Amader Shishura Probashe
আমাদের শিশুরা প্রবাসে………
দেশ ছেড়ে সুদূর বিদেশে এসে আমাদের আস্তানা গড়ার প্রধান কারনই হচ্ছে ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত, ওরা যাতে সুস্থ-সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠে। কিন্তু বিদেশের এই সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী পরিবেশে দেশী কায়দায় ছেলেমেয়েকে বড় করা কি এতই সহজ ?
বাচ্চারা যখন একটু ছোট থাকে তখন তাদেরকে বুঝিয়ে বলে অনেক কিছুই করানো যায়, কিন্তু বড় হতে থাকার সাথে সাথে তাদের সামনে বর্তমান পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিজ দেশের সংস্কৃতি,ঐতিহ্য, সমাজ ব্যবস্থাকে তুলে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হলেও, ওদের পক্ষে শেখা, মেনে নেয়া ততটা সহজ নয়।
আর সেজন্য আমরা বাবা-মায়েদের ভূমিকা অনেক ! শৈশব থেকেই ওদেরকে বোঝাতে হবে ওদের জন্ম-মাতৃ পরিচয়, বিদেশে থাকলেও ওদের নিজের দেশের ইতিহাস, কালচার সব শেখাতে হবে। আর এই শিক্ষা দেয়ার ব্যপারটা নির্ভর করছে আমরা কে কতটা সময় দিতে পারি আমাদের শিশুকে তার উপর। এখানে আসার পর কম-বেশী সবাই অনেক ব্যষ্ত হয়ে পড়ি আমরা ঠিকই …. সারাদিন অফিসের কাজ শেষে ঘরে ফিরে ঘরের কাজ ছাড়াও বাজার করা, সামাজিকতা রক্ষা করা এসব…।
কিন্তু চাইলে সবই সম্ভব ! এখানে আমারা বাবা-মায়েরা সময় পেলেই আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, যেমন, আরবি শেখানো, বাংলা শেখানো, গান-বাজনা, মিউজিক ইত্যাদি যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব। ওদেরও পড়াশোনার এত চাপ থাকে যে মাঝে মাঝে মায়াই হয় ! তবুও উৎসাহের ঘাটতি নেই……:)
আসলে জিনিসগুলি ওদের এমন ভাবে শেখাতে উৎসাহ দেই যাতে ওদের ওপর জোর খাটানো না হয়, যেমন, বিভিন্ন বাংলা অনুষ্ঠানে নিয়ে যাই, বাংলা টেলিভীষন দেখাই……এতে করে ওদের নিজেদের ভেতর থেকে শেখার আগ্রহটা জাগে।
অনেক বাচ্চারাই বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে অনেক কিছু শিখছে এখানে পড়াশোনার ফাকে ফাকে কিন্তু কিছু কিছু শিশু আছে যারা আবার নিজে নিজেই টেলিভিশন, ভিডিও দেখে বাংলাদেশি নাচ-গান,কবিতা আয়ত্ত করছে ! এক্ষেত্রে বাড়ির পরিবেশ উল্লেখযোগ্য !
এখানে নাইসা’র নাম না বললেই নয়, ৬ বছরের এই মেয়েটি যেমন সুন্দর গান গায় তেমনি সুন্দর নাচে ! অথচ কোন রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সে নেয়নি এখনো ! হাসি-খুশী, মিষ্টি এই মেয়েটি তার বিভিন্ন কার্যকলাপে এই অল্প বয়সেই সবার মন কেড়ে নিয়েছে.
ডা: জেরিন আর পুতুলের বড় মেয়ে এই মিষ্টি নাইসা, স্বভাবে যেমন লক্ষী তেমনি কাজে-কর্মে। অবাক হয়ে যাই ওর সব কাজ দেখলে….:| এখানে আমাকে সামান্য হলেও বলতে হবে ওর মা’এর কথা, ওর মা পুতুল নিজেই অল্প বয়েসি এক গৃহিনী যে কিনা সারাদিন ঘরে বাইরে অকাতরে কাজ শেষে ছেলেমেয়েকে সুন্দর ভাবে শিক্ষা দিয়ে আসছেন ! ওকে দেখেছি কিভাবে সময়টাকে সুন্দর করে বের করে আনে তার ছেলেমেয়ের জন্য ! ওদিকে সারাদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে জেরিনও সাথ দেয় পুতুলকে তাদের সন্তানকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলানোর দিকে।৩ সন্তান নিয়ে ছোট্ট সুন্দর সংসার ওদের।
নাইসার মা পুতুল নিজেও গান ও নাচে পারদর্শী, আর বাবা জেরীন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকলেও গানের জন্য অনেকটা সময় সে ব্যয় করে, শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, প্রায়ই ও নিজের বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আর আমরা সেটা মন-প্রান ভরে উপভোগ করি।
এটা নাইসার পরিবেশন করা প্রথম নাচের অনুষ্ঠান, নাচ শেখানোর পুরো কৃতিত্ব ওর মা পুতুলের আর অবশ্যই নাইসার চেস্টা আর ওর বাবা-মা দুজনের উৎসাহ। বিদেশের মাটিতে আমাদের মাঝে এমন সংস্কৃতিমনা এক পরিবার পেয়ে সত্যি আমরা গর্বিত !