ্ধি-জনিত কারণে খাদ্য-উৎপাদনে ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দেয়ার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরী হবার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সায়িন্স জার্নালের একটি গবেষণা-পত্রে।

সর্বশেষের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ট্রপিক্যাল ও সাব-ট্রপিক্যাল অঞ্চলগুলোতে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে ধান ও ভূট্টার মত খাদ্য-শস্যের উৎপাদন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে। ট্রপিক্যাল ও সাব-ট্রপিক্যাল বলয়ের ভিতরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ থেকে আর্জেন্টিনার উত্তরাংশ, উত্তর ভারত ও দক্ষিণ চীন থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াসহ পুরো আফ্রিকা মহাদেশটিই পড়ে যায়। জানা যাচ্ছে, জলবায়ুর উষ্ণতা-বৃদ্ধির কারণে এ-সব অঞ্চলে খরা শেষ মুহূর্তে ফসলহানীর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। খাদ্য উৎপাদন হ্রাস হয়ে যাবার কারণে ইকুটৌরিয়্যাল বেল্ট হিসাবে পরিচিত ঘন-বসতিপূর্ণ দেশগুলোর দরিদ্র জনসাধারণ সর্বাপেক্ষা দুর্বিপাকের মুখোমুখি হবেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহারের কারণে এ-অঞ্চলগুলোতে এখনই খাদ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

গবেষণা-পত্রে বলা হয়, এ-শতকের শেষ নাগাদ গ্রীষ্ম-মণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে সর্বনিম্ম গড় তাপমাত্রা হবে ১৯০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তাপমাত্রার এহেন বৃদ্ধির সম্ভাবনা হচ্ছে শতকরা ৯০ ভাগ। গবেষণা পরিচালনাকারী দলের প্রধান ডেইভিড বারিস্তি শুক্রবার গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, ‘তাপমাত্রার কারণে বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদনের উপরে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।’ তিনি আরও জানান, এ-হিসাবের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষিতে জল-সরবরাহ ব্যবস্থার উপরে যে-প্রভাব পড়বে, তা হিসাবের মধ্যে ধরা হয়নি।

ডেইভিড ব্যারিস্তি ও রৌস্যামন্ড নেইলরের পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৩ সালে পশ্চিম ইউরৌপের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ দাবদাহের পরিণতিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫২ হাজার মানুষ। এছাড়াও- এর ফলে অঞ্চলটিতে গম ও গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহৃত বিচালীর উৎপাদন পূর্বের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছিলো। এছাড়াও তারা গবেষণায় দেখতে পান যে, ১৯৭২ সালে দক্ষিণ-পূর্ব উক্রাইন ও দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ায় দীর্ঘ-মেয়াদী এক দাবদাহের পরিণতিতে স্বাভাবিকের তুলনায় তাপমাত্রা গড়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেইড পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিলো। উল্লেখ্য, এ দাবদাহের পরিণতিতে তৎকালীন সৌভিয়েত ইউনিয়ন-জুড়েই গম ও অন্য কয়েকটি সাধারণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন গড়ে ১৩ শতাংশ কমে গিয়েছিলো এবং দুই বছর-ব্যাপী খাদ্য-শস্যের বিশ্ব-বাজারে নেতিবাচক প্রভাব বজায় ছিলো।

গবেষকরা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর উচিত অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তন-জনিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য অর্থ-বিনিয়োগ শুরু করা। তাদের মতে, তাপমাত্রা বেড়ে যাবার বিষয়টির সাথে মানিয়ে নিয়ে নতুন জাতের খাদ্য-শস্য উৎপাদনের মতো পরিস্থিতি হবার ক্ষেত্রে কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে। আগামী দিনের খাদ্য-পরিস্থিতির ভয়াবহ সঙ্কট প্রসঙ্গে সতর্কতা ব্যক্ত করে রৌস্যামন্ড নেইলর বলেন, ‘খাদ্য-সন্ধানের খোঁজে মানুষের মধ্যে ব্যাপক স্থানান্তরে ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা যদি এখনই খাদ্য সরবরাহের ব্যাপারে পুনঃচিন্তা শুরু না করি, তাহলে খাদ্যের সন্ধানে যাবার জন্য কোনো স্থানই আর অবশিষ্ট থাকবে না।’

original source


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment