বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা – ক্যানবেরায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা – ক্যানবেরায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি – বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সাম্প্রতিক হামলা

“বাংলাদেশ মাইনরিটি ভয়েস ক্যানবেরা” এবং “স্ট্যান্ড ফর রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ”-এর যৌথ উদ্যোগে    

ক্যানবেরাস্থ অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট হাউস ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ। বাংলাদেশ হাই কমিশনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১ দফা দাবী হস্তান্তর।  

“বাংলাদেশ মাইনরিটি ভয়েস ক্যানবেরা” এবং “স্ট্যান্ড ফর রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ”-এর যৌথ উদ্যোগে আজ (৫ নভেম্বর ২০২১) ক্যানবেরাস্থ অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট হাউসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ।

“বাংলাদেশ মাইনরিটি ভয়েস ক্যানবেরা” এবং “স্ট্যান্ড ফর রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ”-এর যৌথ উদ্যোগে আজ (৫ নভেম্বর ২০২১) ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ। 

ক্যানবেরা। শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ২০২১।   

গত ১৪ অক্টোবর দুর্গা পূজা চলাকালীন বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ইসলামী মৌলবাদীদের বর্বরতম হামলার প্রতিবাদে আজ ক্যানবেরাস্থ অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট হাউস ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে যৌথভাবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে “বাংলাদেশ মাইনরিটি ভয়েস ক্যানবেরা” ও ২৮টি সংগঠনের সম্মিলিত জোট “স্ট্যান্ড ফর রিলিজিয়াস মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ”।  

প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সিডনি থেকে বিপুল সংখ্যক লোক এসে ক্যানবেরার এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন এবং এই বর্বর হামলার বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট হাউসের সামনে মুহুর্মুহু স্লোগানে তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংঘটিত হামলা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, এবং অনতিবিলম্বে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাঁরা এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে সহযোগিতার আহবান জানান। 

বক্তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও উপজাতিসহ সকল সংখ্যালঘু বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মতই সমান অধিকারের দাবি রাখে এবং এটা দেশের সংবিধানে স্বীকৃত। তাই এঁদের সর্ববিধ নিরাপত্তা-বিধান করা সরকারের ন্যূনতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাঁরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেন যে, এই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা আশা করেন, বর্তমান সরকার যে সংখ্যালঘু-বান্ধব, তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং   দেশ ও জাতির সর্বাত্মক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংখ্যালঘুদের অবদান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করবেন।    

সমাবেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ আরও বক্তব্য রাখেন হিন্দু কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া, ক্যানবেরা ইন্টারফেইথ ফোরাম, সনাতন সমাজ, রাধাকৃষ্ণ গৌরীয় মন্দির, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পূজা এন্ড কালচার, বাংলাদেশ পূজা এসোসিয়েশন, জগন্নাথ হল এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়ান ফোরাম ফর মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মিশন সিডনি, অস্ট্রেলিয়ান বেঙ্গলি হিন্দু এসোসিয়েশন সহ ২৮ সংগঠনের অনেক প্রতিনিধি।

এরপর বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর, নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ হাই কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করেন। তাঁরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১ দফা দাবি-সম্বলিত চিঠিটি তাঁকে পড়ে শোনান এবং তাঁর কাছে হস্তান্তর করেন।

মান্যবর হাই কমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তাগণ প্রতিনিধিদের সাথে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেন। তিনি সংক্ষুব্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এই বিক্ষোভকে যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত বিবেচনা করেন, এবং এই সমস্যার দেশীয় ও উপমহাদেশীয় প্রেক্ষিতে সমাধানের উপায় নিয়ে প্রতিনিধিদের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে সরকার, বিশেষতঃ মাননীয় আইন মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, এই ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।

