নির্ভার
আমি তার কাছে হেঁটে হেঁটে আসছিলাম। অপরাজেয় বাংলা থেকে মলচত্বর। আমার সুতি শাড়ী পায়ে বেজে যাচ্ছিল। আমি খুব ঘামছিলাম। আমি দূর থেকেই তাকে দেখছিলাম। সে ঘাসে বসে আছে, উদাসভাবে। দূরত্ব এমন, চেঁচালে সে শুনবে না। আমি ছোট পা ফেলে হাঁটছি। মলচত্বর যাবার গেটে হঠাৎ আবীরের সাথে মুখোমুখি হলাম। আবীর অদ্ভুতভাবে তাকাতে তাকাতে বলল, “কি রে! কই যাস?” আমি ইতস্ততঃভাব কাটাতে কাটাতে বললাম, “ এই… রেজিস্টার বিল্ডিঙে।“ আবীর বলল, “ক্যান? ক্লাস ত সাড়ে দশটায়, করবি না?” আমি চোখ নামিয়ে বললাম, “যা আসতেছি।“
আবীরকে পাশ কাটিয়ে, চানাচুরওয়ালা মামার কাছ থেকে দশ টাকার চানাচুর মাখা কিনলাম।
ওর সামনে ব্যাগটা নামিয়ে রেখে ঘাসে বসলাম। আমাকে বলল,” এত দেরী কেন?” আমি মিষ্টি হাসলাম। আমার দিকে চেয়ে সে বলল, “খুব সুন্দর লাগছে তোকে!” আমি এবারো মিষ্টি হাসলাম। ও আমার হাত ধরল। আমি চানাচুরমাখার ঠোঙ্গা এগিয়ে দিলাম। ও খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। আমাকে সাধল। আমি নিলাম না। ও হেসে কি কি যেন বলছিল। আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। যেদিন, ও প্রথম বলেছিল, ওর আমাকে ভাল লাগে, সেদিনও এমন লেগেছিল। তবে সেদিনের ঘোরে উষ্ণতা ছিল। আজ শীতল অনুভুতি।
ওর ডায়রিটা, যেখানে হাবিজাবি কবিতা আর উলঙ্গ মেয়ের পোট্রেট ঠাসা থাকে, ওর মেসের ঘর যেখানে রঙের কাঁচা গন্ধে সস্তা বিড়ির গন্ধ খাবি খায়, ওর অবর্ণিল জীবন, সব কিছু আমাকে মুগ্ধ করেছিল। লেকচার থিয়েটারের ফাঁকা ক্লাসরুমে যেদিন জাপটে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছিল, ওর মুখ দিয়ে ভক ভক করে গাঁজার গন্ধ আসছিল। আমার একটুও খারাপ লাগেনি। আমি প্রেমে ভেসেছি। আমি ওর কবিতাকে ভালবেসেছি, ওয়েল পেইন্টিং গুলোকে ভালবেসেছি, তার ভগ্ন স্বাস্থ্য, দাঁড়ি গোঁফের জঙ্গল, সব মিলিয়ে ভালবেসেছি। শুধু…।
আমি ব্যাগ উঠিয়ে নিলাম। “ক্লাস আছে, যাই।“
ও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ওর চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। চানাচুরে আমি বিষ মিশিয়েছি। কিছুক্ষণ পরই ও মারা যাবে। কিছুদিন যাবত যে যন্ত্রনা আমার মনকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল তার অবসান হবে। ওর অনেক অনেক বিশ্বাসঘাতকতার সত্য আমার বুকে জমে ছিল। ওর নেশার রাজ্য, নিষিদ্ধ পল্লীর কদর্যতা ইতিহাসের সাথে আমার অন্য সহপাঠীর সাথে শারীরি খেলার তত্ব সে গোপন করেছিল। সে চেয়েছিল তাকে পুতঃ পবিত্র মনে করে আমিও নিজেকে বিলীন করে দেব।কত রাত কান্নায়, অসহ্য যন্ত্রণায় কেটেছে! জিজ্ঞাস করলে অবলীলায় স্বীকার করেছে সব। যেন এসব কিছুই নয়।
হয়ত ছেড়ে চুপচাপ চলে আসা যেত। কিন্তু কেন একজনের কাছ থেকে পাওয়া এই যন্ত্রণা সইতে হবে নীরবে? শাস্তি তাকে পেতেই হবে। সেই সাথে চিরমুক্তি। আহ! আজ অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুমোতে পারব।
Related Articles
স্পর্ধা
এই গলিটা পার হলেই নাজ বেকারি। ওখানে একটা বিস্কুট পাওয়া যায়। ভেতরে ক্রিম দেওয়া। বাইরেটা চকলেট। এত মজা! মেহমান আসলেই
অসম্পূর্ণ সকাল
সকালের চাক ভাঙ্গা রোদ গায়ে মাখতে বেলকুনিতে দাঁড়ালাম। সচরাচর এই সময়টায় আমি বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে চায়ের সাথে প্রকৃতি পান করি। আমার
স্বপ্ন-বিধায়ক (অন্তরা ১)
মা ছোটোবেলায় সবসময় একটা কথা বলতেন,” বাবা মেয়েদের সবসময় সন্মান করে চলবা, নিজের বোনের মত দেখবা, তুমি একা তোমার তো