ভূতের খেল

ভূতের খেল

দিলরুবা শাহানা: টিনার সাথে পরিচয়ের  পরে  ডোনার  তাকে ভাল লেগে গেল। গল্পগুজব করার  একজন  বন্ধু পাওয়া গেল। নাটক-সিনেমা, বই বিষয়ে কথা বলতে বলতেই অনেক সময় কেটে যায় দু’জনের।

  সাধারন মানুষের দুঃখকষ্ট কেন এতো ইত্যাদি বিষয় ডোনাকে যেমন ভাবায় আর তেমনি ওকে আকর্ষণ করে গাছপাতা, ফুল । অন্যদিকে বইপড়া, ধারাবাহিক নাটক দেখা, ঘুরে বেড়ানো  ছাড়া টিনার আগ্রহের বিষয় হচ্ছে ভূত।

ডোনা যদি ফুলের পাপড়ি মেলার নৈঃশব্দের সঙ্গীত শুনতে পায়। তবে টিনা বলে সে অদৃশ্য ভূতেদের উপস্থিতি  ধরতে পারে। কখনো বা সে  ভূতগুলো দৃশ্যমানও  হয় তার কাছে।

বীজ থেকে মাটি ফুঁড়ে চারার মাথা তুলবার অদম্য আকুতি দেখে ডোনা আনন্দে  ভেসে যায়। আর টিনা প্লানচেটে  আত্মার বারতা পেতে আকুল হয়। টিনা বছরে এক আধবার ভূতপার্টিরও আয়োজন করে আগ্রহী বন্ধুবান্ধব নিয়ে । সেই পার্টিতে বাতি নিভিয়ে  ঘর অন্ধকার করে এক একজনের বলে যাওয়া ভূতের গল্পে শিহরিত হতে ভাল লাগে। গল্পচ্ছলে টিনা বলেছিল একবার সে তার এক বান্ধবী নাকি তার এক জ্ঞাতি বোনকে নিয়ে প্লানচেটে আত্মাকে নামানোর আয়োজনে ছিল  মগ্ন।  তখন হঠাৎ আত্মা(প্রেতাত্মা বলাই সমীচীন)  হাজির হয়ে নাঁকি স্বরে  জানতে চেয়েছিল

-তুমি কে গো পেত্নী?

এই কথা শোনে ডোনার স্বামী জিজ্ঞেস করলো

-পেত্নী কেন বললো

-ভুত প্রেতরা মানুষদের বোধহয় পেত্নী ভাবে, ওরাতো অন্ধকারের বাসিন্দা তাই আলোর প্রাণী মানুষদের ভয়ই পায়

বোধহয়

-হয়তো

-তারপর শোন আরও ভয়ংকর  কান্ড!

-কি কান্ড?

-টিনাদের চোখের সামনে প্লানচেটের ছোট্ট টেবিলটাতে অদৃশ্য কেউ একজন এমন জোড়ে এক থাবা মারলো যে সাথে সাথে টেবিল ভেঙ্গে  দুই খন্ড।

টিনা-ডোনার দু’জনের গল্পে মাঝে মাঝে অনেকের কথা আসতো। যেমন রবীঠাকুর প্লানচেট করতেন এটা বহু শোনা কাহিনী, আর সবারই মোটামুটি জানা লেখক শীর্ষেন্দু বাবু এখনও ভুতে বিশ্বাস করেন।  

টিনার ভূতআসক্তি দেখে ডোনা মজা পেতো বেশ। ভৌতিক অভিজ্ঞতা ডোনার কখনো হয়নি যদিও তবে ডোনা ভয়কাতুরে মানুষ এটা বলা যায়।

একদিন ডোনার বাড়ীতে ঘটলো রহস্যময় এক ঘটনা। ঘটনা হল এক রাতে খাওয়াদাওয়ার শেষে নিত্যদিনের অভ্যাস মত দু’ কাপ চা নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলো ডোনা। স্বামীর সাথে ভূত নিয়ে জমিয়ে গল্প শুরু হল। নানা ভূতের গল্পের মাঝে টিনার আত্মা নামানোর গল্পও উঠে আসলো। বিষয়টা নিয়ে বেশ হাসাহাসিও হলো দু’জনে মিলে। এদিকে রাতও গভীর হয়ে আসছিলো। এবার চায়ের খালি কাপ দু’টো হাতে নিয়ে ডোনা রান্না ঘরে রাখবে বলে উঠলো। শোবার ঘরের দরজা খুলেই সে চমকে গেল। দেখলো ওর স্যান্ডেল জোড়া দরজার সামনে থেকে উধাও।

-আরে! আমার স্যান্ডেল নিল কে? দেখ দেখ তোমার স্যান্ডেল এখানে ঠিকই আছে।

-তুমি বোবধহয় খালি পায়েই এসেছ

-অসম্ভব।  আমি কখখনো খালি পায়ে টাইলসএ হাঁটি না তা তুমি ভাল করেই জান

দৃঢ়কন্ঠে ডোনা প্রতিবাদ করলো। এবার স্বামীরও টনক নড়লো। সে জানে ডোনা খুব সহজে ঠান্ডাতে ভুগে কষ্ট পায় । তাই সারা বছরই  প্রায় মোজা পরে থাকে। স্যান্ডেল ছাড়া ডোনা এক মূহূর্ত থাকে না। স্যান্ডেল খুঁজতে ডোনার স্বামীও বিছানা ছেড়ে নেমে আসলো।

