বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনির আয়োজিত মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
এই ২৩ শে ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করল বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনি (বি ডি এস এস) । প্রতিবছরের মতো এবারো যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উপলক্ষে রোববার ২৩ শে ফেব্রুয়ারী এ প্রতিষ্ঠানটি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। জীবন দিয়েছিল সালাম, বরকত, রফিক, শফিক,জব্বারসহ নাম না জানা অনেকেই। ওই রক্তের দামে এসেছিল বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আর তার সিঁড়ি বেয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বাঙালির সেই আত্মত্যাগের দিন এখন কেবল আর বাংলার নয়, প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দিন। রাষ্ট্রীয় সীমানা ছাড়িয়ে ২১ ফেব্র“য়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। তাই বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গর্ব আর শোকের এই দিবসটি পালন করছে বি ডি এস এস ।বিনম্র শ্রদ্ধা আর আবেগমথিত ভালোবাসায় উপস্থিত সকলে স্মরণ করল মহান ভাষা শহীদদের। তাদের আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রকডেল পাবলিক স্কুলে রোববার বিকেল থেকে শুরু হয় আমন্ত্রিতদের সমাগম।বাংলাদেশ কালচারাল স্কুল রকডেল এর ছাত্র ছাত্রীবৃন্দ,শিক্ষক শিক্ষিকা, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনির কার্যকরী সদস্যবৃন্দ এবং অভিবাবকসহ সিডনিতে বসবাসরত বিভিন্ন পেশাজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টায় উদযাপিত হয়েছে এ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রকডেল সিটি কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার শ্যেন ও ব্রায়ান । এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ম্যাজিশিয়ান এম এ জলিল। উপস্থিত অভ্যাগতদের পোশাকে সাদা আর কালো রঙের ব্যবহার ছিল বেশি। তাতে খচিত ছিল বর্ণমালা, কবিতার চরণ বা গানের কলি। আবার লাল-সবুজের বাংলাদেশকে ধারণ করতে দেখা গেছে কারও কারও পোশাকে।
দিবসটি উদযাপনের প্রথম লগ্নে উপস্থিত বাংলাদেশি শিশুরা মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এরপর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা অনুষ্ঠান,পুরস্কার বিতরণ,আকর্ষনীয় এবং মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ,ম্যাজিক শো দর্শকদের মাতিয়ে রাখে অনেকটা সময়।বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় জানা অজানা সেসব শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি উপহার পেল স্বাধীন ভূখণ্ড। বি ডি এস এস এর সভাপতি ডঃ মোঃ মনজুরুল হক এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। আলোচনা পর্বের অন্যতম বক্তা হিসেবে ছিলেন রকডেল সিটি কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার শ্যেন ও ব্রায়ান, বি ডি এস এস কার্যকরী সদস্য মিঃ নাজমুল হুদা, মেজর মিঃ শফিক সেলিম এবং ইউনিভার্সিটি লেকচারার আফসানা বিলকিস ।বক্তাদের বক্তব্যের মুখ্য আলোচ্য বিষয় ছিল শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরত্ব ,বাংলা ভাষার ঐতিহ্যবাহী ধারাবাহিকতা বজায়, নিজ দেশের ভাষা-সংস্কৃতি ধারন ও পালন।এরপর একুশের গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্যে মুখর হয়ে ওঠে রকডেল পাবলিক স্কুল।সেদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনায় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্র“য়ারি ’’ এবং “একদিন ছুটি হবে” গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ কালচারাল স্কুল রকডেল এর ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা ,সেসাথে স্কুলের সাথে জড়িত কতিপয় সদস্যবৃন্দ এবং অভিবাবকগন তাদের সাথে সূর মেলাতে ভুলেননি। অনুষ্ঠানে আরও কিছু গানের সূরের মূর্ছনায় উপস্থিতদের মাতিয়ে রাখেন মিঃ শহীদুজ্জামান আলো, মিস রাজিবা সামস এবং মিসেস সাকী । অনুষ্ঠানে কবি হায়াত মাহমুদের স্বরচিত কবিতা, ইসায়াত হায়াত , মিঃ এম এ জলিল ,আবিদ্দুজ্জামান এবং নেহাল নাফসির অনবদ্য আবৃত্তি সবাইকে মাতিয়ে রাখে অনেকক্ষণ। বি ডি এস এস সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্পিতা সোম চৌধুরী এবং কিশলয় কচিকাঁচার নাচের তালে তালে দর্শকরা হ্য়তবা সেদিন কিছুক্ষণের জন্যে ভুলেই গিয়েছিল তাদের বাসায় ফেরার তাড়া। সত্যি, কিশলয় কচিকাঁচার ক্ষুদে ক্ষুদে শিল্পীদের অত্যন্ত অভিজ্ঞ পরিবেশনার প্রশংসা না করলেই নয়। তখন রাত সাড়ে নয়টা, ম্যাজিশিয়ান এম এ জলিল এর ম্যাজিক এবং নৈশ ভোজের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।
সেদিন মঞ্চসজ্জায় শহীদ মিনারের বিশাল ক্যানভাসে দর্শকদের মনে থেমে থেমে বেজে ওঠছিল অমর একুশের গানের সেই চিরচেনা করুণ সুর। মঞ্চসজ্জার বিশেষ পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় বি ডি এস এস কার্যকরী সদস্য মিঃ শহীদুজ্জামান আলো এবং বাংলাদেশ কালচারাল স্কুল রকডেল এর অংকন শিক্ষিকা মিসেস দীপাকে। সেসাথে সঙ্গীতের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় বি ডি এস এস এর সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিঃ মাকসুমুল আহসানকে। পুরো অনুষ্ঠানটির চৌকস উপস্থাপনার দাবিদার বাংলাদেশ কালচারাল স্কুল রকডেল এর অংকন শিক্ষিকা মিসেস আজমিয়া,ছাত্রী আলিফা মনজুর এবং ছাত্রদয় সাফায়াত হায়াত ও নেহাল নাফসি।
এরই মধ্যে বিজয়ী শিশুদের বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সিডনির (বি ডি এস এস )নমুনা অঙ্কিত আকর্ষনীয় ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়। সেসাথে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ অনুস্ঠিতব্য ক্রিয়া প্রতিযোগিতার পুরস্কারও বিতরণ করা হয় বিজয়ীদের মাঝে।পুরস্কার বিতরণীর প্রধান দায়িত্তে ছিলেন মাননীয় প্রধান অতিথি রকডেল সিটি কাউন্সিলের মেয়র কাউন্সিলার শ্যেন ও ব্রায়ান ,বিশেষ অতিথি,বি ডি এস এস এর সভাপতি, সহ সভাপতি সহ বাংলাদেশ কালচারাল স্কুল রকডেল এর প্রধান অধ্যক্ষ ডঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ এবং বি ডি এস এস এর সাধারন সম্পাদক সোহেলুর রহমান মিঠূ ।
সেদিনের মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনার অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুরা হলঃ
ক গ্রুপ (বড়দের) —– প্রথমঃ নেহাল নাফসি রুপাই
দ্বিতীয়ঃ সাফায়াত হায়াত
তৃতীয়ঃ আলিফা মনজুর
খ গ্রুপ (ছোটোদের) —– প্রথমঃ আইয়ান আযহার
দ্বিতীয়ঃ সিকনুর আহমেদ
তৃতীয়ঃ নাবিল আজিজ