বঙ্গবন্ধু সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ার জেল হত্যা দিবস ২০০৮ পালন

বঙ্গবন্ধু সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ার জেল হত্যা দিবস ২০০৮ পালন

৩রা নভেম্বর ১৯৭৫, বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে এক শোক বিধুর দিন। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ এর কালো রাত্রিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংরাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয় খন্দকার মোস্তাক বাহিনী। ৩রা নভেম্বর, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান-কে হত্যার মাধ্যমে জাতিকে নেতৃত্ত্বশূন্য করে খন্দকার মোস্তাক জাতির কপালে কলংকের তীলক এঁকে দেয়।

প্রতি বছরের মতো বঙ্গবন্ধু সোসাইটি, অস্ট্রেলিয়া গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে এই দিনটি । গত ২রা নভেম্বর ২০০৮, স্থানীয় গ্র্যানফীল্ড কম্যুনিটি হল, গ্র্যানফীল্ড-এ বাংলাদেশ থেকে আগত বিশিষ্ট কলামিষ্ট, বঙ্গবন্ধু গবেষক জনাব মোনায়েম সরকার অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে সিডনির দেশপ্রেমিক ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের মনের পিপাসা মিটিয়েছেন। এছাড়াও আরেকটি সমমনা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি সবাইকে ব্যাপক উদ্দীপনা জোগায়।

চার নেতার বিদেহী আত্মার প্রতি মোনাজাতের মাধ্যমে শুরু হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশিষ্ট গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও পরিষদ নেতা জনাব কায়সার আহমেদ মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা যুদ্ধের বর্ণনা করেন। পরিষদ নেত্রী ও সহ-সভাপতি ডাঃ লাভলী রহমান বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শের ভিত্তিতে দেশে ও বিদেশে পরিশালিত বাঙ্গালী কম্যুনিটি গড়ে তুলতে জোর দেন। পরিষদের সহ-সভাপতি জনাব উসমান গণি তেজদীপ্ত কন্ঠে সাহসী ও সত্যনির্ভর ইতিহাস রচনায় বাংলাদেশের ইতিহাসবিদদের নৈতিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন। পরিষদ নেতা ও প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ নুর-উর-রহমান খোকন সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের এক প্লাটফর্মে কাজ করতে আহ্বান জানান। পরিষদ নেতা ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ডঃ রোনাল্ড পাত্র অতিথির কর্ম উদ্দীপনার প্রশংসা করে ভবিষ্যতে আরো গবেষনার উপর জোর দেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, অস্ট্রেলিয়ার সম্মানিত আহ্বায়ক ডঃ শামস রহমান তার বক্তব্যে আওয়ামী পরিবারের দায়িত্ব ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে তরুন নেতৃত্বের উপর গুরুত্ত্ব আরোপ করে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বের কোনো বিকল্প নেই এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সংগ্রামী চার নেতার ত্যাগই প্রমান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুদুরপ্রসারী নেতৃত্ত্বেই বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ অনুভব করে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অস্ট্রেলিয়ার সম্মানিত সহ-সভাপতি জনাব শেখ শামিমুল হক তার বক্তব্যে জাতীয় চার নেতার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভুতি প্রকাশ করে বলেন একমাত্র পরিবারই জানে তার পিতার মৃত্যুর কষ্ট আর জাতি আজ প্রতি মর্মে অনুভব করে জাতীয় চার নেতার আদর্শিক শক্তি ও ত্যাগের মহিমা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঃ জীবন ও রাজনীতি” বইয়ের সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সোসাইটি, অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি জনাব মোনায়েম সরকার পিনপতন নিরবতায় তার বক্তব্য রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার জীবনের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, অবৈধ নেতৃত্ত্বকে নিরাপদ করতেই খন্দকার মোস্তাক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই কাপুরোষিত হত্যাকান্ড চালায়, কেননা এই চার নেতাই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীত্ত্বের টোপ ঘৃনা ভরে ছুড়ে ফেলেছিলেন। তিনি তার স্মৃতিচারণ মূলক বক্তব্যে তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে আরো বলেন, চার নেতার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি, আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বজুড়ে ছঁড়িয়ে থাকা লক্ষ বাঙ্গালী দু’হাত তুলে দোয়া করে এই চার নেতার আত্মার প্রতি বারংবার বাঙ্গালী ফিরে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আদর্শের কাছে।

এছাড়াও পরিষদ নেতা ডঃ খায়রুল ইসলাম, অসবেন-এর পরিচালক জনাব গোলাম মোস্তফা বক্তব্য রাখেন। সংগঠন ও জেলা হত্যা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ডঃ নিজাম উদ্দীন আহমেদ তার বক্তব্যে জনাব নাজমুল ইসলাম ও জনাব সাহাদাৎ হোসেইন সহ উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথি, বিপুল সংখ্যক সুধীবৃন্দ ও সিডনির নেতৃত্ত্ববৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু সোসাইটি, অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ রফিক উদ্দীন ও তাকে সহায়তা করেন সংগ্রামী সহ-সাধারণ সম্পাদক জনাব আল-নোমান শামীম।

বিরতির সময় অতিথিদের ডিনারে আপ্যায়িত করা হয় এবং বিরতির পরই কস্তরী খানের উপস্থাপনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিমোহিত হোন সবাই। গভীর রাত পর্যন্ত হলভর্তি সুধিবৃন্দ উপভোগ করেন সিডনির প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী অমিয়া মতিন, খ্যাতনামা শিল্পী বিতা ইসলাম, রেবেকা সুলতানা, সুলতানা রাজিয়া ও মালিহা খন্দকারের সুরের মুর্ছনা। কবিতা পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা হারুন রশিদ আজাদ, কস্তরী খান।


Place your ads here!

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment