মুদিত নেত্রে তাকিয়ে থাকা আর নি:শ্বাস নেয়া মানে কি বেঁচে থাকা?
খোলা ময়দানে রক্তাক্ত রমনী
মানুষ
বাংগালী
বাংলাদেশী ।
সবুজ ঘাসে প্রাণহীন লাশ
আমার বোন
আমার কন্যা
আমারই জননী !
নির্মমতার চুড়ান্ত
মানবতার ধিক্কার ।
এই কি সেই ফুল ? একটি সে ফুল?
যাকে পেতে –
রক্তস্রোতে প্লাবিত ছিলো তেরশত নদী,
অবর্ননীয় খান্ডবদাহ,
সমগ্র মানচিত্র মিশে থাকা শবদেহ,
নির্যাতিত রমনীকুল মৃত-জীবিত ।
হায়না ছিল ওরা ।
৪৮ বছর পর বীজ থেকে মহীরুহ
তারা আজ বংশ পরম্পরায় বাংগালী ।
জনারন্যে বুনে গিয়েছিল বীজ
নিকৃষ্ট বংশধর ।
পশু হায়না সে তুলনায় উৎকৃষ্ট ।
সন্দেহ কি?
নশ্বর এদেশে ঈশ্বর ও দ্বিধান্বিত
ধর্মের ধারক বাহক রক্ষক অযুত নিযুত।
মুখ থুবরে চেয়ে রয় মানবতা ।
কারে বলি কে শোনে !
কেই বা বোঝে !
৩০ লক্ষ গৃহের লালিত অহংকার
আজ কষ্টের সাড়াশীতে পাঁজরে আটকানো।
উৎসব ভুলে যায় ওরা
প্রকান্ড সুর্যের আলো ব্যর্থ সেই
ঘরগুলোয় আলো দিতে।
সেই মুক্তিসেনা
সেই বীরাঙ্গনা
কুন্ঠিত হয়
শব্দহীন ঘৃনায় পাথর হয়ে রয় ।
সন্দেহ কি ?
উন্নয়নের সোপান উঠছে
সেতো উঠারই কথা।
তবে –
মুল্যবোধ ?
শিক্ষা ? কানুন ?
বিবেক ? বোধ ?
পরিচয় ?
সে সোপান বোধ করি ভূগর্ভের
অন্ধকার পথে ধাবিত ।
মানুষের পরিচয় তার শিরদাড়ায় ।
করোটির নিউরন ভিন্ন অনন্য প্রতিটি জীবের ।
নিজেকে মনে হয় ভিনদেশী এক তারা
একা নি:সংগ ।
আপস মিমাংসা আপস মিমাংসা সবখানে –
দাড়াবো কোথায়?
পায়ের নীচ থেকে সরে যাচ্ছে মাটি ।
মুদিত নেত্রে চেয়ে থাকতে হবে আর কত যুগ ?
ধরা যাবেনা ছোয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা
কেমনতর পেলাম আমি কী সে স্বাধীনতা ?
বুঝতে বুঝতে জানতে জানতে আজ ৪৮ বছর ।
আজও ভাসে বাতাসে পোড়াবারুদ
লোবানের বদলে দুর্গন্ধ মৃত্যু
আজও সবুজ প্রান্তরে ধর্ষিতা বোনের লাশ
এই মাটিতেই ।
যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা,
আত্মত্যাগ বীরাঙ্গনার ।
মানুষ পারে
মানুষই পারে
জান্তবকে মানুষের আদল দিতে
সত্যিকারের দানবেরা তাই অবলুপ্তপ্রায় ।
মানুষেরই কাতারে হাঁটে
বক্তৃতা দেয়
স্বাধীনতাকে দিবস করে গহন বিদারে ।
সত্যিকারের জন্তুগুলো গুহার আঁধারে
ভয়ে আর্তনাদে পরাজিতপ্রায়
মনুষ্যরুপী হায়নার বংশবর্ধনে ।
আমাদের লজ্জাগুলো অনুভুতিহীন
বিবেক বন্ধক আপসে ।
হিসেবী আখেরাত স্বর্গের নিশ্চিন্ত আবাস
পেতে কেউ উটপাখি
আবার কেউ
নিষিদ্ধ গন্ধম খেয়ে বুঁদ
বিলাস আভিজাত্যে
সব পাওয়ার নেশায় নির্বোধ ।
আমি সেই রমনী সব পাওয়ার মাঝে একা ।
ভীরের মাঝে আত্মভোলা একা ।
রাতের গভীরে নিজেকে সুধাই
আমি কি সেই?
