অলৌকিক অনুভব

অলৌকিক অনুভব

দিশা সব্জীর দোকানে ঢুকতেই দীর্ঘাঙ্গী দোকানী মহিলা আজ যেন ওর প্রতি বেশীই আগ্রহ দেখালো। জাতে সে লেবানীজ বা সিরিয়ান হবে। অনেকদিন ধরেই তার দোকানে কেনা কাটা করছে দিশা। শুধু হাসি বিনিময় ও ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়াও পরস্পরের ভালমন্দ খবরাখবরও জেনে নেয় দু’জনে। দোকানী বিন্নুর প্রায় ত্রিশ কি তেত্রিশ  বছর ধরে সব্জীর দোকানের হাল ধরে কোনমতে জীবন নৌকা ভাসিয়ে রেখেছে। পালে বাতাস লাগার মত হুহু বিক্রিবাট্টা কখনোই হয় নি। তবে বিন্নুর শক্ত হাতে বৈঠা চালায় বলে তার বানিজ্যের তরণী ডুবে যায় নি এখনো। দিশা প্রায় শুরু থেকেই দেখছে বোকা কিসিমের একমাত্র ছেলেকে দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে গলদঘর্ম বিন্নুর। মুদী দোকানের ক্যাশ রেজিষ্ট্রার চালানোর মত সামান্য বুদ্ধিও ওর মাথায় নেই। হাদা ছেলেকে দিয়ে শাক সব্জীর বাক্স টানাটানি ও সব্জী বাছাই ছাড়া অন্য কোন কাজই হয় না। স্বামীও বিন্নুরের তেমন পদের লোক নয়। ওই লোকের বিশাল ভুড়ি আর লাল নাকের ডগা তার মাত্রাতিরিক্ত পানাভ্যাসের সাক্ষ্য  দিচ্ছে। স্বামী পুত্রের কর্মদক্ষতায় হতাশ বিন্নুর একটাই স্বপ্ন দেখে তা হল লটারী জেতার স্বপ্ন। যদি বিন্নুর একবার লটারী জিততে পারে তবে ততক্ষণাৎ ক্লান্তিকর এই দোকানী জীবনকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠাবে। তারই সাথে সে এক অলৌকিক আশা নিয়ে বাঁচে। আশা তার এমন কারো সাক্ষাৎ লাভ যে তাকে সৌভাগ্যের লক্ষ্মী সংখ্যাটা বলে দেবে বা লটারীর টিকেটে ফু দিয়ে সে টিকিটটি জিতিয়ে দেবে।  প্রতি সপ্তাহে লটারীর টিকেট কেনার জন্য গোপনে কিছু পয়সা আলাদা করে রেখে দেয় বিন্নুর।

দিশার কর্মক্ষেত্র দোকানের কাছেই এক মেডিকেল স্পেশালিষ্ট ক্লিনিক। সে সেখানে মেডিকেল রিসেপশনিষ্ট হিসাবে কাজ করে। তাও সপ্তাহে তিনদিন কয়েক ঘন্টার কাজ মাত্র। পাশেই সব্জীর দোকান তাই দিশা কাজের শেষে কেনাকাটার প্রয়োজন না থাকলেও প্রায়ই দোকানে একবার ঘুরে যায়। বিন্নুরের সাথে পরিচয় গাঢ় হলে পর সে দিশার কাছে জানতে চেয়েছিল কয়েক ঘন্টা কাজ করে কিভাবে সে খরচ সামলায়। বিন্নুর অবাক হল যখন দিশা জানালো রোজগার তার বেশী না তবে ওই টাকাও তাকে খরচ করতে হয় না। তার স্বামীর বেতন ভাল তাতেই দিশার সব খরচ চলে যায়। এক উইকএন্ডে দিশা ও তার স্বামী বিন্নুরের দোকান থেকে অনেক রকম ফল কিনে নিয়ে গেল। দিশার জমকালো গাড়ী ও বয়স্ক তবে সুদর্শন স্বামীকে দেখে বিন্নুর দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল তখন। এসব দেখে টেখে এবার সে বললো

-তোমার টাকা তুমি সব দেশে পাঠিয়ে দাও নিশ্চয়?

উত্তর না দিয়ে সুখী পরিতৃপ্তির এক হাসি শুধু ছড়িয়েছিল দিশার মুখে।

বিন্নুরের এই কথা বা প্রশ্নটা দিশাকে ভাবালো কিছুটা। দিশা বলতে গেলে এতিম। দেশে তার কেউ নাই এক মামী ছাড়া। আর সে মামীও অভাবী নয়। কখনো মামীকে দিশা কিছু পাঠায়নি তা নয়। সুন্দর সুন্দর, দামী দামী উপহার মামীকে সুযোগ পেলেই পাঠায়। তবে টাকা পাঠানোর কথা কখনো ভাবেনি এবার সে ভাবলো কিছু টাকা মামীকে পাঠানো যায়। সে টাকা তার নিঃসঙ্গ মামী যে ভাবে খুশী খরচ করুক, কি জমিয়ে রাখুক তাতে কারও কিছু আসবে যাবে না।

বাবা-মা নাই দিশার। মা মারা গেছে বিদেশে যখন দিশার বয়স এগারো বছর বয়স। বাবা যুদ্ধে গিয়েছিল দেশ স্বাধীন করতে যখন দিশা মায়ের পেটে। মার্চ মাসেই দিশার জন্ম। বাবাকে দেখা হয়নি কোনদিন। সে যুদ্ধে মারা গেছে নাকি অন্যকোন দেশে পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছে জানা যায়নি কোনদিন। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মামার বাড়িই দেখেছে আর কোথাও নয়, আর কিছু নয়। পরবাসী মামার স্বচ্ছল সংসারে মা মেয়ের জীবন চলছিল মোটামুটী। দিশার যখন আট বছর বয়স তখন সুশ্রী, ফরসা দিশার মায়ের বিয়ে হয়ে গেল এক বিদেশবাসী দাড়িওলা লোকের সাথে। তখন চারপাশের লোকজনের ফিসফিসানী থেকে দিশা যা শুনেছিল তা থেকে বুঝেছিল যে ওই চাপদাড়িওলার বউ মারা গেছে পাঁচটি বাচ্চা রেখে। সংসার ও তার মাতৃহীন বাচ্চাদের দেখভালের জন্যই লোকটি বিয়ে করছে। লোকে বলাবলি করছিল লোকটি ওই দেশে ধনীলোক। একদিন দিশাকেও সে নিয়ে যাবে এই সর্তেই দিশার মা এই বিয়েতে রাজী হয়েছে। দিশার মামা বিদেশে ওই লোকের ব্যবসায়ই কাজ করতো। তারই উদ্যোগে বিয়েটা হয়। দিশার মা বিয়ের পর পরই ভারতের সীমান্ত ঘেষা জকিগঞ্জের মেহরাবপুর গ্রাম থেকে বিদেশ পাড়ি দিল। হয়তো মেয়ে দিশাকে একদিন কাছে পাবে সেই স্বপ্নে সে আচ্ছন্ন ছিল তখন। মায়ের বিয়ের দিনেই দিশার খুব জ্বর এসেছিল। মায়ের বিয়ে, মায়ের চলে যাওয়া সব ঘটলো দিশার জ্বরের ঘোরের মাঝে। সপ্তাহ চললো তার জ্বর। তখন দিশাকে বুকে তোলে আগলে রাখলো যে সে হচ্ছে দিশার মামী। যদিও একসময়ে যে মামী দিশা ও তার মাকে উটকো বোঝা ছাড়া কিছুই ভাবতো না এখন  সেই দিশার একমাত্র স্নেহের আশ্রয়। বিরাট বাড়িতে পরবাসী স্বামীর নিঃসঙ্গ স্ত্রী দিশার মামী । তার স্বামী মানে দিশার মামা পাঁচ সাত বছর পর পর অল্পদিনের জন্য দেশে আসতো। একমাত্র ছেলেকেও দশ এগারো বছর বয়সে স্বামী বিদেশে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে দেশে আসার টানও বোধ করে না তেমন। তবে নিয়মিত টাকা পাঠাতে সে কখনোই ভুলে না। বুদ্ধির হওয়ার পর নানা কথা কানে এসেছে দিশার। চারপাশের ফিসফিসানী থেকে শুনেছে ‘দিশার মামার আরেকটা বউ আছে ওইখানে’ আবার কখনো কানে এসেছে ‘বউ না, বউ না সে বিলাতে একটা মেম রেখেছে’ ইত্যাদি কত কুকথা। শুনে শুনে মামীর জন্য মায়া হয়েছে, দরদ জমেছে মনে।

 অভাব ছিল না তাদের। টাকা আসতো নিয়মিত। গ্রামের অন্যদের তুলনায় কাজের মানুষজন নিয়ে বিলাসী জীবন ছিল তাদের । দুঃখের ঘটনা হল দিশার মা সেই যে গেল আর ফিরতে পারলো না। তিনবছরের মাঝেই সে বিদেশে মারা গেল। এবার দিশাকে আরও গভীর আদরে আকঁড়ে  ধরলো মামী। অজ গাঁ থেকে ঝড়বৃষ্টি পেরিয়ে, শীতের কুয়াশা মেখে দূর গ্রামের স্কুল শেষ করলো দিশা। বিয়ের আয়োজন শুরু হল তারপর। অনেক বিয়ের আলাপই আসলো। অনেক কথা হল। ওই অঞ্চলের গ্রামের মানুষের ধারনা বিদেশী পাত্র মানেই ভাল পাত্র। তবে দিশার মামীর শর্ত ছিল টাকাওলা, বিদ্যান ছেলে হলেই হবে না ছেলে যেন বিয়ে করে বউকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় তবেই কথা চলবে, নয় তো নয়। নিজের জীবনের নিঃসঙ্গতার দুঃখ যেন দিশার কপালে না জুটে সেটাই তার মামী নিশ্চিত করতে চাইছিল। দিশার স্বামী জুবের পাত্র ভাল। অর্থবিত্ত, বিদ্যাশিক্ষা, সবই ভাল এবং দেখতেও সুদর্শন তবে বয়সটা বেশী। দিশার থেকে আঠারো বছরের বড়। পুরুষ মানুষের বয়স নিয়ে বেশী কথা হয় না তবে আঠারো বছরের বড় মেয়েকে কেউ বিয়ে করলে অনেক কথা হতো।  জুবের বুদ্ধিমান, অর্থবান বিয়ের পরই বউকে সাথে নিয়েই বিদেশে নিজ আস্তানায় ফিরবে। মামীর এক কথা গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে দিশার বাবা দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধে গিয়েছিল আর ফিরেনি। দিশার মামাও বিদেশের মোহে আছে স্ত্রীর জন্য ফেরার তাগিদ তার নাই। মেহরাবপুর গ্রামে অনেক মেয়েই প্রবাসী স্বামীর টাকায় আপাতঃ স্বাচ্ছ্যন্দের সুখে ডুবে আছে তবে তাদের দুঃখ গুলো অন্য রকম। ভালবাসার স্পর্শহীন, সঙ্গীহীন অতৃপ্তির হাহাকারে ভরা জীবন। দিশার এমন অতৃপ্তির জীবন হোক মামী চায়নি।

জুবের বন্ধুবান্ধব, গার্লফ্রেন্ড, পার্টনার নিয়ে মহা ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছে। সুন্দরী, কোমল স্বভাবের লক্ষ্মী মেয়ে খুঁজে বিয়ে করে সংসার পাততে একটু দেরীই হয়ে গেল তার। শ্রীময়ী, শান্ত, সহিষ্ণু দিশাকে অনেক যত্নে ও সুখে রেখেছে জুবের। তার জীবনে আসা অন্যসব নারীদের ক্ষেত্রে যে সব ভুলভ্রান্তি জুবের করেছে তা শুধরে প্রেমিক ও দায়িত্বশীল স্বামী হিসাবে দিশাকে নিয়ে এখন নিটোল সুখের সংসার তার। মেহরাবপুর গ্রাম ছেড়ে বিদেশের ঝকঝকে জীবন এসে দিশাও আনন্দিত। দিশা যেন চাওয়ার চেয়ে বেশীই পেয়েছি। স্বামীর সহযোগিতা, উৎসাহ ও আদরে দিশার এত দূর আসা। কিছুটা লেখা পড়াও করেছে।

দিশার বাচ্চাও আছে একটি। ছেলে তার এখন স্কুলে যায়। আর বাচ্চাকাচ্চার সখ তাদের নেই। সময় কাটানোর জন্যই মেডিকেল রিসেপশনিষ্টের খন্ডকালীন কাজটা  দিশা করে। বাকীসময় স্বামী সন্তানের যত্ন করে, শপিং করে, বাগান করে সময় কাটাতে ভালবাসে।

দিশার রুচিশীল বেশবাস দেখে, চৌকস কথাবার্তা শুনে কেউ বিশ্বাস করবে না যে সে মেহরাবপুর নামে এক গ্রাম থেকে এসেছে। কয়েক বছর আগেও মেহরাবপুর ছাড়া পৃথিবীর যে আর কোন রূপ  আছে তা দিশা জানতো না। আজকের দিশাকে গড়ে তোলার কৃতিত্ব স্বামী জুবেরের। শুধু বাহ্যিক রূপ নয় জুবেবের অন্তরও সুন্দর। দিশা ও জুবের তাদের চারপাশের জীবন ও বর্তমান সময়ের বাইরে কিছু ভাবে না বা চিন্তাভাবনা করার মত গভীর অনুভূতিই ওদের নেই। অতীত ঐতিহ্য জানতে আগ্রহী নয়, ভবিষ্যতে মঙ্গলময় কীর্তি রেখে যাওয়ার কথাও তারা জানে না। কোথা থেকে এসেছে, কোথায় যাবে তা নিয়ে তারা ভাবে না। নিজেদের জানার পরিধি সীমিত বলে এই বিশাল জগতের বা চারপাশের জীবনের কোন সমস্যা তাদের উদ্বেলিত বা অস্থির করে না। সুখী স্বচ্ছল, নির্বিরোধী জীবন কাটায় তারা।

আজ বিন্নুরের মুখে আশ্চর্য এই ঘটনা শুনে দিশা গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। বিন্নুর জানতে চাইলো দিশার দেশের যুদ্ধের কথা। অলৌকিক কিছু ওই যুদ্ধে ঘটেছিল কি না? দিশা শুধু এটুকুই জানে ওই যুদ্ধে তার বাবা গিয়েছিল আর ফিরে আসে নি।

বিন্নুর তাকে শুনালো এক আশ্চর্য ঘটনা। বিন্নুরের ছেলে কয়েক সপ্তাহ হয় হার্ডবোর্ডের বাক্স ভাজ করার ফ্যাক্টরীতে কাজ নিয়েছে। ওখানে অলৌকিক এক গল্প সে শুনেছে। দুপুরে খাওয়ার সময় একসাথে বসে খাওয়া ও গল্পগুজব হয়। নানা দেশের, নানা জাতের মানুষ ওইখানে কাজ করে। একজন পাকিস্তানী বয়স্ক শ্রমিক আচানক এক ঘটনাটা বলেছে। সে ছিল সৈনিক। যুদ্ধের সময়ে উনিশ বছরের তরুণ সৈনিকটিকে অন্যান্যদের সাথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তারা ছিল দখলদার।  বাংলায় তখন গেরিলারা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে নাজেহাল করছে অনবরত। শেরপুর নামে সেতু যোদ্ধারা উড়িয়ে দিলে তরুণ সৈন্যটির বাহিনীকে পাঠানো হয় বিচ্ছু মুক্তিযোদ্ধাদের ধরপাকড় করতে। ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে যোদ্ধারা কর্পূরের উবে গেল। মুক্তিযোদ্ধা ধরতে না পেরে গ্রামে আগুন লাগায় তারা। ধ্বংসের যজ্ঞ করে তারা। এছাড়াও সেতু উড়ানোর শোধ তুলতে ভয় দেখানোর জন্য মহিলা ও শিশুদের ধরে ধরে আনে। ধৃতদের মাঝে বড় বড় কালো চোখ, খাড়া নাক শান্তশিষ্ট একটি মেয়েকে দেখে তরুণ সৈন্যটির বালুচিস্তানের গ্রামে রেখে আসা নিজের ছোট বোনের মুখটি মনে পড়ে। অন্য সেনাদের চোখ বাঁচিয়ে মেয়েটিকে সে লুকিয়ে রাখে। যেভাবেই হোক মেয়েটিকে যে কোন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাবে সে।

এক সন্ধ্যায় যখন সৈন্যদের খাবার রান্না হচ্ছে তখন দু’জন সৈনিক মাটির বারান্দায় কাঠি দিয়ে কাটাকাটি খেলছে। আচমকা আকাশ থেকে যেন গোলা ছুটে আসলো। গুলি বা গোলার আঘাতে একজন সৈনিকের কাধ থেকে হাতটা খসে পড়লো।

কোথা থেকে গুলি আসলো, কে গুলি করলো কিছুই বোঝা গেল না। এই হতদরিদ্র দেশের যোদ্ধাদের কেরামতিতে ওরা পাগল পারা।

অফিসার রাগের আগুনে ঝলসে উঠলো। ধৃত নারী শিশুদের তখনই তার সামনে হাজির করতে হুকুম করলো। ওই সন্ধ্যায় কিশোরী মেয়েটিকেও খুঁজে পেল। সবাই ভয়ে বাঁশ পাতার মত কাপছে তখন। মেয়েটিকে দেখে অফিসারের রাগ  আরও তুংগে উঠলো। হুকুম হল একেই নগ্ন করা হোক প্রথম। আজকের হামলার প্রতিশোধ এর উপর দিয়ে তোলা হবে।

মেয়েটি অদ্ভুত রকমের শান্ত ও স্থির। তার চোখে ভীতির সাথে কি এক আলো ছিটকে বের হচ্ছিল। সৈন্যটি দু’হাতে মুখ ঢাকতে ঢাকতে চকিতে অসহায় মেয়েটির দিকে স্নেহের দৃষ্টি ফেললো। দেখে শান্ত মেয়েটি প্রার্থনার ভঙ্গিতে দু’হাত আকাশে পেতেছে আর দু’জন সৈন্য তার দিকে ছুটেছে।

তার কাপড় টেনে খুলছে তারা। তারপরই সৈন্য দু’জন  চিৎকার করে ছিটকে পড়লো। চোখ থেকে হাত সরাতেই দেখলো সৈন্য দু’জন মাটিতে মাথা গুঁজে আছে। আর সামনে দাড়ানো নগ্নমূর্তি  কিশোরী নয়। কি এক অলৌকিক স্পর্শে সে কিশোরে রূপান্তরিত হয়েছে। থর থর করে কাঁপছে মূর্তিটি। সে কি কিশোরের একার প্রার্থনা নাকি ভয়ে বাঁশপাতার মত কাঁপতে থাকা সব নারী শিশুদের আর্তির জবাবে মেয়েটি ছেলে হয়ে গেল।

বাঘের গলায় গর্জন করে অফিসার বললো

-তুই জানতি না ও একটা ছেলে?

-স্যার আমিতো ওকে মেয়েই দেখেছি, ইয়া মাবুদ একি কান্ড!

ঠিক সেই মূহুর্তে দূরে বোমা বিস্ফোরনের বিকট শব্দ। অফিসারসহ সব সেনারা প্রাণ বাঁচাতে দৌড় লাগালো। এদিক মেয়ে ও শিশুরা আছে কি পালাচ্ছে ফিরে দেখার সাহস হয়নি কারও।

কাহিনী বলার শেষে বিন্নুর ক্যাশ বাক্স খুলে লটারীর টিকিটটা দিশার সামনে মেলে ধরে বলে

-এতে ফুঁ দিয়ে যাও। তোমার দেশের মানুষ অলৌকিক ক্ষমতা রাখে! না হলে সৈন্যদের বোকা বানিয়ে মেয়ে ছেলে হয়ে যায়? নয় মাসে মানুষ শক্তিশালী সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতে যায়?

বিন্নুরের লটারীর টিকিটে ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে আরও এক অলৌকিক আলোতে দিশা চেতনা আলোকিত হল। যে বাবাকে দেখেনি এমন কি যার কথা সে ভাবেও নি তেমন ভাবে। আজ ভেবে গর্ব হল যে তার বাবাও ওই অলৌকিক যোদ্ধাদের একজন। যাদের কাহিনী দেশ থেকে দেশান্তরে, সময় পেরিয়ে সময়ান্তরে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে। সে রহস্যময় ভূমি তার দেশ। যে ভূমির জন্য তার মনে এক অলৌকিক অনুভূতি জাগলো।  


Place your ads here!

Related Articles

Doing Business in Bangladesh

The owner of a clothing factory in Dhaka, Bangladesh, was at New York University last week to meet with clothing

তানভীর মোকাম্মেলের “সীমান্তরেখা” – আর্থিক সহায়তার আবেদন

১৯৪৭ সালের বাংলা ভাগের উপর নির্মিত তানভীর মোকাম্মেলের “সীমান্তরেখা”: প্রামাণ্যচিত্রটি সমাপ্ত করার জন্যে আর্থিক সহায়তার আবেদন ১৯৪৭-য়ের বাংলা ভাগ কী

Social Business: Professor Yunus champions this concept to help poor

Social Business is an innovative concept because it is not a charity. It is non-loss, non-dividend business enterprise with social

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment