বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের অর্থ সংস্থানের জন্য তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করার দাবি
নিরাপদ ও গ্রীণ মাইন্ড এর প্রতীকী অবস্থানে বক্তারা
দেশের বিড়ি শ্রমিকরা মারাত্মক ক্ষতিকর পরিবেশে কাজ করছে। বিড়ি কারখানায় কাজ করার ফলে তারা ক্যান্সার, যক্ষাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া মারাত্মক রকম কম মজুরি বিড়ি শ্রমিকদের শ্রম শোষণ করছে বিড়ি কোম্পানিগুলো। এ অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য বিড়িসহ তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করতে হবে। এবং কর থেকে অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হবে সে অর্থ বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যবহার করতে হবে। এতে বিড়ি শ্রমিকরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ঘটবে। আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউডেশন এবং গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি আয়োজিত এক প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা এ উপরিল্লিখিত দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, পাটকল বন্ধ, ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা বন্ধ, হকার উচ্ছেদসহ নানা কারণেই শ্রমিক বেকার হচ্ছে। এ সকল বিষয়ে অনেকে কথা বলেন না। কিন্তু তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই অনেকে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হ্রাস হবে বলে কর বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের বিরোধীতা করে থাকে। সামান্য পরিমান রাজস্বের জন্য আমরা মানুষের মৃত্যুঘাতী পণ্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পারি না। বিড়ি-সিগারেট কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা নানা রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বল্প মজুরী এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করার ফলে তাদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান চিন্তা করাই হচ্ছে যথার্থ।
বক্তারা বলেন, বিড়ি-সিগারেট একটি অতি মুনাফার ব্যবসা, এতে মালিক পক্ষ লাভবান হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারাখানার শ্রমিক এবং এর ব্যবহারকারীগণ। শুধুমাত্র মালিকদের ব্যবসার ও লাভের কারণে, মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকিতে রেখে এ ধরনের ব্যবসা প্রসারের জন্য সহযোগিতা বা কোন ধরনের ছাড় দেওয়ার সংবিধান পরিপন্থি।
বক্তারা বলেন, তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর ৫৭,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে ৩,৮২,০০০ মানুষ পঙ্গু হচ্ছে। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে চাষী ও শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বন সম্পদ উজার হচ্ছে, পরিবেশ ধ্বংশ হচ্ছে। খাদ্য চাষের জমিতে তামাক চাষের ফলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিড়ি-সিগারেট শিল্পের কারণে কোন শ্রমিকের জীবনের পরিবর্তন হয় না। তামাক চাষ করে কোন কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয় নাই। বরং তারা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যক্ষতির প্রেক্ষিতে লাভবান হচ্ছে তামাক কোম্পানি। তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করে এ খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের পূর্ণবাসন করা প্রয়োজন।
বক্তারা সমাবেশে কমদামী সিগারেট এবং বিড়িসহ সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, তামাক হতে আদায়কৃত রাজস্ব স্বাস্থ্যসেবা ও শ্রমিকদের পূর্ণবাসনে ব্যয় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানান। নিরাপদ এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা’র সভাপতিত্বে এবং গ্রীণ মাইন্ড এর সভাপতি আমির হোসেন এর পরিচালনায় অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেণু, মিহির বিশ্বাস, নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, পিস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, বউকস এর নির্বাহী পরিচালক হাসিনুর রহমান, স্যাস্টার এর মনির হোসন প্রমুখ।