ভার্চুয়াল চিঠি (পর্ব – দুই)

ভার্চুয়াল চিঠি (পর্ব – দুই)

পত্র – দুই

Hi / Hello মোহন চ্যাটবক্সে দুই অপরিচিত মানুষের এ দুটো শব্দ আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে সেই আকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কে। ইনবক্স প্রেম। কিছু সম্পর্ক পরিণতি পায়, কিছু পায় না। 
তবুও চলে ইনবক্স প্রেম।
ফুর ফুর মেজাজ উড়তে থাকে মন পাখির মতো । 
কেমন আছেন বা কি করছেন হয়ে যায় কেমন আছো কিংবা বিকালে চলো কোথাও মিট করি । কোথাওআসো। সারা দিন ঘোরাঘুরি করার পর রাতে ফেসবুকে ঢুকে একটি বার নক না করে থাকা যায় না। এভাবেই চলে ইনবক্স প্রেম।
প্রেম নিবেদন হয় ইনবক্স কঠিন অক্ষরে সাজানো কোনো কবিতা দিয়ে কিংবা কোনো গল্পের প্রেম প্রেম লাইন দিয়ে। কিছু প্রত্যাখ্যাত হয়। কিছু চড়ে রিকশায় হুড তুলে সফলতার চাকায়। চলতে থাকে ইনবক্স প্রেমের চাকা।
পরবাস কিংবা দূরে থাকা প্রিয়কে কাছে পাওয়ার একটা মাধ্যম এই ইনবক্স ‘সকালে খেয়েছো, দুপুরে খেয়েছো। কোথায় এখন’। সকল মমতার বাধন ইনবক্সে ছোট্ট ছোট্ট শব্দগুলোই দূরত্বকে কমায়। চলে লং ডিসট্যান্স ইনবক্স প্রেম।
হঠাৎ একদিন রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস পরিবর্তন। ‘ইন রিলেশনশিপ উইথ অমুক’। দুজনের একসঙ্গে ছবি প্রোফাইল পিকচার। ইনবক্সে ঠিক করা হয় কোনটা সুন্দর। নিচে ছোটে কমেন্টের বহর। কংগ্রাটস, খাওয়াবি কবে। ইনবক্সে দুজন এই স্ট্যাটাস চেঞ্জকে উপভোগ করেন মন ভরে। এভাবেই চলে মন ভরে দেওয়ার ইনবক্স প্রেমের সংসার।
চলে নজরদারি। ‘ওই মেয়ে কে কেন তুমি নক করলা’ কিংবা ‘ওই মেয়ের ওয়ালে তুমি কি করো’। কাচুমাচু জবাব দিয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা। কিংবা সারা রাত সরি সরি লিখে ইনবক্স ভরে ফেলা। এভাবেই চলে ইনবক্স প্রেমের খুনসুটি।
তুমুল ঝগড়া। কথা কাটাকাটির ঝড় ওঠে ইনবক্সে কিছু করার নেই, রাগে প্রিয়জন ফোন বন্ধ রেখেছে। যা ঝগড়া সব ইনবক্সে। সংসারে বউ যায় বাপের বাড়ি, আর ফেসবুকে প্রিয়তম করে আইডি ডিএকটিভ। এভাবেই চলছে ইনবক্সে ঝগড়াটে প্রেম।
হঠাৎ করেই ব্রেকআপ। ‘তোমার সঙ্গে আমার ঠিক হচ্ছে না’। ইনবক্সে গুটি গুটি করে লেখা শব্দগুলো কাদায় কিংবা বুক ভাঙে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চেঞ্জ। দুজনই সিঙ্গেল। সব শেষ হয়ে যায় ইনবক্স।
কিন্তু… কয়েক মাস পর সেই-
: হাই
: হ্যালো
নতুন কারও সঙ্গে হালকা ইনবক্সে কথাবার্তা। নতুন এক অনুভূতি। ইনবক্স প্রেমের চক্র চলতে শুরু করে। পরিণতি পাক আর না পাক, ইনবক্সে জমা হতে থাকে আবেগ। হয় নতুন ইনবক্সে প্রেমের শুরু। কিছুদিন পর ফেসবুক কা বান্জারা বানা দে তা হ্যায় । বিরোহী গানের কথা নয়ত হেলাল হাফিজের কবিতা । 
নিত্য চলমান ঘটনার মাঝেও কিন্তু প্রেম আসে জীবনে নিয়ামত হয়ে … কত কি দিয়ে যায় , নিয়ে যায় । হৃদয়ের সম্রাট সম্রাজ্ঞী হয়ে উঠে মনে মনে তনে তনে । 
এই এমন প্রচলিত প্রেম গুলোর মাঝেই তো আমাদের প্রেম প্রবাহ প্রবাহিত হয় । কেউ ফুল হয় কেউ আঙ্গরা হয় । 
বন্ধুরা আজ ইনবক্স পত্রের প্রস্তাব পর্বের তৃতীয় চিঠি …. 
প্রেমিক পুরুষের উত্তর …

পত্র – তিন

বিপরীতমুখ দুটো জলযানের দেখা হলে মাঝ দরিয়ায় ,ব্যাকুল বাজিয়ে ভেঁপু চলে যায় যে যার দিকে। ইচ্ছে হলেও জলে নেমে আলিঙ্গন করতে পারে না। 
তেমনি আমরা দুজন।আমাদের আনন্দ ভৈরবী ওই জলযানের উচ্ছসিত ভেঁপুর মতো। 
মহাকালের পথে হঠাৎ তোমারে দেখে মনে হয়েছে কোথাও এর আগে একবার হয়তো বা অনেকবার দেখেছিলাম এইখানে কিংবা অন্য কোন গ্রহে। 
তোমার সবটুকু চিরচেনা লাগে, চিরপ্রিয় লাগে। 
আজ নতুন একটা অনুভূতি হলো। 
শিশু যেমন মাকে হারিয়ে অনির্দেশ হাহাকারে চিৎকার করে ডাকে, ছুটোছুটি করে, থমকে বসে থাকে অবসন্ন। 
আমি আজ তেমনি হয়ে পড়েছিলাম। 
ভাবছিলাম, কেন এমন হলো!
তবে কি আমি তোমার মধ্যে খুঁজি মাতৃত্বের আঁচল ছায়া, আকাশপ্রতিম বন্ধুর উদারতা ও উষ্ণ প্রস্রবনের মতো প্রেমিকার অবারিত প্রেমধারা!
হয়তো কোন একদিন বিরহ দেয়াল উঠবে, তোমাকে আর দেখতে দেবে না। 
ইনসমনিয়ার বিনিদ্র রাত তোমার মোহন কিছু ছবি মেলে রাখবো চোখের তারায়। 
দীর্ঘশ্বাস ঝরবে অঝোর। 
যাতনা জর্জর সময়ের ভিতর ভেঙে পড়বো। 
একটি কবিতা পড়ে শোনাবো আমাকে,
“একটি শিশুকে আমি আজন্ম তাড়াই 
ভুল পথে
যেতে চায় না সে ভয়ে জড়িয়ে ধরে পা।
একটি শিশুকে আমি আজন্ম তাড়াই 
নৈঋতে — রীতিবিরুদ্ধ রথে
হিজিবিজি স্বপ্নের মতো খানাখন্দ, 
রাঙামাটির পথ,
জাগুয়ার হাইওয়ে
পার হয়ে কোথাও যায় না সে।
একটি শিশুকে আমি হারাই প্রেমের দাসখতে।”
তোমার জন্যে কেন আমার শিশুটা হুহু করে উঠবে মাঘ রাত্রির কার্নিসে বা নীলনীড়ে একটি বেপথু পাখির মতো! এর উত্তর আমি জানিনা। 
এর কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
জানিনা তুমি আমার এই সমর্পন অন্য আর সব ফেসবুক সাব-হিউম্যানদের মতো করে ভেবে নিয়েছ কিনা। 
যাই হোক না কেন, আমি ডিপ্লোমেসি জানি না; জানি শুধু, 
“ন্যায় অন্যায় জানি নে, জানি নে, 
শুধু তোমারে জানি ওগো সুন্দরী। 
চাও কি প্রেমের চরম মূল্য — দেব আনি, 
দেব আনি ওগো সুন্দরী।”
যে কোন মূল্যে তোমার সম্মান পবিত্র রাখব। 
কারণ, তোমাকে আমি অপরিমেয় ভালোবাসি 
ভালোবাসি !

প্রতীকী ছবি

আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুনঃ

https://priyoaustralia.com.au/featured/2019/%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a7%81%e0%a7%9f%e0%a6%be%e0%a6%b2-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%a0%e0%a6%bf-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%8f%e0%a6%95/

Najmin Mortuza

Najmin Mortuza

দার্শনিক বোধ তাড়িত সময় সচেতন নিষ্ঠাবান কবি। চলমান বাস্তবতাকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরায় জারিত করে তিনি কাব্য রূপান্তরে অভ্যস্ত। কাব্য রচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রসমীক্ষাধর্মী মৌলিক গবেষণা ও কথাসাহিত্য সাধনায় তাঁর নিবেদন উল্লেখ করার মতো। গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্যঃ জারিগানের আসরে "বিষাদ-সিন্ধু" আত্তীকরণ ও পরিবেশন পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থের জন্য সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১২ অর্জন করেছেন।


Place your ads here!

Related Articles

একুশ আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবিয়ে তোলে : কামরুল আহসান খান

প্রতি বছর একুশ আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবিয়ে তোলে । নিজ আত্মপরিচয়ে সার্বিক স্বকীয়তাসহ আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার

ডেঙ্গু আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্যে ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করুন

ফজলুল বারী: মশা মারতে কামান দাগা নিয়ে রসাত্মক একটা উপমা আছে বাংলা সাহিত্যে। এটি এখন সত্য বাস্তব বাংলাদেশে। ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment