'সুপ্রভাত সিডনি’র আয়োজনে অনন্য এক সন্ধ্যা 'অ্যাপ্রিসিয়েশন এন্ড এ্যাওয়ার্ডস ডিনার ২০১৪'
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালি কমিউনিটিকে একটি মৌলিক মুখপাত্রের মধ্যে এনে যারা প্রতিনিয়ত সেবা দান করে যাচ্ছেন, বাংলা ভাষায় অলংকৃত যাদের স্বপ্নসিঁড়ি, বাংলা আর বাঙালিদের মান সমুন্নত রাখাই যাদের প্রয়াস, সেইসব আলোকিত মানুষগুলো গত ১৫ই মার্চ এক করেছিলেন সিডনির বিভিন্ন পেশার মানুষ। উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিবীদরা, অস্ট্রেলীয় পার্লামেন্টের মেম্বাররা, ছিলেন ধর্মীয় নেতা, মেয়র, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উকিল, গৃহিণী, সব পেশার মানুষ। ‘সুপ্রভাত সিডনি’ একটি পরিবার হয়ে সেদিন ‘ স্পাইস অফ লাইফ ‘ এর হল রুমে আপন করে নিয়েছিল সবাইকে।
‘সুপ্রভাত সিডনি’র ‘অ্যাপ্রিসিয়েশন এন্ড এ্যাওয়ার্ডস ডিনার ২০১৪’ তে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্যাডো ফাইনান্স মিনিস্টার মিঃ টনি বারক। বিশেষ অতিথিরা ছিলেন ওবার্ন সিটি কাউন্সিলয়ের মেয়র মিঃ হিশাম জুরাইকা, ক্যানটারবেরী সিটি কাউন্সিলয়ের মেয়র মিঃ ব্র্যায়ান রবসন, মুসলিম কমিউনিটির নেতা শেখ রিদওয়ান আঁকাওই, ক্যাম্পসি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট মিঃ মাইকেল ম্যাকলীন।
‘অ্যাপ্রিসিয়েশন এন্ড এ্যাওয়ার্ডস ডিনার’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বাঙালী কমিউনিটির তরে নিবেদিত আর একজন আলোকিত মানুষ জনাব ফজলে রাব্বি, যার হাত ধরে শিশু ‘সুপ্রভাত সিডনি’ সিডনির একমাত্র নিজস্ব স্বকীয়তার বাংলা পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র আল কোরআন থেকে পাঠ এবং ইংরেজী অনুবাদ করে শুনায় নাবিহা রাব্বি। এরপর উপস্থিত পরিষদের সাথে ‘সুপ্রভাত সিডনি’ পরিবারের সদস্যদের পরিচয় পর্বের পর আলোচিত হয় ‘সুপ্রভাত সিডনি’র শুরুর কথা। অক্টোবর ২০০৯, এইসময় জনাব আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামিমের মহৎ চিন্তার প্রতিফলনই আজকের ‘সুপ্রভাত সিডনি’, যা গত পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালিদের নিজেদের শিল্প সাহিত্য, স্থানীয় সংবাদ এবং বিভিন্ন তথ্যাবলী প্রাপ্তির প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রাথমিক সদস্য পরিচিতির পরবর্তীতে প্রধান অতিথির হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন ‘সুপ্রভাত সিডনি’র সম্পাদক মণ্ডলীর প্রধান জনাব আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামিম। ক্যানটারবেরী সিটি কাউন্সিলয়ের মেয়র মিঃ ব্র্যায়ান রবসন এর হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন ‘সুপ্রভাত সিডনি’ পরিবারের আর এক স্তম্ভ, বস্তুনিষ্ঠ আর সৎ সাংবাদিকতা যার অতীত এবং বর্তমান, জনাব সাজ্জাদ পরাগ। সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয় উপস্থিত সকল বিশেষ অতিথিগণদেরকেও।
এরপর, অতিথিগন তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালি কমিউনিটিতে সুপ্রভাত সিডনির প্রশংসনীয় ভুমিকা। তাঁরা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সংবাদকে প্রাধান্য দেয়া, আর এদেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষী লেখকদের লেখার বহুল উপস্থিতি পত্রিকাটিকে এদেশে তার নিজস্ব স্থান করে দিয়েছে, যা ‘সুপ্রভাত সিডনি’র এক ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি মালটিকালচারাল দেশে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের জন্যে সুপ্রভাত সিডনি একটি বড় মাধ্যম; যা এক সময় অনেক ভাষাভাষীরাই এদেশে করতে পারেনি।
আইরিশদের কথা উদাহরণ টেনে শ্যাডো ফাইনান্স মিনিস্টার সম্মানিত মিঃ টনি বারক বলেন শত বছর আগে এদেশে আইরিশরা তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারেনি, আজ সময়ের পরিবর্তন এসেছে। আজ বাংলা ভাষীদের সে সুযোগ আছে এদেশে তাদের ভাষাকে সমুন্নত রাখার। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে, বাঙালী কমিউনিটিতে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং সচেতন অস্ট্রেলিয়ান হতে বাঙালিদের মাঝে এই পত্রিকার আগ্রনী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান ‘সুপ্রভাত সিডনি’ পরিবারের সকলকে ।
সঞ্চালক জনাব ফজলে রাব্বি এরপর উপস্থিত মান্যবরদের নিয়ে আসেন অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশে; একে একে ঘোষণা করেন তাদের নাম, যারা বিগত এক বছরে বিভিন্ন ভাবে অবদান রেখেছেন বাঙালি কমিউনিটিতে, সেই সাথে অবদান রেখেছেন সুপ্রভাত সিডনিতে, -দাঁড় করিয়েছে ‘সুপ্রভাত সিডনি’কে বাংলা ভাষীদের মুখপাত্রে।
মিঃ বাসাম দিয়াব এঁর নাম ঘোষণার সাথেই শুরু হয় এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান, তিনি হয়েছেন ‘বেস্ট কেমিস্ট এন্ড ফার্মাসিস্ট অফ দ্যা ইয়ার’। ‘সিনিয়র সিটিজেন অফ দ্যা ইয়ার ফ্রম বাঙালী কমিউনিটি’ হয়েছেন মিঃ আব্দুল হালিম চৌধুরী। মিঃ হামাদ জ্রাইকা মনোনীত হোন বেস্ট ‘সলিসিটর অফ দ্যা ইয়ার’। সেবার জন্যে মিঃ আনোয়ার শাহ। বেস্ট আরকিট্যাক্ট অফ দ্যা ইয়ার হোন মিঃ উমর আহমেদ। বেস্ট কমিউনিটি সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড পান মিঃ জিল্লুর রশিদ ভুইয়া। বেস্ট কমিটমেন্ট এন্ড সাপোর্ট এ্যাওয়ার্ড পায় বি এফ এস পার্টনারস। তিন জন সম্মানিত হোন ‘বেস্ট সাপোর্ট টু বাঙালী কমিউনিটি এ্যাওয়ার্ডে’ এঁরা হলেন মিঃ সাইমুল হক, মিঃ মুহাম্মদ শাহে জামান এবং মিঃ আবুল কালাম আজাদ। এঁদের সকলের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন শ্যাডো ফাইনান্স মিনিস্টার সম্মানিত মিঃ টনি বারক।
এরপর বক্তব্য দেন মাননীয়া মিশেল রোনাল্ড এমপি, স্যাডো মিনিস্টার অফ সিটিজেনশীপ এন্ড মালটিকালচারালইজম অ্যান্ড স্যাডো অ্যাসিসট্যান্ট মিনিস্টার ফর কমিউনিকেশন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান সমাজ ব্যাবস্হায় বাঙ্গালি মেয়েদের নিজেদের আবস্থান সুদৃঢ় করতে এগিয়ে আসার আহবান জানান এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন সুপ্রভাত সিডনি পরিবারের।
নৈশ ভোজের আগে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করে বক্তব্য দেন ‘সুপ্রভাত সিডনি’র সম্পাদক মণ্ডলীর প্রধান এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামিম। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালিদের সপ্রতিভ সমর্থন, স্হানীয়দের লেখনীতে ‘সুপ্রভাত সিডনি’ হতে পারে এদেশে বাংলা বিকাশের একটা প্লাটফর্ম। জনাব শামীম পুরষ্কার প্রাপ্তরা ছাড়াও উপস্থিত অন্যান্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, বিশেষ করেঃ অজি ফরেক্সের মিঃ কামরান মির্জা, ডারুইচ বুচারের মিঃ মোহাম্মদ, আল আমিন গ্রসারিজের মিঃ গাউসুল আলম শাহাজাদা, ফ্যামিলি নিডসসের মিঃ আবদুল কাইউম খান, এমসিসিএ –এর মিঃ হাদী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মিঃ হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের মিঃ মনোয়ার মৃধা মুন্না, মিঃ আক্তারুল ইসলাম ও মিঃ ইমামুল হক, লেবার পার্টি ল্যাকেম্বার মিঃ হাসান, আইল্যান্ড ড্রীম ক্যাফের মিঃ আমান ও মিস আলিমাহ, ড্রেক্সলার এন্ড পারটনারসের মিঃ অয়াল ও মিঃ মালী এবং কমপ্লিট ফুড কন্সাল্ট্যান্টের প্রতিনিধিকে। সবশেষে, বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন আর ‘সত্যের পথে সব সময় পথ চলার’ অঙ্গীকার ব্যাক্ত করে জনাব শামীম সুপ্রভাত সিডনির ‘অ্যাপ্রিসিয়েশন এন্ড এ্যাওয়ার্ডস ডিনার ২০১৪’ এর পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন।