যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা দেবেন না অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবেন না

যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা দেবেন না অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবেন না

বিভিন্ন দূতাবাসে তালিকা পাঠাচ্ছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

কাগজ প্রতিবেদক : একাত্তরের ঘাতক, চিহ্নিত ও আত্মস্বীকৃত যুদ্ধাপরাধীরা যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা প্রদানে বিরত থাকতে এবং কোনো অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকাসহ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দূতাবাসগুলোকে লিখিত আহ্বান জানাবে কমিটি।

পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের নাম বাদ দেওয়ার জন্যও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করুন।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব সংগঠনের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থনপুষ্টদের বিচারের দাবি সংক্রান্ত ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা দেওয়া হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, উপদেষ্টা বিচারপতি কে এম সোবহান, অধ্যাপক অজয় রায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, সহসভাপতি ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, কেন্দ্রীয় নেতা লেখিকা মমতাজ লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

লিখিত বক্à¦

¤à¦¬à§à¦¯à§‡ শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রাখছে ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী এক কথায় তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তিনি বলেন, জামাত ও তাদের সহযোগীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের দোহাই দিয়ে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুণ্ঠন ও যাবতীয় ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে। পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার কথা বলে এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছে। জামাতের ছত্রছায়ায় গত ২০ বছরে দেশে কয়েক ডজন জঙ্গি মৌলবাদী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে যারা গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সা¤à¦ªà§à¦°à¦¦à¦¾à§Ÿà¦¿à¦• স¤à¦ªà§à¦°à§€à¦¤à¦¿, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামাতের বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক জঙ্গি মৌলবাদীদের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত যারা জেহাদের নামে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কিš’ জামাতের গঠনতন্ত্রে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যারা দেশের সংবিধান মানে না, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মানে না, মুক্তিযুদ্ধ মানে না তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সেনাপ্রধান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা এ বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করলেও আমরা সেনা সমর্থিত বর্তমান সরকারকে জামাত বা যুদ্ধাপরাধীদের সরকার বলে মনে করি না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর কà§

‹à¦¨à§‹ সভ্যদেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। তাছাড়া মনে রাখতে হবে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধকে বিবেচনা করা হয় নিকৃষ্টতম অপরাধ হিসেবে। সরকার যদি গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ঘুষখোর, ঋণখেলাপি, করখেলাপি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার করতে পারে তাহলে গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিতে বাধা কোথায় এর সদুত্তর সরকারকে দিতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে শাহরিয়ার কবির বলেন, অতীতে করা হয়নি বলে এখন বিচার করা যাবে না এটা একটা খোঁড়া অজুহাত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। জামাতকে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে তাদের গডফাদারদের যদি বহাল তবিয়তে রেখে দেওয়া হয় তাহলে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন হবে না।

সবশেষে শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য দূতাবাসগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। যেন তারা যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা না দেন। দূতাবাসগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকাও দেওয়া হবে। দেশের সব দল ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বয়কট করুন। আর সরকারের প্রতি আহ্বান, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের আমন্ত্রণ জানাবেন না।

অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, দূতাবাসগুলোর প্রতি আহ্বান, আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা দেবেন না। আপনাদের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ জানাবেন না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩৬ বছরে বিচার হয়নি সরকারের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মাথায় ভোট পাওয়ার ও ক্ষমতায় থাকার চিন্তা নেই। তাহলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধা কোথায়? কবীর চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্à

¦°à¦¤à¦¿ আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। করেছে দেশের বিরুদ্ধে, আদর্শের বিবাদে। তাই কোনো ব্যক্তি নয় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকেই বাদী হয়ে মামলা করতে হবে।

বিচারপতি কে এম সোবহান বলেন, সরকার বিচারের ব্যাপারে অবহেলা করছে। সাধারণ চুরির মামলায় সরকার বাদী হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার বাদী হতে পারবে না কেন?
আইনি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ১২১ থেকে ১২৪ পর্যন্ত ধারায় স্পষ্ট করে বলা আছে রাষ্ট্রদ্রোহ কী এবং কারা এর আওতায় পড়বে। কেবল রাষ্ট্র বাদী হয়েই এ মামলা করতে পারে।

সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী বলেন, কেবল ভিসা বন্ধ নয় সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করতে হবে যেন কোনো যুদ্ধাপরাধী পালাতে না পারে।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment