রংধনু অজ-বাংলা এর উদ্যোগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী সন্ধ্যা।
রংধনু অজ-বাংলা কালচারাল সোসাইটি ইনক্ এর উদ্যোগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী সন্ধ্যা।
গত ৪ঠা মে ২০১৩, শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রংধনু অজ-বাংলা কালচারাল সোসাইটি ইনক্ এর উদ্যোগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণী সন্ধ্যা। প্রতিবারের মতই অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পুরস্কৃত করা হয় প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কৃতী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের যারা শিক্ষা, সংস্কৃতি অথবা খেলাধুলায় গতবছর অসামান্য অবদান রেখেছিল। রংধনুর বর্তমান সভাপতি জনাব শামসুজ্জামান শামীমের সভাপতিত্বে উক্ত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিনিষ্টার ফর সাস্টেইনেবিলিটি, ওয়াটার, এনভায়রনমেন্ট, পপুলেশন এন্ড কমিনিটজ জনাব টনি বার্ক, বিশেষ অতিথি লাকেম্বার সংসদ সদস্য জনাব রবার্ট ফুরোলো, ক্যন্টারবেরী সিটি কাউন্সিলের মেয়র ব্রায়ান রবসন এবং ডিপুটি মেয়র জনাব কার্ল সালহ্।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনের সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক জনাব কাজী জাকারিয়া আরিফ, সহ সভাপতি জনাবা আয়শা আহমেদ এবং কৃষ্টি আক্তার। এছাড়ারও উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলের উপোরস্থ কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বাঙ্গালী কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ।
কোরআন তেলওয়াত, অষ্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন পর স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসেন সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব জনাব ওহাব মিয়া। জনাব মিয়া তার বক্তব্যে সাভারের বিল্ডিং ধ্বসের দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক ভাবে নিহতদের স্মরনে দর্শকদের এক মিনিট নীরবতা পালনের অনুরোধ করলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তা পালন করেন সবাই। তিনি রংধনুকে অন্যান্য বারের ন্যায় এইবারের আয়োজনকেও সার্থক করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এর পরপরই বাংলাদেশের সুকন্ঠি গাইকা কনার “ভিজে বরষা” গানের আবহে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের বাহবা কুড়িয়ে নেন নাশিতা ওহাব।
এরপর শুরু অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব “পুরষ্কার বিতরণী”। এই পর্বের উপস্থাপিকা কৃষ্টি আক্তারের অনুরোধে অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসেন। এপর্যায়ে তাদেরকে সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
সভাপতি জনাব শামীম, তার বক্তব্যে রংধনুর এই উদ্যোগের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রাক্তন সভাপতি জনাব আব্দুল মোতালেবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মাননীয় মন্ত্রী জনাব টনি বার্ক তার ভাষণে অষ্ট্রেলিয়ান সংস্কৃতির মূল স্রোতে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশীরা তাদের ভাষা ও তাদের সংস্কৃতির এই চর্চা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে এভাবেই জাগরুক রাখবে। সেইসাথে মন্ত্রী নব প্রজন্মকেও অনুরোধ করেন তাদের মূলস্রোত বাংলা ভাষা ও কৃষ্টির চর্চা অব্যাহত রাখবার জন্য। এরপর বিশেষ অতিথিবৃন্দরা তাদের বক্তব্যে নবধারাদের এবং আয়েজকদের ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন রংধনুর বর্তমান প্রাক্তন সভাপতি জনাব আব্দুল মোতালেব।
এরপর সঞ্চালক বিজয়ী ও বিজয়ীনিদের একে একে আমন্ত্রণ জানান মঞ্চে এসে মাননীয় অতিথিদের কাছ থেকে তাদের ক্রেষ্ট ও মেডেল গ্রহন করার জন্য এবং সাথে সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তাদের গর্বিত পিতামাতাকেও।
পুরস্কার বিতরণীর পরপরই ডিনারের ঘোষনা দেওয়া হয় এবং শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। প্রথমেই গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং সুরকার সমর দাশ এর জনপ্রিয়, “মাগো ভাবনা কেন” গানের আবহে নৃত্য পরিবেশন করে রাইসা তৃনা ও নাফিসা তৃষা। তারপর সুকন্ঠি গাইকা মুসতারিন শুভ্রা সঙ্গীত পরিবেশন করতে আসেন এবং পরিবেশন করেন শিল্পীর নিজেস্ব গান “আশাবাদ” এবং দেশাত্মবোধক সঙ্গীত “একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গায়”।
এরপর রবিঠাকুরের “এসো শ্যামল সুন্দর” রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবহে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের বাহবা কুড়িয়ে নেন অষ্ট্রেলিয়ার এই গুনি নৃত্য শিল্পী ত্রপা গোমেজ।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে, দর্শকদের অনুরোধে পুনরায় মঞ্চস্থ হয় জনাব ওহাব মিয়া রচিত ছোট হাসির নাটক “পেচাইনা মজিদ”। এখানকার মেলাকে কেন্দ্র করে কত ঘটনাই না ঘটে। মেলায় ঘটে যাওয়া এইরকম একটি মজার ঘটনার দুই নায়ক মামা আর তার ভাগ্নে। এদের মেলার অভিজ্ঞতা, এই কৌতুক নির্ভর নাটকটিতে অভিনয় করেন ওয়াহাব মিয়া, কাজী আরিফ ও আয়েশা আহমেদ।
এরপর বিভিন্ন জনপ্রিয় বাংলা গান পরিবেশন করেন সুনামধন্য গায়ক উজ্জল আর যন্ত্রে সংগত দেন মেহের। তাদের অনবদ্য পরিবেশনায় দর্শকদের বারবার উচ্ছ্বাসিত হতে দেখা যায়।
উজ্জল ও মেহেরের পরিবেশনা শেষের সাথে সাথে সঞ্চালকদ্বয় অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষনা করেন। দর্শকপূর্ণ এই জমজমাট অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, আর যখন শেষ হয় ঘড়িতে তখন রাত দশটা। দর্শক ও শুভাকাঙ্খীরা অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে যান চমৎকার একটি সন্ধ্যার অনুরণন মনে ধারণ করে।
আগামী ২২শে জুন ২০১৩ অনুষ্ঠিত হবে রংধনু অজ-বাংলা কালচারাল ইনক্ এর নিয়মিত আয়োজন, স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় অজ-বাংলা কালচারাল নাইট ২০১৩। অনুষ্ঠানটি সিডনীর গতানুগতিক অনুষ্ঠানের চাইতে একটু ভিন্নতর হবে বলে কর্মকর্তারা মনে করেন। স্থানীয় শিল্পী যারা এই অনুষ্ঠানে নাটক, নৃত্য, গানে বা কৌতুকে অংশগ্রহন করতে চান তাদের অতিসত্তর সংগঠনের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক কাজী জাকারিয়া আরিফ (0425661057) এর সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হলো।