Bangla Article on Rahat Shantanu
এক অসাধারন প্রতিভা…….রাহাত শান্তনু
দেশে থাকতে ভাবতাম বিদেশে কত সুখ, কোন কষ্ট নাই, আরাম করে ঘুরে বেড়ানো , চাকরী করা আর মজার মজার জিনিষ খাওয়া, কিন্তু যখন বাস্তবতা দেখা দিল তখন বুঝলাম জীবনটা কত কঠিন !!
অনেক কষ্ট করে টিকে থাকতে হয় আমাদের এই প্রবাস জীবনে এতটুকু শান্তি পাবার আশায় ! প্রথম কষ্টই হচ্ছে দেশ ছেড়ে দূরে থাকার কষ্ট ! তবুও আমরা যারা সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে আছি তারা সময়টাকে অনেক ভাবে আনন্দময় করে তুলতে পারি, কাজগুলি নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে পারি কিন্তু যারা একা থাকে তারা ? অল্প বয়সে যারা বাবা-মায়ের কোল ছেড়ে বিভিন্ন কারনে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে তাদের দিন কেমন করে কাটছে ? কেও ব্যস্ত তার পড়াশুনা নিয়ে, কেও তার চাকড়ি আবার কেওবা ছুটছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে !! তাদের দিন কেমন করে কাটে আর তাদের ব্যস্ত সময়গুলির মাঝে যেটুকু অবসর, সেটা তারা কিভাবে কাটায় সেটা ভাবতে গিয়ে কৃতগ্গতায় মনটা ভরে উঠল অল্প বয়সি ছেলে রাহাতের ওপর !!
সাধারনতঃ এই বয়সে ছেলেরা তাদের অবসর সময় গুলিতে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়েই কাটাতে পছন্দ করে কিন্তু রাহাতের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলাম। একটু সময় ও সুযোগ পেলেই ছুটে যায় ও গোল্ড কোস্ট থেকে দেশে, যেখানে অপেক্ষায় থাকে ওর মা-বাব আর ছোট বোনটি সহ মিষ্টি পরিবারটি !! মুগ্ধ হয়েছি ওর পরিবারের প্রতি এতটা টান দেখে !! প্রবাসের এই যান্ত্রিকতা পূর্ণ জীবনে, কিভাবে সব কাজের মাঝেও সংগীতকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করে তুলছে তা সত্যি অতুলনীয় !!
রাহাত খন্দকার শান্তনু…..এক অসাধারন ট্যালেন্টের নাম !
যার বাবা খন্দকার দিদারুল ইসলাম
আর মা নার্গিস ইসলাম। রাহাত এমনই এক প্রতিভা যে কিনা চাকড়ির পাশাপাশি অতি অল্প সময়েই নিজেকে দারুন ভাবে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছে তার অসাধারন সংগীত পরিবেশনার মাঝ দিয়ে ।
ছোট্ট আদরের বোনটি,
অল্প বয়সি এই ছেলেটিকে দেখে অবাক হয়েছি, কি প্রচন্ড তার ইচ্ছাশক্তি !! সারাদিন কি যে ভিষণ ব্যস্ত সে, তার উপর কিভাবে গানের চর্চা করে আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনা।৭ বছর বয়স থেকে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরনা আর উৎসাহে গান শেখা শুরু, ওস্তাদ ইকরামউল্লাহর কাছে ক্লাশিকাল আর ওস্তাদ হুমাউন কবীরের কাছে নজরুল গীতির প্রশিক্ষন নিয়েছেন ।ওস্তাদ দিলীপ মজুমদারের কাছে আধুনিক ও পল্লিগীতি শেখার সুযোগও তার হয়েছে। এছাড়াও শিশু একাডেমীতে ২ বছর গানের কোর্স করেছে শান্তনু ছেলেবালাতেই। ২০০১ সালে কিছু বন্ধু মিলে “কারিগড়” নামে এক ব্যান্ড তৈরী করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এরা।২০০৩ সালে বাংলাদেশ ইন্টারকলেজ প্রতিযোগিতায় আধুনিক ও পল্লীগীতিতে ১ম হবার পর শান্তনুর গানের প্রতি উৎসাহ আরো অনেক বেড়ে যায়। এসব ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বহু পুরষ্কার অর্জন করে শান্তনু।
২০০৫ সালে পড়াশুনার কারনে তার অস্ট্রেলিয়াতে পদার্পন, শত ব্যস্ততার মাঝেও গানের চর্চা সে ভোলেনি। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশ কোন কিছুই তার উচ্চশিক্ষা ও সংগীতের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। ২০০৬ সালে সিডনীতে টেম্পেষ্ট্রা ও কৃষ্টি ব্যন্ডের সাথে মাঝে মাঝে বিভিন্ন যায়গায় অনুস্ঠান করে মানুষের কাছে ভীষন ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল ।
এভাবেই অনুষ্ঠান করতে করতে হটাৎ করেই শান্তনুর বহুদিনের স্বপ্নটা, “একটা এ্যালবাম বের করার”, সেটা যেন চোখের সামনে ভেসে এল, এই তো সময় ! জনগনের অনুরোধ, বাবা-মায়ের অনুপ্রেরনা আর নিজের স্বপ্ন —এই সব মিলে শান্তনু শুরু করল তার প্রথম এ্যালবাম “স্বপ্ন শুরু”র কাজ, যেখানে মোট ৯ টি গান আছে আর যেগুলির মাঝে ৪টা গানের কম্পোজ করেছেন অদিত, ২টা গানের কম্পোজ করেছেন বাপ্পা মজুমদার, ২টা গানের কম্পোজ করেছেন আরেফিন রুমি……
অনেকটা খেলার ছলেই শান্তনু নিজেও হুট করে ১ টা গান লিখে ও সুর করেছে যেটার সংগীতায়োজন করেছেন আরেফিন রুমি।
এ্যালবামের বাকী গান গুলি লিখেছেন আব্দুর রাহমান, সাহান কবন্ধ, রাবিউল ইসলাম জীবন, মীজানুর রহমান ও সোনিয়া। এ্যালবামটি জি-সিরিজ অগ্নিবীনা ব্যানার থেকে ১২ই আগস্ট সমস্ত বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। প্রার্থনা করি শান্তনু যেন ভবিষ্যতে আরো অনেক গান নিয়ে আমাদের মাঝে বার বার আসতে পারে আর একজন সার্থক প্রতিস্ঠিত শিল্পী হিসেবে নিজের স্বপ্ন পূরন করে দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করতে পার।