শাগানে, আমার শাগানে
সের্গেই ইয়েসেনিন্ (১৮৯৫-১৯২৫)
মূল রুশ থেকে অনুবাদ দিলরুবা শাহানা
(অনুবাদকের ভাষ্য: রুশ কবি সের্গেই ইয়েসেনিন রাশিয়ার রিয়াজন প্রদেশের এক সাধারন কৃষক পরিবার থেকে এসেছেন। নিয়মানুবর্তী ধরাবাঁধা জীবন বোধহয় কবির জন্য নয়। ইয়েসেনিনও ছিলেন না ব্যতিক্রম। সৃজন বেদনা যাদের চিরকালীন সঙ্গী ইয়েসেনিনও ছিলেন তাদেরই একজন। অকারণ বেদনার ভার বহন সৃষ্টিশীল কল্পনা বিলাসী মানুষের নিত্যদিনের যাপিত জীবনের অংশ। তাইতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও ব্যক্ত অনুভূতি ছিল ‘কেন অকারণ বেদনা ঘনায়’। এই বেদনাকে সঙ্গী করেই পথচলা ছিল কবির। চার বার বিয়ে করছিলেন কবি ইয়েসেনিন, স্থিত হতে পারেন নি কোন সম্পর্কে।সর্বশেষ স্ত্রী ছিলেন বিশ্বখ্যাত রুশ সাহিত্যিক তলস্তয়ের পৌত্রী। এক সময়ে সের্গেই ইয়েসেনিন বিষন্নতা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । এরই মাঝে যখন বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতেন কখনো বা তখনি কাব্যলক্ষ্মীর উদার আদরে স্নাত হতেন কবি। হাতের শিরা কেটে রক্ত দিয়ে দেয়ালে শেষ কবিতা ‘দাস ভিদানিয়া দ্রুগ’(বিদায় বন্ধু) লিখলেন। কথিত যে তারপর গলায় দড়ি দিয়ে মাত্র ৩০বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান তরুণ কবি। যদিও কবির মৃত্যু নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে, নানা ভাষ্য রয়েছে। কোন কোন ভাষ্যমতে কবির মৃত্যু স্বেচ্ছায় ঘটেনি হত্যা করা হয়েছিল তাকে।
রুশ ভাষার অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি ছিলেন ইয়েসেনিন। কোন কোন কবিতার যাদু এমনই যে তা মানুষকে আবিষ্ট করে রাখে যুগ যুগ ধরে। তারই উজ্জল উদাহরণ সের্গেই ইয়েসেনিনের কবিতা ‘শাগানে ত্বি মাইয়া শাগানে’। আজও রুশভাষী ও পূর্ব ইউরোপের যারা রুশভাষা জানেন তাদের অনেকের মুখে মুখে ঘুরে ইয়েসেনিনের কবিতা ‘শাগানে, ত্বি মাইয়া শাগানে’। সহজ সরল বাংলায় এর মানে হচ্ছে ‘শাগানে, তুই আমার শাগানে’। বাংলা ভাষার মত রুশ ভাষায়ও ‘ত্বি’ ও ‘ভি’ শব্দদুটো ‘তুই’ ও ‘আপনি’ বলতেই বোঝায়।বলা ভাল যে রুশ বর্ণ ‘ভ্যে’ এর উচ্চারণ বাংলা বর্ণ ‘ভ’ থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন।)
শাগানে, আমার শাগানে
উত্তুরে হিমেল ভূমি থেকে আমিতো, তাই
চাঁদিমার রাতে শস্যচারাদের কাঁপনে
তেপান্তরের কাহিনী শোনাতে তৈরী।
শাগানে, তুমি আমার শাগানে।
উত্তুরে হিম শিহরিত ভূমি থেকে আমি
চাঁদ যেখানে শতগুণ হয়ে দেয় ধরা
শিরাজনগরের সৌন্দর্য কোন ছাড়!
রিয়াজন গাঁয়ের রূপ তার চে’ অপার
আমি সেই উত্তুরে হিম ছোঁয়া মাটির বলেই ।
প্রান্তরের গল্প তোমায় শোনাতে চাই।
পাকা ফসলের রং ছিনে নিয়ে রাঙানো আমার চুল
তাতে করুক খেলা, গাঁথুক বিনুনী তোমার চম্পক আঙ্গুল
ব্যথা মোটেও পাবনা এতটুকু তাতে
তৈরী আমি গল্প তোমায় শোনাতে।
চাঁদিমার রাতে শস্যচারার কাঁপনে
রেণু রেণু হয়ে মিশেছ যে দেহমনে,
হাস, হাস তো পরাণপ্রিয়া
যেওনা. যেওনা তুমি ফিরিয়া
জাগবে না মোর স্মৃতি মনে
চাঁদের আলোর শিহরণে।
শাগানে, আমার শাগানে!
উত্তরে যে মেয়ে সেও
অবিকল তোমারই মত, তেমনি যে নিবেদিত
হয়তো এখনো আমাকেই মনে মনে…
শাগানে, আমার শাগানে।
Related Articles
প্রবাস জীবনঃ ক্যানবেরায় বাঙালী সংস্কৃতিকে সচল রাখতে দরকার নতুন প্রজন্মের অংশগ্রন
গত ৩০ এপ্রিল ‘প্রিয় অষ্ট্রেলিয়া’ আমার একটি লেখা ছাপে। ‘প্রবাস জীবনঃ সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক’ শিরোনামের সেই লেখাটিতে পাঠকদের
নানা রূপে সিডনি অলিম্পিক পার্ক বৈশাখী মেলা
সিডনিতে এখন শরত, তবুও অনুষ্ঠিত হলো বাংলা নব বর্ষের প্রানের উত্সব বৈশাখী মেলা, গত ২৬ এপ্রিল অলিম্পিক পার্ক এর অ্যাথলেটিক