একজন বুদ্ধিজীবী প্রেতাত্মার ইস্তেহার
ওরা যখন আমাকে ধরে নিয়ে যেতে আসে
তখন আমি আমার প্রিয় পরিবার পরিজনের সাথে বসে
বাংলাদেশের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা আলাপ করছিলাম |
ওরা এলো –
ওদের ঠক-ঠকাস, ঠক-ঠকাস, ঠক-ঠকাস
সদম্ভ বুটের আওয়াজ ভেসে এলো
আমি উত্কর্ণ হয়ে শুনলাম |
আমার আত্মজার লালিত বাগান, ফুলের কেয়ারী, বাগান বিলাস-
তছনছ করে ওরা এলো –
আমি উত্কর্ণ হয়ে শুনলাম |
ওদের অনধিকার প্রবেশের প্রথম প্রতিবাদী আমার কুকুর
তার তারস্বরে চিত্কার – আমি উত্কর্ণ হয়ে শুনলাম |
দরজা ভেঙ্গে ফেলার কর্কশ সুর – আমি উত্কর্ণ হয়ে শুনলাম |
ওরা এলো –
একজন,
দুজন,
হাতে গোনা মাত্র ছজন |
আমার প্রিয়তমা পত্নীর দুর্ভেদ্য দেয়াল |
প্রিয় মুখ সন্তানদের আকুল আকুতি |
আমার সদ্য বিধবা বোনের বুকফাটা চিত্কার |
কিছুই হলোনা হলোনা কিছুই |
কালো কাপড়ে বাঁধা চোখ, পিছ মোড়া হাত,
হুড তোলা খোলা জীপ্ এ গন্তব্য অজানা |
মধ্য ডিসেম্বর এর কনকনে হাওয়া |
রাস্তা থেকে উড়ে আশা ভোরের শিশির |
রাত জাগা দু একটা কুকুর-শেয়াল |
নিঝুম শহর ধরে ছুটে চলা, হুড খোলা জীপ্ |
তারপর গুলির আওয়াজ |
বিকের ভেতর থেকে ফিনকি দিয়ে ছুটে যায় রক্ত নহর |
তারপর চোখে নামে ঘুম ….
তারপর চোখে …..
তারপর ….
আমাদের মৃত্যু হলো পাখির মতন |
অপঘাতে মৃত্যু তাই অশরীরী আত্মা হয়ে গেছি |
আমাদের ঘুম ভাঙ্গে বাংলাদেশের এই স্বাধীন মাটিতে |
বারুদের গন্ধ মেশা ভোরের বাতাস |
চারিদিকে পঁচা গলা লাশ, ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলা চোখ |
মানুষের হাঁড়-গোড়, রক্ত মাখা শার্ট |
ছড়ানো ছিটানো সব করোটিতে গুলির নিশানা |
প্রিয় প্রিয় মুখগুলো ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে শকুন |
দু একটা রাত জাগা শেয়াল কুকুর – খুবলে খুবলে
খায় মৃতদের চোখ-মুখ-নাক, শরীর-রক্ত-মাংশ পেশী |
পচনে যাচ্ছে গলে বুদ্ধিজীবির সব লালিত মগজ |
শহর রাস্তা জুড়ে জয় বাংলা পতাকা স্লোগান |
যুদ্ধ কি শান্ত হলো? বন্ধ হলো বিভীষিকা রাত্রি প্রহর?
আপামর বীর যোদ্ধা খুঁজে পেল আনকোরা নতুন আবাস?
খুঁজে পেল নিজেদের আপন ঠিকানা?
খুঁজে পেল লাল আর সবুজের আপন নিশান?
আমাদের বসত যদিও আজ মিরপুরে বদ্ধ জলাভূমি |
তবুও দেখছি ঘুরে শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমি |
আমাদের প্রিয়তম কার্জন হল –
ভার্সিটি চত্বর জুড়ে হাঁটি চলি ফিরি |
ঘুরে ফিরে চলছি যদিও, শহীদের রক্ত নিয়ে হোলিখেলা
চলে বলে একুশ দেখিনা | ছাব্বিশে মার্চ, বিজয়ের মাস
জুড়ে আমাদের ঘুমের সময় |
প্রিয়তম স্বদেশ আমার –
আমাদের ধরে এনে মেরে ফেলা ছয়জন হায়েনা কুকুর |
আজও দেখো ঘুরে ফিরে বাংলাদেশে দৃপ্ত পদভারে |
ওদের নি:স্বাসে আজ বিষাক্ত আমাদের বিশুদ্ধ বাতাস |
ওদের দম্ভ হাসি আমাদের কিছুতেই ঘুমুতে দেয়না |
নির্মল চক্রবর্তী
সিডনি, ২১/১০/২০১৪
Related Articles
ছি – সু চি – ছি
সু চি তোর ছেলেটা, এক মাসের আব্দুল মাসুদ তোর কোলে’ই মরলো – তুই টের পেলি না আঁচলে ঢেকে, বুকে জড়িয়ে
বর্ণবাদী-সংলাপ
ভাড়াটা মনে হল যুক্তিসংগত,লোকেসনের ব্যাপারে আমার কোন পছন্দ নেই।বাড়ীর মালিক ভদ্রমহিলা জানাল, সে পাশের ফ্লাটেই থাকে।‘ম্যাডাম’, আমি সাবধান করতে চাইলাম।‘আমি
এমন কি কথা ছিল?
চোখের আড়াল হবে, আমি ভুলে যাবএমন কি কথা ছিল? সাত সাগর আর তের নদীর উপরযে আকাশ যান দেখছ আজ সেটি