প্রতিনিধিরা তাদের ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তি, বিশেষতঃ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, সংখ্যালঘুদের সরকারের প্রতি আস্থাহীন করতে বাধ্য করছে। অনতিবিলম্বে এসব হামলার যথাযথ বিচার না হলে সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব পালনে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণও, অত্যন্ত সংগত কারণে সম্ভবপর হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি যথাসময়ে পৌঁছে দেবার কথা নিশ্চিত করেন হাই কমিশনার। চিঠিতে নিম্নলিখিত ১১ দফা দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১.  এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের আশু সহায়তা দিতে হবে এবং এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করতে হবে।

২. এই সহিংস হামলার দুষ্কৃতিকারী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে ঘটনার পূর্ণ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন তদন্ত করতে হবে এবং এই তদন্তের ফলাফল জনসমক্ষে উন্মোচিত করতে হবে।

৩. এই হামলাকারীদের সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৪. হামলায় সকল ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর, উপাসনালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ করতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৫. বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য একটি ভিন্ন মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে, যা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ আইন প্রণয়ন করবে।

৬. এ যাবতীয় হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ করার উদ্দেশ্যে একটা বিশেষ আইনপ্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে, যেখানে কমপক্ষে ৪০% সদস্য হিন্দু সম্প্রদায় থেকে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং বাকিদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি উদার হতে হবে।

৭. পুলিশ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য হিন্দুদের সুরক্ষা দেবার কাজে নিয়োজিত ছিল, কিন্তু সে কাজে অবহেলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. দেশের পাঠ্যক্রম সংস্কার করতে হবে, বিশেষতঃ মৌলবাদী করে তোলে এমন বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে আমাদের সমাজের মূল্যবোধ এবং প্রকৃত সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৯. ধর্মীয় সমাবেশে ঘৃণা ও উস্কানীমূলক বক্তব্য বন্ধ করে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে এমন বক্তব্য দেয়ার নির্দেশ দিতে হবে।

১০. সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মুখে বাঁচার জন্যে ডিজিটাল মিডিয়ায় আকুতি জানানোর কারণে যাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে।

১১. এই হামলা সম্পর্কে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতিতে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বাস্তব অবস্থা প্রতিফলিত হয়নি। এই অসত্য বিবৃতি হিন্দুদের প্রতি অপমান, এবং প্রকারান্তরে ঐসব দুর্বৃত্তদের প্রতি সমর্থনের প্রকাশ ঘটেছে। তাই অবিলম্বে এই বিবৃতি প্রত্যাহার করে সঠিক তথ্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।   

যোগাযোগ

বিধান চক্রবর্তী, ফোনঃ + ৬১ ০৪০৩ ৭১১ ৭৭৬, ইমেইলঃ bd.minority.voice.canberra@gmail.com

অমিত সাহা, ফোনঃ + ৬১ ০৪১৬ ৫৪৬ ২০৫, ইমেইলঃ bimurta@hotmail.com

অমল দত্ত, ফোনঃ + ৬১ ০৪৩২ ৫৫২ ৬৩২, ইমেইলঃ amal_pdb@yahoo.com


Place your ads here!

Related Articles

নির্বাচনে দন্ডিত খালেদা নেই, তারেক নেই – এখন কী আদালতে দাঁড়াবেন ড কামাল?

ফজলুল বারী: দেশের নির্বাচনী রাজনীতির চেহারা ক্ষনে ক্ষনে পাল্টাচ্ছে। জোটরক্ষা নিয়ে প্রধান দু’দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির পেরেশানি নিয়ে লিখবো ভেবেছিলাম। এরমাঝে

সুখি বাংলাদেশের গল্প

আমাদের আমলে চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য বইয়ে একটা গল্প ছিলঃ “সুখি মানুষ”। তার সারমর্মটা এইরকম ছিল, এক রাজার

Justice of the Peace – origin and role

A Justice of the Peace (JP) is essentially an officer appointed by the government (federal or state) to carry out

No comments

Write a comment
No Comments Yet! You can be first to comment this post!

Write a Comment