১০ বছর বয়সে যার হাতে ধরা ছিল মশাল,
ট্রাকে গন সংগীত,
মায়ের সাথে
গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধার খাবার আয়োজন,
মাটি খুড়ে অস্ত্র লুকানো,
নাগর নদীর পারে তিনদীধি হাটে
মুড়ি চিড়ার পোটলায়
অপারেশন তথ্য বিনিময়।
আমি কি সেই ?
আমিই তো সেই।
মিথ্যায় পুর্ন মানুষকে আশ্রয় দেই
প্রশ্রয় দেই ।
হস্তপদ শুন্য মনে হয়;
মনে হয় এক জন্মে
এতো অমানুষ?
এতো অবিচার?
এতো মুনাফেক?
একজন আশাবাদী মানুষ আমি
আশায় আশা বেঁধে প্রত্যাশা –
“এই ক্লান্ত মানুষগুলো পুষে রাখে স্বদেশ প্রেম
চোখের তারায় অগ্নি হেম ।
ফেটে পরবেই ফুলে উঠবেই
অন্য দিনে সত্যদিনে
জেগে উঠবেই
জেগে উঠবেই ।”
সবশেষে
একটি ছোট্ট চাওয়া
ফিরে যেতে চাই
“আমার ছোট্ট সোনার গায়”
গাইতে চাই সে গান – একা একান্তে
“যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ্য মুক্তিসেনা
দেনা তোরা দেনা
সে মাটি আমার অংগে মাখিয়ে দেনা ।”
Mahmuda Runu
জন্ম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬১ বিক্রমপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ। বাবা মারফত হোসেন মা জাহানারা হোসেন। বগুড়া ভি এম স্কুল ও আযিযুল হক কলেজ শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ কৌশলে স্নাতক। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে কম্পিউটার কৌশলে স্নাতকোত্তর। রাইদ মুসাওয়ের পৃথু এবং আফ্রিদা মুসাররাত প্রিয়তা দুই কন্যার গর্বিত জননি। কবিতাকে ঘিরেই ভাবনা, বাংলা কবিতাকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইঃ ওই লাবন্যকুঞ্জে (২০০৮), বন্ধনহীন গ্রন্থি (২০১১), প্রশান্ত বিলাস (২০১৭) এবং অনিত্য স্বর (২০১৭)।
Related Articles
মাটির ঘরে শান্তির ঠিকানা
মাটির ঘরে শান্তির ঠিকানা লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী মাটির ঘরে শান্তির ঠিকানা বাঁধে প্রীতির বাসা, মাটির ঘর স্বর্গের সমান মনে জাগে
তোমায় অনেক ভালোবেসেছিলাম
তোমায় অনেক ভালোবেসেছিলাম ———————————— তোমায় অনেক ভালোবেসেছিলাম কখনো কেউ জানেনি তা জানি শুধু এই আমি, একমাত্র তোমায় আমি চেয়েছিলাম কেউ
বর্ণবাদী-সংলাপ
ভাড়াটা মনে হল যুক্তিসংগত,লোকেসনের ব্যাপারে আমার কোন পছন্দ নেই।বাড়ীর মালিক ভদ্রমহিলা জানাল, সে পাশের ফ্লাটেই থাকে।‘ম্যাডাম’, আমি সাবধান করতে চাইলাম।‘আমি