সৎ যোগ্য প্রার্থীর আকাল: অনেকেই ভাবছেন ‘না-ভোট’ প্রয়োগের কথা

সৎ যোগ্য প্রার্থীর আকাল: অনেকেই ভাবছেন ‘না-ভোট’ প্রয়োগের কথা

বিগত কয়েক বছরের ‘সৎ ও যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন ’আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তেমন কোনো ফল দিচ্ছে না। দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশেরই নানা নেতিবাচক দিক ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দৈন্যতার বিষয়টিও প্রকাশ হয়ে গেছে। এছাড়া ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি ও হলফনামায় তথ্য গোপন এবং মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে অনেকেরই প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে সচেতন ভোটারদের অনেকেই ‘না’ ভোট প্রয়োগের কথা ভাবছেন। তারা মনে করছেন, প্রধানত রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণেই যোগ্য প্রার্থীর আন্দোলন তেমন কোনো কাজে আসেনি।

জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০০২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে ‘ সিটিজেন্স ফর ফেয়ার ইলেকশন ’ নামের একটি সংগঠন কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে সংগঠনটি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নামে রূপান্তরিত হয় এবং একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে থাকে। সুজন এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এছাড়া ২০০৪ সালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ নামে আরেকটি ফোরাম কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসও এই আন্দোলনের সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এই আন্দোলন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায় এবং বর্তমানে এর কোনো কর্মকাণ্ডই নেই। সিপিডির তখনকার নির্বাহী পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সরকারের চাকরি নিয়ে বর্তমানে জেনেভায় জাতিসংঘ দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।

ইত্তেফাক প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর আন্দোলনের নেতৃত্ব সুশীল সমাজকেই দিতে হয়। সুশীল সমাজের জোরালো অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো দেশেই জনগণের আকাঙক্ষা অনুযায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধন সম্ভব হয় না। বাংলাদেশেও সুশীল সমাজের উদ্যোগেই এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল এটা ঠিক। কিন্তু এই আন্দোলন যতটা জোরালো এবং কার্যকর হওয়া দরকার বাস্তবে তা হয়নি বা হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হলো, এখানে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত কোনো সুুশীল সমাজ আজও গড়ে ওঠেনি। কিছু কিছু ব্যক্তি বা সংগঠন বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করলেও তারা সামগ্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারছেন না।

বিষয়টি নিয়ে ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে সুজনের সভাপতি ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী পেতে হলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সেই রকম কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না। এবারের নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূলের সমর্থনে প্রার্থী বাছাইয়ের যে ঘোষণা দিয়েছিল বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। উল্টো প্রার্থী বাছাইয়ের নামে তৃণমূল পর্যায়েও টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বাধ্য হয় সে জন্য প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাফফর বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনের পর সংসদীয় ব্যবস্থা আদৌ কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে কিনা তা নির্ভর করছে দুই বড় দলের শীর্ষ নেত্রীদের ওপর। কারণ, দলগুলো এখনো পর্যন্ত পুরোপুরিই নেত্রীনির্ভর রয়ে গেছে।

একই বিষয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার ইত্তেফাককে বলেন, ইতিমধ্যেই একাধিক জরিপে দেখা গেছে যে, আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে অধিকাংশ মানুষ আশাবাদী হতে নারাজ। সচেতন ভোটাররা মনে করছেন, এসব প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিকে সমর্থন দেয়া। তাই আসন্ন নির্বাচনে অনেকেই ‘না’ ভোট প্রয়োগ করবেন বলে ধারণা করা যায়। তিনি বলেন, ‘সৎ ও যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ পুরোপুরি বিফলে গেছে এটা বলা যাবে না। কারণ, আমাদের আন্দোলনের কারণেই বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে আলোচনায় থাকছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন খুব সহজ কাজ নয়। এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। ভোটাররা সচেতন ও সক্রিয় না হলে এই প্রক্রিয়া অনেক প্রলম্বিত হয়। সাধারণত, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন কখনোই গতানুগতিক ধারার রাজনীতিকদের স্বার্থের অনুকূল নয়। সে কারণে অধিকাংশ রাজনীতিকই মন থেকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের পক্ষে সায় দেন না। তিনি বলেন, যোগ্য প্রার্থীর সংকটের কারণে ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে তুলনামূলক মন্দের ভাল যারা তাদের বেছে নিতে পারেন। আর একেবারেই কোনো প্রার্থী পছন্দ না হলে ‘না’ ভোট প্রয়োগ করতে পারেন।

রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুম মনি তালুকদার ইত্তেফাককে বলেন, প্রার্থী পছন্দ না হলেও কোনো একজনকে ভোট দিতেই হবে এমন বাধ্য-বাধকতা তো নেই। বরং এবারের নির্বাচনে যেহেতু ‘না’ ভোট প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে সুতরাং আমার মতো অনেকেই সুযোগটি কাজে লাগাবেন বলে ধারণা করা যায়।

।। মনির হায়দার ।। original


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment