বিজয় দিবসে অষ্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা: জাতির পিতার খুনিদের ফাঁসির পর পাপ-শাপমুক্ত হবে জাতি
ফজলুল বারী, সিডনি থেকেঃ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে অষ্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বলা হয়েছে, যেদিন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হবে, সম্পন্ন হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সেদিনই বাংলাদেশ সম্পূর্ণ পাপমুক্ত হবে। ১৩ ডিসেম্বর রবিবার বিকালে গ্রীন স্কোয়ার কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে অষ্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিষ্টার সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহমদ, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সেলিম, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা গামা আব্দুল কাদির, সহ সভাপতি গাউসুল আলম শাহজাদা, বাসভূমি সম্পাদক আকিদুল ইসলাম, বিদেশ বাংলা টেলিভিশনের পরিচালক রহমত উল্লাহ, সাংবাদিক ফজলুল বারী প্রমুখ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রত্যয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অষ্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পি এস চুন্নু।
অনুষ্টানের শুরুতেই গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় বিজয় দিবসের আলোচনা।
বক্তব্য রাখছেন প্রধান অতিথি এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এম পি; ছবি: সোনার বাংলা
আলোচনার সূত্রপাত করে সাংবাদিক ফজলুল বারী প্রশান— পাড়ের দেশের প্রথম অভিবাসী বাঙ্গালি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে গড়ে ওঠা বিপুল জনমতের উল্লেখ করে বলেন, দেশে-বিদেশে বাঙ্গালির প্রাণের আন্দোলনই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে। এর জবাবে পি এস চুন্নু বাংলাশের মুক্তি সংগ্রামে এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আন্দোলনে ব্যাপক সহায়তার জন্যে অষ্ট্রেলিয়ার সরকার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগনকে কৃতজ্ঞতা জানান।
বাসভূমি সম্পাদক আকিদুল ইসলাম বলেন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্যেই পচাত্তরের পনের আগষ্ট এবং তেসরা নবেম্বরের হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে তার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহযোগীদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশে আবার সে রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে কিনা তিনি সে প্রশ্ন রাখেন।
বিদেশ বাংলা টেলিভিশনের পরিচালক রহমত উল্লাহ প্রবাসী আভিভাবকদের অনুরোধ করে বলেন আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের বাংলা শেখাবেন। বাঙ্গালির অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের যত বেশি নিয়ে যাবেন তারা তত বাংলা, বাঙ্গালি, বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে।
অষ্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা গামা আব্দুল কাদির মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরে অষ্ট্রেলিয়ান গনমানুষের নানা সহযোগী ভূমিকার স্মরন করে বলেন, বীরাঙ্গনাদের চিকিৎসার জন্যে তখন প্রথম উদ্যোগটিও অষ্ট্রেলিয়া থেকে নেয়া হয়েছিল।
অষ্ট্রেলিয়া সফররত ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া আসনের এমপি এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ও বঙ্গবন্ধূ হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সেলিম বিশেষ অতিথি হিসাবে উপসি’ত ছিলেন। এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এম পি, বলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে পার্লামেন্টের এমপিরা তাদের কাজ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করা হবে। তিনি আশ্বস— করে বলেন, এ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হবেই হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার নানা পর্যায়ের উল্লেখ করতে গিয়ে আবেগ সামাল দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। জিয়া, এরশাদের সরকারগুলো কিভাবে এ মামলার বিচার আটকে রেখে আত্বস্বীকৃত ঘাতকদের পুর®কৃৃত করেছে তার
বিস—ারিত উল্লেখ করে বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনে জনগনের বিপুল ম্যান্ডেটের কারনে এই মামলার বিচার শেষ করাটা সহজ হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন বাংলাদেশের বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের নব্বই শতাংশই সৎ মানুষ।
আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ব্যারিষ্টার সিরাজুল হক বলেন, গোটা বাঙ্গালি জাতি এখন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকরের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের খুনিদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হবে।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে শিশুশিল্পীরা কোরাস সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর অন্যান্য শিল্পীরা দেশাত্ববোধক ও আধুনিক গান পরিবেশন করেন। শিশু শিল্পীরা হলেন মাসরাফী, আদ্রিতা রহমান,তামারা জাহান হক ও ফানজানা শামরীন। অন্যান্য যারা সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারা হলেন রিফাত ফাতেমা বিতা.আনিসুর রহমান,রোকসানা রহমান,মিজানুর রহমান, নিলুফা ইয়াসমিন,শামীমা মঞ্জুর,বাবু গোমেজ ও দেবরা গোমেজ। তবলায় ছিলেন জাহিদ হোসেন ও তায়েফ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইমদাদুল হক বকুল। এরপর অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়।
বিশেষ অতিথিকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন দপ্তর সম্পাদক
অনুষ্টানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার একাংশ
এ প্রজন্মের শিশুরা দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করছে