দু’জনে মিলে করিডোর পার হয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। কোথাও স্যান্ডেলের দেখা মিললো না। এবার ডোনা ভয় পেতে শুরু করলো। মোজা পায়ে ডোনা স্বামীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে খাওয়ার টেবিলের কাছে  ধীরে ধীরে পৌঁছালো। ওখান থেকে ড্রইং রুমে  যাওয়ার জন্য একটি দরজা আছে। সেই দরজার সামনে স্যান্ডেল জোড়া  এমনভাবে রাখা যেন এইমাত্র কেউ পা থেকে স্যান্ডল খসিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকেছে। স্ত্রীর হাত ধরে রেখেই ড্রইংরুমে ঢুকলো ডোনার স্বামী এবং লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিল তক্ষুনি। নাহ্ সবকিছু পরিপাটি, গোছগাছ আছে। কেউ এখানে  নেই। কেউ আসেনি এ ঘরে। শুধু স্যান্ডেলটাই রহস্যময় ভাবে কেউ একজন এনে দরজার সামনে রেখে গেছে।

ডোনা ভাবলো ভুতেরা বোধহয় রেগে গেছে ওদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করাতে। ভয়ে জমে গেছে ডোনার হাত পা। স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে কোনমতে শোবার ঘরে ফিরলো। স্বামীর হাত কোনমতেই ছাড়লো না সে।

সে রাতে ঘুম কখন এসেছিল জানতেই পারেনি। তবে সকালে জ্বরে বেঘোর ডোনাকে বাসায় একা রেখে অফিসে যাওয়ার ভরসা পেলনা ওর স্বামী। ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে শুরু করলে জ্বর কমলো।  ডোনা উঠলো একসময়ে। তবে ভয় ভয় ভাবটা ওকে কেমন দূর্বল করে রাখলো। চা-কফি খেয়ে একটু চাঙ্গা বোধ করার পর ও স্বামীর কাছে জানতে চাইলো

-আচ্ছা এর কি ব্যাখ্যা বলতে পার?

-কিসের ব্যাখ্যা?

-ওই যে স্যান্ডেলটা

-স্যান্ডেলটা তো  কি?

-কে সরালো দরজার কাছ থেকে স্যান্ডেলটা?

-শোন এটা ভুলে যাও তো

-কেন ভুলে যেতে বলছো? এর ব্যাখ্যা খুঁজতে অসুবিধা কোথায়?

-অসুবিধা নয়। কথা হচ্ছে পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা সবসময় পাওয়া যায় না।

-যেমন?

-একটা ঘটনা আমার এখনই মনে পড়ছে

-কি ঘটনা

-গতবছর আমার এক কলিগ একটা পেপার কাটিং দেখিয়েছিল অফিসে। খুব ইন্টারেস্টিং  খবর ছিল তাতে

-কি খবর?

-খবরটা আঁধি ভৌতিক বা রহস্যময় বলতে পার

-ভূমিকা বাদ দিয়ে খবরটা বল এবার

-নিউইয়র্কের মাউন্ট হোয়াইটফেস এ স্কি করতে গিয়ে নিখোঁজ  হয় একলোক। তাকে খোঁজে পুলিশ পুরো এলাকাতে তুলকালাম কান্ড করছিল। ছয়দিন পর ৪০০০কিলোমিটার দূরে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাকরামেন্টোতে লোকটিকে পাওয়া গেল স্কির পোষাকেই তবে বিভ্রান্ত ও হতবুদ্ধি অবস্থায়।

-সত্যিই!

-আরে এটা নিউজ হিসাবে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মিথ্যা খবর তো পত্রিকায় ছাপা হয় না।

-তাইতো

উদাস স্বরে ডোনা  বললো

-আচ্ছা তোমার কলিগের কাছ থেকে পেপারটা আনা যাবে কি?

-শোন আমার কলিগের সখ বা হবি হলো এ ধরনের খবর সংগ্রহ করা। দেখি জিজ্ঞেস করে। ওর কাছে থাকলেও থাকতে পারে।

-যদি ওই পেপারটা আনতে পার খবরটা নিজে পড়বো । তবেই বুঝবো আমার স্যান্ডেলটাও ব্যাখ্যার অতীত কোন কারনে উধাওহয়েছিল।  

পরদিন ডোনার স্বামী অফিসের কলিগের কাছ থেকে  পেপার কাটিংটা  নিয়ে আসলো। খবরটা ডোনা কয়েকবার পড়লো।  তারপর  জোড় গলায় বললো

-তবে  আমি আর টিনার বাড়ীমুখো হব না, কখখনো না।

ভূতের খেলে বন্ধুত্ব পড়লো হুমকির মুখে।


Place your ads here!

Related Articles

বিসর্জ্জনে ঘুম

তিনশো চৌষট্টিতম ঘুম বিসর্জ্জনের রাতেও তুমি এলে,মস্তিষ্কের শিরায় শিরায় জানান দিয়ে! ঠিক তিনশো চৌষট্টি দিন, ছেড়ে দিলাম তোমায় কিনবা উল্টো

স্বপ্ন-বিধায়ক (অন্তরা ১)

মা ছোটোবেলায় সবসময় একটা কথা বলতেন,” বাবা মেয়েদের সবসময় সন্মান করে চলবা, নিজের বোনের মত দেখবা, তুমি একা তোমার তো

Book – The search for extra-terrestrial life in the Universe

Obaidur Rahman’s “The search for extra-terrestrial life in the Universe”./ The Cosmic window to the Life beyond Earth. / One

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment